নন্দীগ্রাম থেকে মো: ফজলুর রহমান : আজ ১৩ ডিসেম্বর নন্দীগ্রাম থানা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে পালন করে। এ দিনেই নন্দীগ্রাম হানাদার মুক্ত হয়। ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা পাকহানাদার ও রাজাকারদের হটিয়ে নন্দীগ্রাম হানাদার মুক্ত করে স্বাধীনতার বিজয় পতাকা উড্ডয়ন করে।

বীর মুক্তিযোদ্ধারা জানিয়েছেন, ভারতে ইউপি ডেরাডং সাব ডিভিশনে ভান্ডুয়া সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ৭ নম্বর সেক্টরের প্রশিক্ষণ গ্রহন করে বাংলাদেশের হিলি সীমান্ত ও আক্কেলপুর হয়ে দেশে প্রবেশ করেন। এই সময় তারা প্রথমে সেখান থেকেই পাক সেনা ও রাজাকারদের সাথে যুদ্ধ শুরু করেন। এরপর তারা নন্দীগ্রাম আশার পথে কাহালু থানার কড়ই নামুজা গ্রামে পাক হানাদারদের সাথে যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে ২৮ জন পাক সেনা নিহত হয়। অতঃপর নন্দীগ্রাম থানার দায়িত্ব নিয়ে তিনি ডেপুটি কমান্ডার বদিউজ্জামান মন্টু, টিম কমান্ডার আজিজুল হক, সিরাজুল ইসলাম ও জাহাঙ্গীরসহ আরো কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে সঙ্গে নিয়ে ৭১ এর ৯ ডিসেম্বর নন্দীগ্রামে প্রবেশ করে।

৩ দফায় নন্দীগ্রামে যুদ্ধের কাজ শুরু হয়। প্রথমে ১১ ডিসেম্বর নন্দীগ্রাম পৌর এলাকার মন্ডল পুকুর সিএন্ডবি’র ব্রীজের পার্শ্বে থেকে পাকসেনা ও তাদের দোসরদের উপর আক্রমন করে। ওইদিন রণবাঘা বড় ব্রীজের নিকট স্থানীয় রাজাকারদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। অপরদিকে বেলঘরিয়ায় পাকসেনাদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। সেই যুদ্ধে পূর্ণখান নামে একজন পাকসেনা আতœসমর্পণ করে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কিছু মুক্তিযোদ্ধাকে পাকসেনা ও তাদের দোসররা ধরে নিয়ে গিয়ে তাদের গুলি করে হত্যা করে। তাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে মানুষের হৃদয়ে। তারা হলো চাকলমা গ্রামের আকরাম হোসেন, বাদলাশন গ্রামের আব্দুল ওহেদ, রুস্তমপুর গ্রামের মহিউদ্দিন (মরুমন্ডল), ভাটরা গ্রামের আব্দুর সোবাহান, নন্দীগ্রামের মোফাজ্জল হোসেন, হাটকড়ই গ্রামের ছমিরউদ্দিন ও তার দুই পুত্র আব্দুর রাজ্জাক ও আব্দুর রশিদ। যুদ্ধকালীন সময়ে কোন মুক্তিযোদ্ধা আহত হননি। তবে বহু মা-বোনের ইজ্জত দিতে হয়েছে। ৭১ এর ১২ই ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা থানা আক্রমণ চালিয়ে প্রায় দু’শ পাকসেনা রাজাকারদের সাথে লড়াই করে। সেই যুদ্ধে ৮০জন রাজাকারদের আটকসহ বিপুল পরিমান অস্ত্র উদ্ধার করে। নন্দীগ্রামে সব চেয়ে স্মরনীয় ঘটনা ঘটে ডাকনীতলায় সেখানে পাকসেনা রাজাকারদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে জীবন মরণ যুদ্ধের ঘটনা ঘটে।

সেই যুদ্ধের সময় একইঞ্চি পাস দিয়ে গুলি চলে গেলেও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে কেউ হতাহত হয়নি। ৭১ এর ১৩ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা পাকহানাদার ও রাজাকারদের হটিয়ে নন্দীগ্রাম হানাদার মুক্ত করে স্বাধীনতার বিজয় পতাকা উড্ডয়ন করা হয়। তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মরহুম আবু বক্কর সিদ্দিকসহ বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধারা গার্ড অব অনার প্রদর্শন করেন। তৎকালীন এমপি আকবর আলী খান চৌধুরী গার্ড অব অনার প্রদর্শন ও অভিভাদন গ্রহণ করেন। ৭১ এর স্বাধীনতাযুদ্ধে বাংলাদেশের মানচিত্র সমুন্নত রাখার জন্য যারা মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য সহযোগীতা করেছেন তারাও অমর হয়ে থাকবেন এই কামনা করি। আজ ১৩ ডিসেম্বর নন্দীগ্রাম থানা হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষে থানা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ প্রতি বছরের ন্যায় এবারও দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করছে।