আকরাম হোসাইন, শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি : বগুড়ার শেরপুরে মাছ মুরগীর খাদ্যে প্রোটিনের চাহিদা পূরনে বিকল্প হিসেবে কাজ করছে ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই। উপজেলার বিভিন্ন খামারিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দারিদ্রতা বিমোচনের আশায় প্রায় কয়েকহাজার যুবক-যুবতী বিগত কয়েকবছরে গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন মুরগী ও মাছের ফার্ম। কিন্তু বাজারে খাদ্যের দাম বৃদ্ধি হওয়ায় অনেক খামারী ও উদ্যোক্তা প্রায় লোকসানের মুখে পড়েন। লোকসানের মুখ থেকে বাঁচতে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের তালতা গ্রামের খামারী মেহেদি হাসান বাবলু, তার পোল্ট্রী খামারে মুরগীর খাদ্যে বিকল্প হিসেবে ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাইয়ের উৎপাদন শুরু করেন। যার লার্ভা নিজ খামারের মুরগির প্রোটিন চাহিদা পূরণ করছেন স্বল্প ব্যয়ে। যার ফলে ব্যাবসায়ীকভাবে সফলতার সহিত সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
উদ্যোক্তা ও খামারী মেহেদি হাসান বাবলু জানান, তার খামারে প্রায় তিন হাজার পোল্ট্রী মুরগি রয়েছে। তার খামারে করোনার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব অপর দিকে বাজারে মুরগির খাদ্যের দাম বাড়ায় তাকে লোকসান গুণতে হতো। তাই খামার নিয়ে শংকায় পড়েন তিনি। হঠাৎ করে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তিনি ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই সম্পর্কে জানতে পারেন। গত আট মাস আগে পার্শবর্তী জেলা গাইবান্ধা হতে তিনি এক কেজি ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাইয়ের লার্ভা সংগ্রহ করেন। তারপর তিনি এই সংগ্রহকৃত লার্ভা থেকে প্রজনন শুরু করেন।
ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই উৎপাদন সম্পর্কে তিনি বলেন, মশারির তৈরি এক প্রকার জালের ভেতরে মাছিগুলো থেকে একটি বিশেষ পদ্ধতিতে ডিম সংগ্রহ করতে হয়। ডিম সংগ্রহ করে তা ২ থেকে তিন দিনের মধ্যে হ্যাচিং করতে হয়। তারপর ডিম থেকে লার্ভা জন্ম নেয়ার পর ৮ থেকে ১০ দিনের মধ্যে তা পরিপূর্ণ হলে মাছ, মুরগির খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই পচনশীল যেকোন শাক, সবজি খায় তাই উৎপাদন খরচ খুবই কম।
তার দাবি মুরগিরাও এই লার্ভা খাচ্ছে তৃপ্তির সাথে, ফলে গ্রোথও আগের তুলনায় বাড়ছে তুলনামূলকহারে বেশি। তাই ফিডের চাইতে এখন খরচ কম হওয়ায় অধিক লাভের আশা করছেন তিনি। বর্তমানে তার খামারের তিন হাজার মুরগির খাদ্য চাহিদা পূরণ করেও তার যে লার্ভা হচ্ছে তাতে আরোও দশ হাজার মুরগির খাদ্য হিসেবে ব্যবহার যোগ্য বলে তার দাবি। ফলে বর্তমানে তার খামারের খাদ্যের ব্যায় ৭০ শতাংশ কম হচ্ছে।
প্রাথমিকভাবে ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাইয়ের লার্ভা মুরগির খাদ্যের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি মাছের খাদ্য হিসেবে খাওয়াচ্ছেন মৎসচাষী আলমগীর হোসেন। খাদ্যের দাম একাধিক হারে বৃদ্ধির ফলে তেমন লাভবান হতেন না তিনি। কিন্তু পুকুরে ফিডের পাশাপাশী এই বø্যাক সোলজার ফ্লাইয়ের লার্ভা মাছের খাদ্য হিসেবে খাওয়ানেরা ফলে তার খরচ কমেছে অর্ধেক।
পৃথিবীতে এক লক্ষ বিশ হাজারের অধিক জাতের মাছি আছে। তারমধ্যে কিছু প্রজাতির মাছি আছে জীবাণু বহনকারী, আবার কিছু প্রজাতির মাছি আছে, যারা জীবাণু বহন করে না। এই ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই মাছিটিও কোন জীবাণু বহন করে না বলে জানা যায়।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: মোঃ রায়হান জানান, ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই মূলত প্রোটিনের বিকল্প খাবার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এটি উৎপাদন খরচ কম খাবার মূল্য কমে যায়। যার ফলে অল্প খরচে খামারিরা লাভবান হতে পারবে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার জানান, ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই মূলত এক ধরনের মাছি, এই মাছির লার্ভা খাওয়ানোর ফলে, মানবদেহে কোন প্রভাব ফেলবে কিনা, তা সমন্বিত গবেষণার ফলাফল প্রাপ্তির পরেই মাছ বা মুরগীর খাদ্য হিসেবে সম্প্রসারণ সম্পর্কে জানা যাবে।