খোলাবার্তা২৪ ডেস্ক : শ্রীলংকায় অর্থনৈতিক সংকটে বিক্ষোভের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে আবার দেশে ফিরে এসেছেন।
তিনি এতদিন সাময়িক ভিসা নিয়ে থাইল্যান্ডে অবস্থান করছিলেন। সেখান থেকেই সিঙ্গাপুর হয়ে কলম্বো ফিরেছেন তিনি। বিমানবন্দরে দেশটির কয়েকজন মন্ত্রী তার সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
শ্রীলংকার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের জন্য গোতাবায়া রাজাপাকসে সরকারকেই দায়ী করে দেশটির মানুষ। বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের জের ধরে দেশটিতে তীব্র খাদ্য ও জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছিলো।
এর জের ধরেই গত এপ্রিলে খাদ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্য ব্যাপকভাবে বেড়ে গেলে দেশটিতে প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু হয়। সমাজের বিভিন্ন স্তরের লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে আসে রাজাপাকসে সরকারের বিরুদ্ধে। এর এক পর্যায়ে মে মাসে পদত্যাগে বাধ্য হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে।
জুলাই মাসে বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের সরকারি বাসভবনে ঢুকে পড়ে। রাজাপাকসে এ অবস্থায় সামরিক বিমানে দেশ ছেড়ে পালিয়ে প্রথমে মালদ্বীপ এবং পরে সিঙ্গাপুর হয়ে থাইল্যান্ডে অবস্থান নেন।
তার পলায়নের পর দেশটির অভিজ্ঞ রাজনীতিক রনিল বিক্রমাসিংহের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথ তৈরি করে।
তবে নতুন সরকারের জন্য গোতাবায়া রাজাপাকসের ফিরে আসাটাও অনেক স্পর্শকাতর একটি বিষয়। কারণ সরকার এই মুহূর্তে নতুন করে কোন বিক্ষোভ দেখতে চাইছে না। আবার রাজাপাকসের নিরাপত্তার বিষয়টিও রয়েছে।
অবশ্য বিক্ষোভের অন্যতম নেতা ফাদার জিভান্থা পেইরিস বিবিসিকে বলেছেন যে রাজাপাকসের ফিরে আসার বিরোধিতা তারা করছেন না। তিনি বলেন, “শ্রীলংকার যে কোন নাগরিকই দেশে ফিরে আসতে পারেন”।
তবে প্রতিবাদকারীদের অনেকেই বলছেন যে রাজাপাকসে যদি আবার রাজনীতি বা সরকারে সক্রিয় হতে চান তাহলে তারা এর বিরোধিতা করবেন।
একজন প্রতিবাদকারী রাজীব কান্ত বলেন, “তার ফিরে আসার পর প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি যেসব ভুল করেছিলেন সেগুলো নিয়ে আইনি পদক্ষেপ নেয়া উচিত। তার ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসের বিরুদ্ধেও মামলা হওয়া উচিত”।
শ্রীলংকার গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী সেন্ট্রাল কলম্বোতে রাজাপাকসের জন্য একটি বাড়ি দেখেছে দেশটির সরকার। কিন্তু এটি নিশ্চিত নয় যে তিনি সরাসরি সেখানেই উঠবেন নাকি কিছুদিন সামরিক ব্যবস্থাপনায় থাকবেন।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন যে রাজাপাককেকে তারা সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রাপ্য নিরাপত্তা দেবেন।
অবশ্য এর আগে বিক্রমাসিংহ প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেয়ার পর মানবাধিকার সংস্থাগুলো বিক্ষোভকারীদের ওপর দমন পীড়নের অভিযোগ তুলেছিলো। অনেককে আটকও করা হয়েছিলো যাদের অনেকে আবার জামিনে মুক্তিও পেয়েছেন।
বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেয়া তিনটি স্টুডেন্ট ইউনিয়ন নেতাদের সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আটক করা হয়েছিলো।
বিক্ষোভকারীরা বিক্রমাসিংহের বৈধতা ও জনসমর্থনহীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তার বিরুদ্ধে রাজাপাকসে পরিবারকে সুরক্ষা দেয়ার অভিযোগ তুলেছিলো।
সরকার অবশ্য বলছে যে তারা শুধু তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিচ্ছে যারা আইন লঙ্ঘন করছে।
জুলাইতে প্রেসিডেন্ট সচিবালয়ের সামনে যেখানে বিক্ষোভকারীরা অবস্থান করছিলো সেখানেও সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা গত মাস থেকেই তাদের অবস্থানস্থল থেকে সরে এসেছে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সরকার নিবন্ধিত যানবাহনকে পাস দিয়ে তেল দেয়ার ব্যবস্থা করছে। তবে পেট্রোল পাম্পগুলোতে এখন দীর্ঘ লাইন দেখা যাচ্ছে।
প্রধান খাদ্যদ্রব্যগুলো দোকানে আসছে কিন্তু দাম অনেক বেশি। মূল্যস্ফীতি এখন প্রায় ৬৫ শতাংশ।
ওদিকে চলতি সপ্তাহেই সরকার প্রায় তিন বিলিয়ন ডলার ঋণের বিষয়ে আইএমএফের সাথে সমঝোতায় পৌঁছেছে।
তবে এ জন্য তাদের আর্থিক সংস্কারসহ অনেকগুলো শর্ত মেনে নিতে হবে। শ্রীলংকার সরকারকে একই সাথে ৫১ বিলিয়ন ডলার ঋণের বিষয়টিও পুনর্বিন্যাস করতে হবে।
আবার সরকারি খাতের গুরুত্বপূর্ণ কিছু ইউনিট বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে মানুষকে রাজি করানোটাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ ট্রেড ইউনিয়নগুলো থেকে ব্যাপক বিরোধিতা আসতে পারে।
দেশটির বিরোধী নেতারা অবশ্য সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে এ মুহূর্তে পরিস্থিতি শান্ত হলেও খাদ্য ও জ্বালানি তেলের সংকট আবার দেখা দিচ্ছে। ফলে সামনের মাসগুলোতে নতুন করে বিক্ষোভ প্রতিবাদের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। – বিবিসি