হুমায়ুন কবির জুশান, উখিয়া (কক্সবাজার) : বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে রোহিঙ্গা সংকট পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আরাকান প্রজেক্টের পরিচালক ক্রিস লিউয়া বলেন, ‘ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশের ইদামান দ্বীপে ৮১ রোহিঙ্গা পৌঁছেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। এখন পর্যন্ত তারা পুরোপুরি নিরাপদে আছে। আশা করি, তাদের আবার সাগরে ঠেলে দেয়া হবে না।’
প্রায় চার মাস সাগরে আটকে থাকার পর ইন্দোনেশিয়ার উপকূলে পৌঁছেছে ৮১ রোহিঙ্গাকে বহনকারী একটি নৌকা।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, মালয়েশিয়ায় যাওয়ার আশায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কক্সবাজার থেকে নৌকায় চড়ে রওনা দেয় ৯০ রোহিঙ্গার দলটি। তাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।
ইন্দোনেশিয়ায় তাদের আশ্রয় দেয়া হবে কি না, সে বিষয়ে এখনও কিছু জানায়নি জাকার্তা। বাংলাদেশ ও ভারত নেয়নি
কক্সবাজার থেকে গত ১১ ফেব্রুয়ারি রওনা দেয়ার চার দিন পর নৌকাটির ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
ওই অবস্থায় প্রায় দুই সপ্তাহ খাবার ও বিশুদ্ধ পানি ছাড়াই সাগরে ভেসে ছিল আরোহীরা। বেশির ভাগ আরোহী কোনো রকমে বেঁচে থাকলেও মারা যায় ৮ জন।
আন্দামান সাগরে হারিয়ে যাওয়ার পর নৌকাটির যাত্রীদের নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছিল জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। এরপর ওই শরণার্থীদের সাহায্য করতে ভারতীয় কোস্টগার্ডের দুটি জাহাজ আন্দামান সাগরে পাঠানো হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় আন্দামান সাগরেই ভাসমান নৌকা থেকে ৮১ রোহিঙ্গাকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। নৌকা থেকে ৮ জন রোহিঙ্গার মরদেহও পায় ভারতীয় কোস্টগার্ড।
জীবিতদের খাদ্য, ওষুধ, বস্ত্রসহ বিভিন্নভাবে সহায়তা দেয়া হলেও ভারতে নামার অনুমতি দেয়া হয়নি। তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে সে সময় ঢাকার সঙ্গে আলোচনার কথা জানিয়েছিল নয়াদিল্লি।
জবাবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেছিলেন, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারেই ফেরত পাঠানো উচিত। তাদের আশ্রয় দিতে বাধ্য নয় বাংলাদেশ সরকার।
তিনি আরও বলেছিলেন, ‘রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের নাগরিক নয়। তারা মিয়ানমারের নাগরিক। যে জায়গা থেকে এই ৮১ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করা হয়েছে, সেটি বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা থেকে ১ হাজার ৭০০ কিলোমিটার দূরে।
‘অথচ ভারতের সীমানা থেকে মাত্র ১৪৭ কিলোমিটার আর মিয়ানমার থেকে ৩২৪ কিলোমিটার দূরে ভাসছিল তারা। কাজেই তাদের আশ্রয় দিতে বাংলাদেশ বাধ্য নয়; বরং অন্য দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার উচিত তাদের দায়িত্ব নেয়া।’
এরপর তাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য গত তিন মাসে ভারত, বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও মালয়েশিয়ার সরকারকে অসংখ্যবার অনুরোধ করেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ও তাদের স্বজনরা।
বৌদ্ধ-অধ্যুষিত মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গারা বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত জনগোষ্ঠী। রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার এ জনগোষ্ঠীর নেই নাগরিকত্ব।
ভয়াবহ সেনা নিপীড়নের মুখে পালিয়ে, সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। তাদের ঠাঁই হয়েছে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে।
এ অবস্থায় উন্নত জীবনের লোভ দেখিয়ে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয়রত রোহিঙ্গাদের গোপনে সমুদ্রপথে ভিনদেশে পাঠানোর চেষ্টা করে মানব পাচারকারীরা।