আকতার হোসেন, চট্টগ্রাম : মার্কেট ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে পড়েছেন আসাদ ও মাহাবুব। তারা দুইজন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। কোথাও মিলছে না দুই বন্ধুর পছন্দের একই রকম দু’টি পাঞ্জাবি। দুইদিন ঘোরাঘুরি শেষে অবশেষে তাদের পছন্দের পাঞ্জাবি মিললো চট্টগ্রাম নগরের ষ্টেশন রোড়ের প্যারামাউন্ট সিটির রাজস্থানে।

একই অবস্থা আল আরাফা ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার জয়নাল আবেদীনের। তিনিও রীতিমতো এক মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বের জালে জড়িয়ে পড়েছিলেন। সুতি, সিল্ক, তসর, গর্জিয়াস নাকি অন্যরকম পাঞ্জাবি নেবেন তা নিয়ে। এক সময় সব দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে তিনি নগরের টেরিবাজারের আরএফএইচ চট্টল শপিং মার্কেটের রাজস্থান ব্রান্ড শপ থেকে বেছে নেয় পছন্দের পাঞ্জাবি।

তারা জানান, শপিংমল ও বিপনী বিতানগুলোর চেয়ে রাজস্থানে তরুণদের পাঞ্জাবির কালেকশন বেশি। সে সব পাঞ্জাবিতে বর্ণীল কারুকাজ, বিচিত্র ডিজাইন। যেন সব সৌন্দর্য এসে মিশেছে এসব পাঞ্জাবির কারুকার্য খচিত নকশায়।

ঈদে পুরুষের প্রথম পছন্দ পাঞ্জাবি। আরাম এবং কমফোর্টের বিবেচনায় পোশাকটি অনেকটাই এগিয়ে। সময়ের বিবর্তনে অন্যসব পোশাকের পাশাপাশি পাঞ্জাবি কাটছাঁটে এসেছে বেশ পরিবর্তন। চট্টগ্রামের ব্রান্ডশপ ‘রাজস্থান’-এ এরই মধ্যে চলে এসেছে ইন্ডিয়ান এর অধিক নিত্য নতুন ৫০০ রকম ডিজাউনের সব কালেকশন। সেই সঙ্গে জমে উঠেছে পাঞ্জাবির কেনাবেচা।

রাজস্থানের কর্ণধার মোহাম্মদ আবু কাউছার জানান, খুব অল্প সময়ে রাজস্থান চট্টগ্রামসহ সারাদেশে একটি ব্রান্ডে পরিণত হয়েছে। এবার ঈদের জন্য ইন্ডিয়া থেকে ৫০০ রকমের অধিক ডিজাইনের পাঞ্জাবি তাদের কালেকশনে রয়েছে।

চট্টগ্রাম নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারের প্যারামাউন্ট সিটি, টেরীবাজার পরশমনির উপরে, মিমি সুপার মার্কেটের পাশে কেবিএইচ প্লাজা, উত্তর চট্টগ্রামের হাটহাজারি, ফটিকছড়ির নাজিরহাটে, দক্ষিণ চট্টগ্রামের আমিরাবাদ, লোহাগাড়া ও কক্সবাজারের চকরিয়ায় রাজস্থানের আউটলেট সেন্টার রয়েছে। সেখানেও পাওয়া যাচ্ছে ভারতীয় রুচিশীল পাঞ্জাবি।

তিনি আরো বলেন, এবার ঈদে বাবা-ছেলে, ভাইয়েরা কিংবা বন্ধুরা একই রং ও নকশার পাঞ্জাবি খুঁজছেন বেশি। এই চাহিদার দিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা চোখজুড়ানো নানা রং ও ডিজাইনের একই ধরণের বিভিন্ন সাইজের পাঞ্জাবি এনেছি।

রাজস্থানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রায়হানাতুল কুবরা শিফা বলেন, গরম ও বর্ষার কথা চিন্তা করেই এবারের পাঞ্জাবিতে কাপড় ব্যবহার করা হয়েছে। এসব পাঞ্জাবিতে থাকছে নতুনত্বের ছোঁয়া। এবারের ঈদে উজ্জ্বল রঙের পাঞ্জাবির প্রাধান্য বেশি। লাল, খয়েরি, কমলা, নীল, কালো, সাদা, ছাই, হালকা সবুজ বেগুনি ইত্যাদি রঙের পাঞ্জাবিরও কদর রয়েছে। তিনি জানান, বিক্রি খুবই ভালো। পাঞ্জাবির দাম নির্ভর করছে এর কারুকাজের ওপর। তবে ব্র্যান্ডভেদে পাঞ্জাবি মিলবে ১২শ’ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকায়।

