মিজানুর রহমান মিজান, রংপুর অফিস : রংপুরের পীরগাছার চাঞ্চল্যকর ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন (৪৫) হত্যা মামলার গ্রেপ্তারকৃত প্রধান অভিযুক্ত ফারুক মিয়া ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দী দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (৩১ মে) সন্ধ্যায় মহামান্য আদালতে দেয়া এ জবানবন্দিতে তিনি দাবি করেন, স্ত্রীর সাথে পরকীয়া এবং পরবর্তীতে তার পরামর্শে স্ত্রীর দেয়া ডিভোর্সের জেরে ক্ষুব্ধ হয়ে দেলোয়ারকে হত্যা করেন তিনি।
মঙ্গলবার (৩১ মে) সন্ধ্যায় রংপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আসামি ফারুক মিয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
আদালতের কাছে দেয়া জবানবন্দিতে ফারুক বলেন, পীরগাছার মাছ হাটি এলাকায় ইজারাদার হওয়ার সূত্রে দেলোয়ার হোসেনের কাছে ১০ হাজার টাকায় একটি পজেশন ভাড়া দেন ফারুক। দুই হাজার টাকায মাসিক ভাড়ায় সেখানে ব্যবসা করছিল দেলোয়ার। ব্যবসা চলাকালীন দেলোয়ার আমার স্ত্রীর সাথে পরকীয়া সম্পর্কে লিপ্ত হয় ও বিভিন্ন সময়ে আমার বাড়ি এবং বিভিন্ন স্থানে নিয়ে গিয়ে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। বিষয়টি সে আমাকে নিজেই বলে।
ফারুক বলেন, আমি তাকে এবং আমার স্ত্রীকে আমার তিনটি সন্তানের কথা ভেবে এই অবৈধ সম্পর্ক থেকে সরে আসার একাধিকবার অনুরোধ জানাই। কিন্তু কোনোভাবেই দেলোয়ার এবং আমার স্ত্রী সেটি শোনেনি। এমনকি ক্রমান্বয়ে আরো গভীরভাবে আমার স্ত্রীর সাথে মেলামেশা শুরু করেন। এক পর্যায়ে দেলোয়ারের পরামর্শে আমার স্ত্রী তার সাথে পরকীয়া নিশ্চিত রাখতে আমাকে ডিভোর্স দেয়। এতে আমি আমার তিনটি সন্তান নিয়ে বিপাকে পরে যাই।
ফারুক আদালতকে আরো বলেন, আমার স্ত্রীর সাথে দেলোয়ারের পরকীয়া এবং পরবর্তীতে আমাকে ডিভোর্সের ঘটনায় আমি দেলোয়ারের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠি এবং তাকে খুন করার পরিকল্পনা করি। পরবর্তীতে ছুরি কিনে শুক্রবার রাত সাড়ে এগারোটায় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তাকে বাড়ি থেকে ডেকে এনে রেললাইনে কুপিয়ে হত্যা করি।
জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার রংপুর (সি সার্কেল) আশরাফুল আলম পলাশ জানান, ঘটনার ৪ দিনের মাথায় প্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ ও ডিবির যৌথ অভিযানে ফারুক মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার কথামতো ঘটনাস্থল পীরগাছার অনন্তরাম এলাকায় তার বোনের বাড়ির পাশে তার দেখানো ও সনাক্ত মতে একটি পুকুরে অভিযান/তল্লাশি চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের সময় ব্যবহৃত ধারালো ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও জানান, পরবর্তীতে তাকে রংপুরের আমলী আদালত (পীরগাছা) ম্যাজিস্ট্রেট আবুহেনা সিদ্দিকীর আদালতে তোলা হয়। এ সময় বিচারকের কাছে খুনের কথা স্বীকার করে কেন ও কিভাবে তাকে খুন করা হয়েছে তা খুনি ফারুক আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টায় পীরগাছা উপজেলা বাজারের কাছে অনন্তরাম এলাকায় মীমাংসার কথা বলে বাড়ি থেকে ডেকে এনে রেললাইনের পাশে কুপিয়ে নিশংস ভাবে হত্যা করা হয় দেলওয়ার হোসেনকে।
নিহত ব্যবসায়ী দিলওয়ার অনন্তরাম কসাই টারীর সবুর উদ্দিনের ছেলে।
এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম বাদী হয়ে ফারুক মিয়া (৪৫)কে প্রধান আসামি করে অজ্ঞাত আরও ৭-৮ জনের নামে থানায় হত্যা মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত আলোচিত এই হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত প্রধান আসামীসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।