মিজানুর রহমান মিজান, রংপুর অফিস : সুমিষ্ট হাঁড়িভাঙা আম আজ থেকে পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। সারা দেশে এবং বিদেশে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা রসালো ও সুস্বাদু এই হাঁড়িভাঙা আম সবার উপরে স্থান করে নিয়েছে অনেক আগেই। আনুষ্ঠানিকভাবে বেঁধে দেয়া সময়সীমার মধ্যে আজ থেকেই জনপ্রিয় এই হাড়িভাঙ্গা আম বাজারজাত করা শুরু হয়েছে।

হাড়িভাঙ্গা আম বাগানের গাছ থেকে পাড়ার পর শুরু হয়েছে বাজারজাত করণ। বৈশাখী ঝড়বৃষ্টি আর গেল দুই সপ্তাহের ঝড়-বাতাসে আমের কিছুটা ক্ষতি হলেও সময় মত বাগানের আম, গাছ থেকে পারতে পেড়ে বেজায় খুশি আম চাষিরা ।

আঁশবিহীন সুমিষ্ট হাড়িভাঙ্গা আম এবারে রংপুর জেলায় ১ হাজার ৮৮৭ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে শুধু হাঁড়িভাঙা আম বিক্রি করে এ বছর প্রায় ২০০ কোটি টাকার ওপরে ব্যবসা করার আশা আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের।

এক সময় যে ইউনিয়ন জুড়ে দেখা যেত ধানক্ষেত, এখন সেই ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামজুড়ে শুধুই চোখে পড়ে হাঁড়িভাঙা আমের বাগান। অভাব-অনটন দূরে ঠেলে এখানকার মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রেরণা হয়ে উঠেছে এই আম। যারা একসময় দিনমজুর ও শ্রমিকের কাজ করতেন, তারাও বাড়ির পরিত্যক্ত জায়গায় হাঁড়িভাঙা আমগাছ লাগিয়েছেন। আম চাষ করে অনেকেই বদলে ফেলেছেন নিজেদের ভাগ্য।

দুই দশক আগেও হাঁড়িভাঙা আম নিয়ে এত মাতামাতি ছিল না রংপুরের আমের রাজধানী বলা হয়ে থাকে মিঠাপুকুরের খোড়াগাছ ইউনিয়নে। ছিল না এখানে বাণিজ্যিকভাবে আমের চাষ। সবাই ধান, তামাক, সবজি চাষ নিয়ে পড়ে থাকতেন। মিষ্টি, সুস্বাদু ও বিষমুক্ত হাঁড়িভাঙা আম।

আঁশহীন রসালো এ আমের চাষ যে অনেক বেশি লাভজনক, সেটি বুঝতে পারেন খোড়াগাছবাসী। একের পর এক আমচাষির সাফল্য দেখে একসময় যারা জমিতে ধানসহ অন্য ফসলনির্ভর চাষাবাদে মনোযোগী ছিলেন, তারাও হাঁড়িভাঙায় স্বপ্ন বুনতে থাকেন। লাভ বেশি হওয়ায় হাঁড়িভাঙা আমের চাষ হয়ে ওঠে এখানকার মানুষের জীবিকার প্রধান অবলম্বন।

এবারে হাঁড়িভাঙা এই আম মিঠাপুকুরের খোড়াগাছ সহ অন্যান্য ইউনিয়নসহ ও বদরগঞ্জ উপজেলার কিছু অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এই আমের বাণিজ্যিক চাহিদা বাড়তে থাকায় রংপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে এর ফলন বিস্তৃত হয়েছে। জেলার বাইরে নীলফামারীর সদর, সৈয়দপুর; দিনাজপুরের পার্বতীপুর, খানসামা ও চিরিরবন্দর এলাকায়ও চাষ হচ্ছে হাঁড়িভাঙার।

স্থানীয় হারিভাঙা প্রথম আম চাষী আমজাদ হোসেন পাইকার খোলা বার্তা টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, হাঁড়িভাঙা আম ঘিরে প্রতিবছর শত কোটির টাকা ব্যবসা হয়। এই আম আমাদের এলাকার চিত্র পাল্টে দিয়েছে। মৌসুমি ফল হলেও পুরো রংপুর অঞ্চলে হাজারো মানুষ এই আম ঘিরে লাভবান হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় সম্পদ। কিন্তু দীর্ঘদিনেও এই আমের সংরক্ষণে সরকারিভাবে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এই এলাকার হাটবাজারের উন্নয়ন ও যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। বিশেষ করে হাঁড়িভাঙা আম সংরক্ষণে হিমাগারের খুবই প্রয়োজন।

রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক উদ্যান কৃষির শামসুর রহমান খোলা বার্তা টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এবার ১ হাজার ৮৮৭ হেক্টর জমিতে হাঁড়িভাঙ্গা আম চাষ হয়েছে। এতে হেক্টর প্রতি ১২-১৫ টন আম আসবে। ইতোমধ্যে বিখ্যাত এ আমের বাজারজাতকরণে কৃষি বিভাগ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বড় বড় চাষিদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের অনলাইনের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।