আমান উল্লাহ পাটওয়ারী, সাভার (ঢাকা) : হাতে লাল সবুজের পতাকা আর রং বেরংয়ের ফুল, হৃদয়ে গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা নিয়ে প্রাণের উচ্ছ্বাসে ৪৯তম বিজয় দিবসে গতকাল বুধবার সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন সর্বস্তরের জনতা। বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় ফুলে ফুলে ঢেকে যায় জাতীয় স্মৃতিসৌধের মূল শহীদ বেদী। যেখানে ছিল সব বয়সীরাই। নানা শ্লোগানে আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে স্মৃতিসৌধকে ঘিরে গোটা এলাকা যেন পরিণত হয় উৎসবে।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। সকাল ৬টা ৩৪ মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম শামীম উজ জামান। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শ্রদ্ধা জানান তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল আহমদ চৌধুরী। শহীদদের স্মরণে বিউগলে বাজানো হয় করুন সুর। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শহীদদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর জাতীয় সংসদের স্পিকারের পক্ষ থেকে এবং তিন বাহিনীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এর পরপরই জনসাধারণের জন্য স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। তবে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে এবার স্মৃতিসৌধের পরিস্থিতি ভিন্ন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকেই আগেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পরে সর্বসাধাণের জন্য জাতীয় স্মৃতিসৌধের মূল ফটক খুলে দেয়া হয়। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসা লোকজনকে ছোট ছোট দলে ভাগ করে ভেতরে ঢোকানো হয়।

মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার প্রশ্নে কারও সঙ্গে আপস নয় : কাদের
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সাম্প্রদায়িক বিষবৃক্ষ উপড়ে ফেলতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার প্রশ্নে কারও সঙ্গে আপস নয়। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পর তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

স্বাধীনতা মিলেছে মুক্তি মেলেনি : মির্জা ফখরুল
জাতীয় স্মৃতিসৌধে সকাল সোয় ৯টার সময় শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর । তিনি বলেন স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তীকে সামনে রেখে পালিত হচ্ছে ৪৯তম বিজয় দিবস। তবে, বিজয় মিললেও মুক্তি মেলেনি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসে বিএনপি মহাসচিব এ মন্তব্য করেন। মীর্জা ফখরুল বলেন, আমাদের বাক স্বাধীনতা নেই, মৌলিক স্বাধীনতাকে হরণ করা হয়েছে। অধিকারকে হরণ করা হয়েছে। আজকে আমরা বিজয় দিবসে শপথ গ্রহণ করেছি, স্মৃতিসৌধে আমাদের শ্রদ্ধা জানিয়ে, আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করার জন্য। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য, অবশ্যই এদেশের মানুষকে মুক্ত করার জন্য আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত রাখব। অবশ্যই আমরা বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে সক্ষম হব। বিজয় পেয়েছি, মুক্তি কি মিলেছে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, না, মুক্তি আমাদের মেলেনি, সেই মুক্তির জন্যই আমাদের সংগ্রাম করছি। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, ঢাকা জেলা বিএনপি সভাপতি ডাঃ দেওয়ান মোঃ সালাউদ্দিন বাবু, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন,সাধারণ সম্পাদক ইকবাল আহমেদ শ্যামল, ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আব্দুর রহমান বাবুলসহ আরো অনেক নেতাবৃন্দ৷এদিন ঢাকা জেলা ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের দলসহ অংগ সংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মীও শ্রদ্ধা জানাতে আসেন।

বিএনপি’র বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মীর সমাগম : সাবেক সংসদ ও ঢাকা জেলা বিএনপি সভাপতি ডাঃ দেওয়ার মোঃ সালাউদ্দিন বাবুর নেতৃত্বে সকাল থেকে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর ছিলো জাতীয় স্মৃতিসৌধ। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদেরও ভীড় বাড়তে থাকে। তারা সবাই এই সময় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নামে শ্লোগান দেন। এ দিন নেতা-কর্মীদে মাথায় ছিল সাভার থেকে দুইবারের নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য ডাঃ দেওয়ান মোঃ সালাউদ্দিন বাবু’র নাম লেখা কাপড়। এদিন নেতা-কর্মীদের উচ্ছসিত দেখা গেছে।

গণবিশ্ববিদ্যালয় : গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে বিজয় দিবসের সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ র‌্যালী নিয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধে সমবেত হয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

স্মৃতিসৌধের বেদীতে একে একে শ্রদ্ধা জানায়- আশুলিয়া থানা কৃষকলীগ, আশুলিয়া থানা ছাত্রলীগ, ডিআইজি ঢাকা রেঞ্জ, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট, প্রবীণ হিতৈষী সংঘ কর্মচারী সমিতি, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এম.এল), বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র (টিইউসি), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী ইউনিয়ন, জাকের পার্টি, ডিপ্লোমা কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ, উপচার্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, মাদারল্যান্ড গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন, গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর, বঙ্গবন্ধু কর্মচারী পরিষদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স এসোসিয়েশন, গণবিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, বাংলাদেশ প্রাক্তন সৈনিক সংস্থা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়, বাংলাদেশ গণ আজাদী লীগ, বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এ্যালার্মনাই এসোসিয়েশন, জাসদ, ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব), ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন (ক্র্যাব), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী সমিতি, বাংলাদেশ রেলওয়ে, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটি, এডাব, জাতীয় পার্টি, আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগ, কেন্দ্রীয় ১৪ দল, ঢাকা জেলা যুবদল, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দল ঢাকা জেলা, জনতা ব্যাংক লিমিটেড, ঢাকা জেলা বিএনপি, ঢাকা জেলা ছাত্রদল, জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম ঢাকা জেলাসহ বিভিন্ন সংগঠন এদিন জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তবে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে এবার স্মৃতিসৌধে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, প্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিল কম।