চট্টগ্রাম নগরের স্টেশন রোড়স্থ প্যারামাউন্ট সিটিতে রাজস্থানে গিয়ে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। সুবিশাল রাজস্থানের শো-রুমে নানা ধরনের আধুনিক রুচিশীল পোশাক চোখে পড়ে। রাজস্থানের ম্যানেজার জানান, সময়ের সঙ্গে মিল রেখে আমরা বৈচিত্র্যপূর্ণ পাঞ্জাবী রাখি। যে কারণে আমাদের পোশাকের গুণগত মান ভালো হয়। দামও সহনীয়।

ঈদ উপলক্ষে পাঞ্জাবিতে যুক্ত হচ্ছে নানা ধরনের ইসলামিক মোটিফের নকশা।

রাজস্থানের আমিরাবাদ ও চকরিয়ার আউটলেটে গিয়ে দেখা যায়, পাঞ্জাবির গায়ে কালচে সবুজাভ রঙের এই পাতার নকশা আঁকা। হাতার শেষভাগে ও বাটন প্লেটে আলাদা কাপড়ে প্যাচ ওয়ার্ক বাড়িয়েছে সৌন্দর্য। তরুণদের উপযোগী এই পাঞ্জাবি বানানো হয়েছে স্লিমফিট ধাঁচে।

কিছু পাঞ্জাবিতে কাঠের বোতামের সঙ্গে বাটনপ্লেট আর বুক পকেটে ভিন্ন কাপড়ের প্যাচ ওয়ার্ক রয়েছে। পুরোপুরি গিজা সুতি কাপড় ব্যবহার করা হয়েছে এসব পাঞ্জাবিতে। জ্যাকার্ড তাঁতে বোনা পাতলা কাপড়ের পাঞ্জাবিও দেখা গেছে আউটলেটে। যা গরমে আরাম দেবে। হালকা রং, সেগুলো ডিজাইন হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে ইসলামিক আর্ট। লিনেন কাপড়ে স্কিন প্রিন্ট ও প্যাচ ওয়ার্ক করা সেমি লং কাটের আলপনার নকশা করা পাঞ্জাবির সমহার রয়েছে রাজস্থানে। অধিকাংশ পাঞ্জাবির স্ক্রিন প্রিন্টে ইসলামিক আর্টের অনুপ্রেরণায় ফুটে উঠেছে নকশা। বোতামে কাঠের ব্যবহার পাঞ্জাবিতে এনেছে ভিন্নতা।

এক ছাদের নিচে সব বাজার : রাজস্থান ব্রান্ড এ রিয়াজউদ্দিন বাজার প্যারামাউন্ট সিটিতে এক ছাদের নিচে বেবী আইটেম, জেন্টস এন্ড লেডিস আইটেমেরও বিশাল শো রুম নজর কাটছে ক্রেতাদের। পাশাপাশি পোষাকের সাথে মিলিয়ে অত্যাধুনিক ডিজাইনের সু, সেন্ডেল ও জুতা নিয়ে নিচিন্তে ঘরে ফিরছে ক্রেতাসাধারণ।

রাজস্থানের পরিচালক মাসুদ পারভেজ রুবেল জানান, দেশের প্রকৃতিক পরিবেশের সাথে মিলিয়ে বাচ্চাদের কাপড় গুলো নিয়ে আসি যেন সহজে ক্রেতাদের পছন্দ হয়।

প্রবর্তক আউটলেট : রাজস্থানের প্রবর্তক আউটলেটে গিয়ে দেখা যায়, কটন, এন্ডি কটন, এন্ডি সিল্ক,মসলিন কাপড় ব্যবহার হয়েছে রাজস্থানের সংগ্রহে থাকা ঈদী পাঞ্জাবিগুলোতে। নতুন ডিজানের পাঞ্জাবিতে এবারের ঈদ উৎসবের আকাশ যেন আরও রঙিন হয়ে উঠবে।