আকরাম হোসাইন, শেরপুর (বগুড়া) থেকে : বগুড়ার শেরপুর পৌরসভাটি প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা কিন্তু নাগরিক সেবা পাচ্ছে ৩য় শ্রেণীর পৌরসভার। বাসিন্দারা পৌর ট্যাক্স নিয়মিত পরিশোধ করলেও পায়না কোনো নাগরিক সুযোগ সুবিধা। বছরের পর বছর চলাচল করতে হয় চরম দুর্ভোগে আর বর্ষায় জলাবদ্ধতার তো কোন কাথায় নেই। পর্যাপ্ত বা ময়লা আবর্জনা রাকার ডাষ্টবিনে অভাবে সড়কের পাশে দূর্গন্ধময় ময়লা আবর্জনায় স্তুুপ। পৌরসভা এলাকায় ড্রেনের সু ব্যাবস্থা না থাকায় ড্রেনে পানি জমা থেকে দুর্গন্ধ ও মশার উপদ্রপ সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তাঘাট ও পৌরসভার ভিতরে দেখা মিলেছে শুকুর। নামে মাত্র মশামারার ঔষধ প্রয়োগ। রাস্তায় রাত্রিতে চলাচরের জন্য লাইটের খুটি থাকলে দেখা মিলেনা আলোর। অন্ধকারে আছন্ন।
পৌরসভা সুত্রে ১নং ওয়ার্ডের পরিক্রমায় জানা যায়, উলিপুর ও হাজীপুরের এক বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে গঠিত শেরপুর পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডে মোট জনসংখ্যা প্রায় ৫ হাজার, ভোটার সংখ্যা ২২৭৪ জন। ওয়ার্ডটিতে মসজিদ আছে ৫টি, মাদ্রাসা ১টি, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১টি, বেসরকারি চক্ষু হাসপাতাল ১টি, সরকারি কমিউনিটি সেন্টার ১টি, কবরস্থান ১টি, ওয়ার্ডে রোডলাইড আছে প্রায় ৪শ টি, ডাস্টবিন আছে ১৪টি বিশ্ব রোডের পূর্বে ১২টি পশ্চিমে ২টি, ওয়ার্ডটিতে শিক্ষিতের হার প্রায় ৯৫%, বাসিন্দাদের অধিকাংশ চাকুরিজীবি, ব্যবসায়ি ও রাজনীতিবীদ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওয়ার্ডটির অধিকাংশ সড়কের বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দর, যেখানে সেখানে ড্রেনের পাশে ময়লা আবর্জনার স্তুুপ ও ভাঙ্গা ড্রেনের গাইডওয়াল, যা দীর্ঘ দিন ধরে সংস্কার ও পুণঃ নির্মাণ হয়নি। রাস্তার লাইটের ব্যবস্থা থাকলেও তার অধিকাংশই অকেজো বলে অভিযোগ এলাকাবাসীদের। এসব বিষয় নিয়ে উলিপুরের বাসিন্দা মাসুম রানা ওয়াসিম বলেন, ১ম শ্রেণীর পৌরসভা হলেও নেই কোনো নাগরিক সুযোগ সুবিধা, অথচ সঠিক সময়ে পৌর ট্যাক্স প্রদান করি। বছরের পর বছর আমাদের বসবাস করতে হয় বসতবাড়ির আশেপাশে গাইডওয়াল ভাঙ্গা ড্রেনের পাশে দূগন্ধময় ময়লা আবর্জনায় স্তুুপ ও মশা-মাছি নিয়ে। এছাড়াও বর্ষাকালে শেরপুর থানা হতে কলেজরোড ও উলিপুর জামে মসজিদ রোডে থাকে জলাবদ্ধতা।
উলিপুরের বাসিন্দা ফয়সাল আহমেদ বলেন, গত ৫ বছরে আমাদের এই ১নং ওয়ার্ডে ৪/৫টি ডাষ্টবিন নির্মাণ ছাড়া আর কোনো কাজই হয়নি। কাউন্সিলর নির্বাচিত হবার পর থেকে আজ পর্যন্ত ৫/৬ বার মশা মারার ঔষধ দিলেও বাড়িতে মশা মারার কয়েল না জ্বালালে রাতে ঘুম আসে না। হাজীপুর নতুন পাড়ার শাহীন আলম বলেন, গত প্রায় ৬ মাস ধরে আমার বাড়ির সামনের ল্যাম্প পোস্টের লাইট নষ্ট যা দীর্ঘ দিন ধরে কাউন্সিলরকে জানালেও মেরামোত হচ্ছে না।
