আহমেদ বায়েজীদ : হাতির যে দুটি দাঁত আমরা দেখতে পাই সেগুলো মূলত শোভা বর্ধনকারী। খাবার গ্রহণের কাজে এ দুটি দাঁত ব্যবহৃত হয় না। এছাড়া মুখের ভেতরে আরো ২৬টি দাঁত থাকে প্রতিটি হাতির। প্রধান দুটি দাঁত ছাড়াও অন্য দাঁতগুলো দিয়ে বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন শিল্পকর্ম তৈরির প্রচলন রয়েছে প্রাচীনকাল থেকেই। আর এই হস্তশিল্পটিই কাল হয়ে দাড়িয়েছে হাতির জীবনের জন্য।

হাতির দাঁত দিয়ে গলার মালা, লকেট, আংটি, চুরি, চিরুনি, দাবার গুটি, চামচসহ আরো অনেক কিছু তৈরি করা হয়। বিভিন্ন ধরণের শোপিস, মূর্তি, মুকুট, তলোয়ার বা চাকুর খাপ তৈরি ও আসবাবপত্রের নকশা করা হয় হাতির দাঁত দিয়ে। হাতির দাঁত সহজলভ্য না হওয়ায় এসব সামগ্রীর দাম অনেক বেশি হয়। যে কারণে শৌখিন ধনীরা সাধারণত এসব পণ্য ব্যবহার করেন। একটি হাতির দাঁত থেকে যে পরিমাণ পণ্য তৈরি হয়, তার দাম কয়েক কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে। হাতি শিকার নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে এর দাম ক্রমশ আরো বাড়ছে।

চোরা শিকারিরা প্রথমে গুলি করে হাতিকে ধরাশায়ী করে। এরপর মাথা কেটে বের করে নেয়া হয় দাঁত। সেগুলো বিভিন্ন হাত হয়ে চলে যায় কারখানায়।

হাতির দাতের শিল্প কর্মের বিশাল বাজার রয়েছে চীনে। দেশটিতে কয়েক বছর আগেও বিলাসবহুল সব শপিং মলের দোকানগুলোতে লাখ লাখ ডলারের হাতির দাঁতের শিল্পকর্ম বিক্রি হতো। এসব বিক্রেতারা সরকারের অনুমোদ নিয়েই এগুলো বিক্রি করতেন। যে কারণে ১৯৯০ এর দশকে হাতি শিকার নিষিদ্ধ হলেও তা বন্ধ হয়নি। অল্প সংখ্যক অনুমোদিত দোকান ও কারখানার আড়ালে চলতে থাকে বিশাল অবৈধ বাজার।

আর এতে হাতি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়। যে কারনে বাধ্য হয়ে ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে চীনে সব ধরণের হাতির পণ্যের বাজার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবুও এই বাণিজ্য পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। বরং নিষিদ্ধ হওয়ায় পণ্যের দাম আরো বেড়েছে। চীনের সায়ত্বশায়িত অঞ্চল হংকংয়েও হাতির পণ্যের বাঁজার এখনো চালু রয়েছে। এছাড়া ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, মিয়ানমার লাওস প্রভৃতি দেশে রয়েছে হাতির দাঁতের বাজার। এসব দেশে প্রকাশ্যেই চলছে বেচাকেনা। আর এর পরিণতিতে প্রাণ দিতে হচ্ছে নিরীহ হাতিগুলোকে।

বিপন্ন প্রজাতির বাণিজ্য নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সালে আফ্রিকায় পাচারকারীদের হাতে নিহত হয়েছে ২৫ হাজার হাতি। যদিও পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে। শুধুমাত্র তানজানিয়ায় গড়ে প্রতিদিন ৩০টি হাতি নিহত হয় পাচারকারীদের হাতে।

আফ্রিকা মহাদেশ হাতি পাচারের কেন্দ্র হয়ে ওঠার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে যেমন, পর্যাপ্ত সংখ্যক নিরাপত্তা কর্মীর অভাব, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া, সশস্ত্র চোরকারবারীদের হাতে হতাহত হওয়ার ভয় এবং অত্যন্ত সুসংগঠিত অপরাধী নেটওয়ার্ক। এছাড়া অঞ্চলটির দরিদ্র জনগোষ্ঠির একটি অংশ অবৈধ এই আয়ের সাথে জড়িয়ে পড়ছে।

বিংশ শতাব্দীর শুরুতেও যেখানে বিশ্বে হাতির সংখ্যা ছিলো কয়েক মিলিয়ন, সেখানে সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বে হাতির সংখ্যা ৪ লাখে নেেেম এসেছে বলে জানা গেছে। এভাবে চলতে থাকলে ২০৪০ সাল নাগাদ হাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।