মিজানুর রহমান মিজান, রংপুর অফিস : দীর্ঘ ৯ বছর ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে রংপুর আবহাওয়া অফিসের রাডার ও ভূকম্পন পর্যবেক্ষণাগারের একমাত্র রাডারটি।

ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার পূর্বাভাস না পাওয়ায় প্রায় ৪০০ কিলোমিটার এলাকার মানুষজন আগাম প্রস্তুতি নিতে ব্যর্থ হচ্ছেন।

আগাম বার্তা পেতে ঢাকাসহ অন্যান্য আবহাওয়া অফিসের তথ্যের ওপর নির্ভর করতে হয়। এতে সময়ক্ষেপণ হয় বেশি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রংপুর ও এর আশপাশের কৃষিকাজ। এতে কৃষকের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

রংপুরে ২০১৫ সালের ৩ অক্টোবর জাপানি নাগরিক হত্যার পর চাহিদা মোতাবেক নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করে যখন কাজ শুরুর প্রস্তুতি চলছিল, ঠিক তখন করোনার হানায় আবার পিছিয়ে যায় রাডার স্থাপনের কাজ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রংপুরের আলমনগর এলাকায় ১৯৭৭-৭৮ অর্থবছরে ২ দশমিক ৫০ একর জায়গা অধিগ্রহণ করে নিজস্ব ভবনে স্থাপন করা হয় বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের অধীন আবহাওয়া রাডার ও ভূকম্পন পর্যবেক্ষণাগার।

প্রতিদিনের আবহাওয়া, ভূমিকম্প পরিমাপসহ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয়ার জন্য ঢাকা প্রধান অফিসকে সহায়তার উদ্দেশ্যে এর যাত্রা শুরু হয়।

১৯৯৯ সালে জাপান সরকারের অর্থায়নে এবং তাদের কারিগরি সহায়তায় প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে রাডারটি স্থাপন করা হয়।
১০ বছর মেয়াদের রাডারটি ২০০৯ সাল পর্যন্ত চালু থাকার পর ত্রুটি দেখা দেয়। স্থানীয় প্রকৌশলীরা ২০১২ সাল পর্যন্ত জরুরি ভিত্তিতে রাডারটি চালু রাখতে সক্ষম হলেও পরবর্তীতে পুরাতন রাডারের যন্ত্রাংশ তৈরি না হওয়ায় এটি পুরোপুরি বিকল হয়ে যায়।

স্থানীয় আবহাওয়া অফিসের একটি সূত্র জানায়, বর্তমান সরকার একনেকে রংপুরের জন্য একটি আধুনিক রাডার স্থাপনের বিল পাস করেছে। জাপান সরকারের প্রায় ২০০ কোটি টাকার সমপরিমাণ অনুদানে রাডার স্থাপন করা হবে। কিন্তু ২০১৫ সালের ৩ অক্টোবর রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার আলুটারি গ্রামে জাপানি নাগরিক হোশি কোনিও দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হওয়ার পর কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়।

রংপুর আবহাওয়া রাডার ও ভূকম্পন পর্যবেক্ষণাগারের সাবেক ইনচার্জ প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘হোশি কোনিও নিহতের পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জাপানি প্রকৌশলীরা বেশ কিছু নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রংপুর আবহাওয়া অফিসে পুলিশ ব্যারাক এবং তাদের থাকার জন্য ডর্মেটরি নির্মাণ এবং সীমানা প্রাচীরের চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার কাজ করা হয়।

এমনকি সেই সময় যে জাপানি প্রকৌশলীরা এখানে কাজ করবেন তাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা একটি টিম সাইট পরিদর্শন করে গেছেন।

এ সময় তারা নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থাগুলো স্বচক্ষে দেখেছেন এবং সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু পরে করোনার কারণে আবার বাধাগ্রস্ত হয় নতুন রাডার স্থাপনের কাজ।

রংপুর আবহাওয়া রাডার ও ভূকম্পন পর্যবেক্ষণাগারের বর্তমান ইনচার্জ প্রকৌশলী মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘প্রথমে জাপানি নাগরিক হত্যা এবং পরে করোনার কারণে নতুন রাডার স্থাপনের কাজ বিলম্বিত হয়েছে।’

বর্তমান অগ্রগতি বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সাত মাস আগে রাডার স্থাপনের দরপত্র হয়ে গেছে। বর্তমানে গাজীপুরে রাডার স্থাপনের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। সেখানে কাজ শেষ হলে আশা করা যাচ্ছে আগামী ৮ থেকে ৯ মাসের মধ্যে রংপুরে রাডার স্থাপনের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।

মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘আগের রাডারটি ছিল ম্যানুয়াল। আগামীতে যে রাডার স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সেটি হচ্ছে ডপলার রাডার (আধুনিক)। এটি চালু হলে এই কেন্দ্র থেকে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার স্থানের আকাশের ঘন কুয়াশা, সাধারণ মেঘ, মাঝারি মেঘ, ঘন মেঘ, বর্জ্য মেঘ এবং ঘূর্ণিযুক্ত মেঘের তথ্য পর্যবেক্ষণ দ্রুততার সঙ্গে সম্ভব হবে। ফলে যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে আগাম ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হবে। এতে জানমালের ক্ষতি কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।