১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেজাউল করিম সিপ¬ব বলেন, বিগত ৫ বছরের তার এলাকার নানা উন্নয়ণ করেছি রাস্তাঘাট, ড্রেন কালভাট, কবরস্থানের বাউন্ডারি, উলিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাউন্ডারি এছাড়াও নিয়মিত মশা মারার ঔষধ প্রয়োগ করে থাকি। কিছু সমস্যা আছে আমার রাস্তাঘাটে, বিভিন্ন সড়কে মাষ্টারড্রেন নির্মাণের ফলে জনগণের চলাচলের কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। যেসব কাজ এখনো অসমাপ্ত আছে সে প্রসঙ্গে সিপ¬ব বলেন, আমাদের পৌরসভার অর্থনৈতিক সমস্যা ও আমাদের বরাদ্দের একমাত্র ফান্ড ইডিপির পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকার কারণে কাজগুলো শেষ করা সম্ভব হয়নি।
পৌরসভা সুত্রে ২নং ওয়ার্ডের পরিক্রমায় জানা যায়, গত ৫ বছরের এইসব সড়কের তেমন কোনো সংষ্কার চোখে পড়েনি ওয়ার্ডবাসীর। ফলে চরম দুর্ভোগে এই এলাকারবাসীন্দারা। এছাড়াও ডাষ্টবিন এর অভাবে যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনায় স্তুুপ, মশা-মাছির ও শুকুরের উপদ্রপতো আছেই। তবে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা মোটামুটি ভালো।
জানা যায়, শেরপুর পৌরসভার পশ্চিমদত্তপাড়া ও শ্রীরামপুরপাড়ার একবগর্ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে গঠিত ২ নাম্বার ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডের মোট জনসংখ্যা প্রায় ৪ হাজার, ভাটার সংখ্যা ১ হাজার ৯শ ৫২ জন, ওয়ার্ডে শিক্ষিতের হার প্রায় ৮৫%, এই ওয়ার্ডে ১টি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ২টি মসজিদ, ১টি মন্দির, রোডলাইড প্রায় ৭০টি রয়েছে। এ ওয়ার্ডের শ্রীরামপুর পাড়ার সাইদুর ইসলামের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ৫ বছরে বিশ্বরোড থেকে শেরপুর কলেজগেট পর্যন্ত এই সড়কের অধিকাংশ স্থানেই পিচপাথর উঠে গেছে। এরপর ড্রেন নির্মাণের জন্য সড়কটি কাটা হয়েছে যা আর পরর্বতীতে সংষ্কার করেনি। ফলে সড়কটি দিয়ে চলাচলের করতে ব্যপক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
শ্রীরামপুর পাড়ার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমাদের এই পাড়ায় পৌরসভা থেকে কোনো ডাষ্টবিন নির্মাণ না করায় স্থানীয়রা যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনায় ফেলে। ফলে মশা-মাছির উপদ্রপ বাড়ছে। তবে তা রোধে পৌরসভা থেকে মাঝে মাঝে ঔষধ দেওয়া হলেও তা খুব একটা কার্যকর নয়। দত্তপাড়ার সড়কগুলোর বেহালদশা। এর থেকেও বড় সমস্যা এই পৌর এলাকা জুড়ে শুকুরের অবাদ বিচরন, যা পৌর কর্তৃপক্ষ কখনো নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। ওয়ার্ডটিতে যেখানে সেখানে শুকুরের বিচরন বেশি হওয়ার কারণে এলাকার পরিবেশ দূষণ ও ধর্মীয় লোকজনের পবিত্রতা নষ্ট করে। এ বিষয়ে পৌর প্রশাসনকে অনেক বার বার অবগত করলেও কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
