বিশেষ প্রতিনিধি, কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) ঘুরে এসে : মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলায় হরিজন সম্প্রদায়ের সন্তানদের হোটেলে বসে খাবার খেতে নিষেধাজ্ঞার অভিযোগ উঠেছে হোটেল মালিকের বিরুদ্ধে। হরিজন সম্প্রদায়ের সন্তান বলে তাদেরকে হোটেলের বাইরে বসে কাগজে করে খাবার খেতে হয়। এ ঘটনার পর জেলা জুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে।

উপজেলা শহরের রেলওয়ে কলোনীর রাবেয়া আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণীর ছাত্র বিশাল (১২), রেলওয়ে জুনিয়র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র সঞ্জয় (১৪), রাবেয়া আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণীর ছাত্র রনবীর (১১), রেলওয়ে জুনিয়র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ম শ্রেণীর ছাত্র নীরব (৭), বিএইচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণীর ছাত্র বিরাট (১১) জানায়, স্কুলের টিফিনের সময় বা ছুটির সময় হোটেলে বসে খেতে পারে না। তাদের বন্ধু-বান্ধব একই সাথে এসে হোটেলে ঢুকে পড়ে কিন্তু তারা সেটা পারে না। তারা হরিজন সম্প্রদায়ের সন্তান।

অভিযোগ উঠেছে- মূল স্রোতের সাথে বসে তাদেরকে হোটেলে খেতে দেয়া হয় না। এমনকি বৈষম্যমূলক আচরণেরও অভিযোগ উঠেছে। হোটেলের বাইরে তাদের নিজস্ব পাত্রে খেতে দেয়া হয়। বিষয়টি গড়িয়েছে উপজেলা প্রশাসন পর্যন্ত।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদের কুলাউড়া শাখার সভাপতি মৎলা বাসপর বলেন, আমরা হরিজন সম্প্রদায় এসব সামাজিক বা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। আমরা শহরের পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করি। আমাদের ছেলেমেয়ে শহরের বিভিন্ন স্কুলে পড়ালেখা করে। কিন্ত স্কুল টিফিন এর সময়ে অন্যান্য ধর্মের বাচ্চারা হোটেলে ভিতরে বসে খায়। কিন্তু আমাদের ছেলেমেয়ে স্কুল ড্রেস পরে গেলেও তাদেরকে কাগজে নাস্তা দেওয়া হয় এবং ময়লা পাত্রে পানি দেয়।

তিনি আরো জানান, হোটেলগুলোতে আমাদেরই তো খেতে দেয় না। এখন দেখি আমাদের শিশুদের প্রতিও করা হচ্ছে একই আচরণ। তাই আমরা প্রতিবাদ করছি। এই বৈষম্যগুলো বেশী করা হচ্ছে ইদানিং। ৪/৫টি হোটেলের নাম উল্লেখ করে মৎলা বাসপর বলেন, এই হোটেলগুলোই এসব বেশী করছে।

অভিযোগের বিষয়ে কুলাউড়া হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো: লোকমান মিয়া বলেন, বিষয়টি আমাদের সমস্যা না। হোটেলে থাকা অন্যান্য গ্রাহকদের আপত্তি। বাচ্চাদের বাহিরে বসে খাওয়ানোর বিষয়টি অত্যন্ত দু:খজনক। আমরা দ্রুত বসে আলোচনা করে একটি সুন্দর সমাধান করবো।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহেদী হাসান বলেন, আমি একটি হোটেল পরিদর্শনও করেছি ও হোটেল মালিকদের বলেছি যে আইনের কোনো জায়গায় কি এমন কথা আছে কিনা। এমনকি পবিত্র কোরআনে এমন কোনো আয়াত আছে কিনা। তাই সবাইকে বলেছি এভাবে কাউকে বৈষম্য করা যাবে না। বিষয়টি সমাধানের একটা ব্যবস্থা করা হবে।