বন্যা তালুকদার, পাথরঘাটা (বরগুনা) : সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র লালদিয়া সমুদ্র সৈকত। বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নে অবস্থিত বলেশ্বর নদী ও বিষখালী নদীর মোহনায় এবং লালদিয়া বনের পাশে অবস্থিত।

এখান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত অবলোকন করা যায়। এক পাশে সমুদ্র অন্য পাশে বন, মাঝে সৈকত, এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য প্রকৃতিতে বিরল। লালদিয়া সমুদ্রসৈকত পাড়ে গড়ে তোলা হয়েছে ঝাউবন। হরিণবাড়িয়া বনে নির্মিত ৯৫০ মিটার দীর্ঘ ফুটট্রেল (পায়ে হাঁটার কাঠের ব্রিজ) সম্প্রসারিত করে লালদিয়া সমুদ্রসৈকত পর্যন্ত নেয়া হয়েছে।

এ বনের পূর্বে বিষখালী নদী এবং পশ্চিমে বলেশ্বর নদী। দুই নদী ও সাগরের মোহনা এ বনকে ঘিরে রেখেছে। বন সংলগ্ন পূর্ব প্রান্তে সমুদ্র সৈকত। সমুদ্র সৈকতটি বেশ ছোট। তবে ছোট হলেও সৌন্দর্য কোন অংশে কমতি নেই।

এখানে বিভিন্ন রকমের পাখির কলকাকলি এবং সমুদ্রের গর্জন শুনে পর্যটকরা হবেন বিমোহিত এবং যেতে চাইবেন বারে বারে। এখানে সাগরের নোনা জল এসে আছড়ে পরছে বালুকাবেলায়। উড়ে যায় গাংচিল আর হাজার হাজার লাল কাকড়ার দল ছুড়ে বেড়ায় বেলাভূমিতে। সে এক নান্দনিক দৃশ্য। মনকাড়া অনুভুতি যা আপনাকে আবারও কাছে টানবে বার বার।

লালদিয়া সৈকতের পাশেই রয়েছে একটি শুটকি পল্লী। সৈকত ঘেরা লালদিয়ার চরে বছরে কার্তিক মাস থেকে শুরু হয়ে ফাল্গুন মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলে শুঁটকি চাষ। এখানে যে শুঁটকি প্রস্তুত করা হয় তার ৯০ ভাগই হয় হাঁস-মুরগির খাদ্যের জন্য, বাকি ১০ ভাগ আমরা খাই। ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে এখানে শুঁটকির কারবার চলে আসছে।


যেভাবে যাবেন

ঢাকা হতে সড়ক ও নৌ উভয় পথেই বরগুনা যাওয়া যায়। ঢাকার গাবতলী ও সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে বিভিন্ন পরিবহনের বাস সকাল এবং রাতে উভয় সময় ছেড়ে যায়। এসব বাসের মধ্যে- দ্রুতি পরিবহন গাবতলী থেকে সকালে ও রাতে বরগুনার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়, সাকুরা পরিবহন গাবতলী ও সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে সকালে ও রাতে ছেড়ে যায়। এ ছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি পরিবহন ঢাকা-বরগুনা রুটে চলাচল করে।

আপনি চাইলে নদী পথেও বরগুনা যেতে পারেন। অনেকের কাছেই বাস ভ্রমণের চেয়ে লঞ্চই আরামদায়ক ভ্রমণ। সদরঘাট থেকে ‘এম ভি বন্ধন-৭’ নামে একটি লঞ্চ বরগুনা যায়।

বরগুনা হতে বাসযোগে পাথরঘাটা যাওয়ার পর মোটরসাইকেলে অতি সহজে লালদিয়া বনে যাওয়া যাবে। এ ছাড়া ট্রলার কিংবা নৌকা ভাড়া করে যাওয়া যায় লালদিয়া বনে। পিরোজপুর হয়েও পাথরঘাটায় যাওয়া যায়।

হরিণঘাটা থেকে লালদিয়া বন ধরে হেঁটে গেলে সৈকতে পৌঁছাতে সময় লাগতে পারে ঘণ্টা দুয়েক। যারা এডভেঞ্চার পছন্দ করেন তাদের জন্য এটি একটি ভিন্ন অভিজ্ঞতা হতে পারে।


কোথায় থাকবেন

বরগুনার পাথরঘাটা ও আমতলী উপজেলায় ভাল মানের তেমন কোন হোটেল নেই। সেক্ষেত্রে থাকতে হবে বরগুনা শহরে। বরগুনায় রাত্রিযাপন ব্যবস্থা খুবই ভাল। অনেকগুলি রেস্ট হাউস আছে এ ছাড়া আছে কয়েকটি আবাসিক হোটেল।

বরগুনায় আছে- রেস্ট হাউস জেলা পরিষদ ডাকবাংলো, খামারবাড়ী রেস্ট হাউস, পানি উন্নয়ন বোর্ডের রেস্ট হাউস, এ্যাগ্রো সার্ভিস সেন্টার, গণপূর্ত বিভাগ রেস্ট হাউস, সিইআরপি রেস্ট হাউস।

বরগুনার হোটেলগুলোর মধ্যে- হোটেল তাজবিন (০৪৪৮-৬২৫০৩), বরগুনা রেস্ট হাউস (০১৭১৮-৫৮৮৮৫৬), হোটেল আলম (০৪৪৮-৬২২৩৪), হোটেল বসুন্ধরা (০৭১২৬-৪৫৩০০৭), হোটেল মৌমিতা (০৪৪৮-৬২৮৪২), হোটেল ফাল্গুনী (০৪৪৮-৬২৭৩৩)।

এদিকে লালদিয়া থেকে কুয়াকাটার দূরত্ব খুবই কম। আপনি চাইলে মাত্র ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টার মধ্যে লালদিয়া থেকে কুয়াকাটা যেতে পারেন। আপনি ইচ্ছে করলে কুয়াকাটায়ও থাকতে পারেন। এতে আপনার এক যাত্রায় কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতটাও দেখা হয়ে যাবে।