২নং ওয়ার্ড কাউন্সিল বদরুল ইসলাম পোদ্দার (ববি) বলেন, আমাদের পৌর এলাকার উন্নয়নে যে পরিমানে অর্থিক বরাদ্দ থাকা প্রয়োজন ছিলো তা যোগান দিতে পৌর প্রসাশন অক্ষম। কারণ পৌরসভা পর্যাপ্ত রাজস্ব আদায় করতে পায় না। এছাড়াও এডিপি’র টাকা আমরা ব্যবহার করতে পারছি না। শুকুরের সমস্যা প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, সারা শেরপুর জুড়েই শুকুরের অবাধ বিচরণ। আমরা তো শুকুরকে নিষিদ্ধ করতে পারবো না, তবে এদের পূর্নবাসন করা সম্ভব ছিল, কিন্তু তা বর্তমানে সম্ভব নয়। কারণ শেরপুর পৌরসভায় হরিজনদের (সুইপার) থাকার জন্য ৩ বিঘা জমির বরাদ্দ রাখা ছিল, যা বর্তমানে ২ বিঘা অবৈধ ভাবে দখল হয়েছে, অবশিষ্ট ১ বিঘা জমিতে বসবাস করছে করছে হরিজনরা (সুইপার)। এই জমি উদ্ধার করে হরিজন সম্প্রদায় ও শুকুরকে পুর্নবাসন করা সম্ভব। তিনি আরো জানা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ভাতা ১০০%, বিধবাভাতা ৮০% প্রদান করেছি সুবিধা ভোগীদের মাঝে। ঐতিহ্যবাহী শেরপুরের সরকারি মডেল ডি.জে হাই স্কুল আমার সময়ে সরকারি হয়েছে এবং ৪ কোটি টাকার উন্নয়ন হয়েছে আমার আমলেই।
পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের পরিক্রমায় জানা যায়: নদীর তীরবর্তী কিছু সড়ক ভাঙ্গাচোড়া থাকলেও, বিদ্যুৎ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো ওয়ার্ডটি করতোয়া নদীর তীরবর্তী হবার কারণে কিছু সড়ক ও ড্রেনের গাইডওয়াল ভাঙ্গাচোড়া থাকলেও অধিকাংশ সড়কের অবস্থা ভালো। পৌরসভা সুত্রে ৩নং ওয়ার্ডের পরিক্রমায় জানা যায়, শেরপুর পৌরসভায় করতোয়া নদীর তীরবর্তী গোসাইপাড়ার, পূর্বদত্তপাড়া ও ঘোষপাড়ার ১.২ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে গঠিত এই ৩ নং ওয়ার্ড। ওয়ার্ডটিতে মোট জনসংখ্যা প্রায় ৬ হাজার, ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৫শ ৬৪ জন। শিক্ষিতের হার প্রায় ৯০%। রোডলাইড আছে ৮৭ টি, মন্দির আছে ৪টি, মাদ্রাসা ১টি, ঈদগাহ মাঠ ১টি, বাজার ১টি, শেরপুর থানা ও পোষ্ট অফিস এই ওয়ার্ডে অবস্থিত।
গোসাইপাড়ার বাদল দাসের সাথে, তিনি বলেন আমাদের এই গোসাইপাড়ার অধিকাংশ সড়ক ভালো হলেও পানির ট্যাংকি হতে করতোয়া নদী পর্যন্ত সড়কটির পিচপাথর উঠে বেহালদশা। সেইসাথে সড়কের পাশে কিছু কিছু স্থানে ড্রেনের গাইডওয়াল ভাঙ্গা যা অনেক দিন থেকে মেরামত হয় না। এলাকায় ডাষ্টবিন না থাকার কারণে স্থানীয়রা যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলা, এজন্য দুগন্ধ ছড়ায়। তবে সড়কের পাশে রোডলাইড ব্যবস্থা ভালো ও এলাকায় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো।
শেরপুর পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিমাই ঘোষ বলেন, আমার এই ওয়ার্ডটির বিভিন্ন উন্নয়ণ করেছি। এছাড়াও বয়ষ্ক ভাতা ১৫ জন, বিধবাভাতা ২৪৩ জন, প্রতিবন্ধীভাতা ২৮ জন, ও মাতৃত্বকালীভাতা ১১৪ জন সুবিধাভোগীকে প্রদান করেছি। বিগত দিনে আমার ওয়ার্ডের উন্নয়ণ কাজে ৭৫% সাফলতা আছে কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে বাকী ২৫% উন্নয়ণ কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। যদি আরো সময় পেতাম তবে অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করতে পারতাম। — চলবে