আকরাম হোসাইন, শেরপুর (বগুড়া) থেকে : পৌষের শুরুতেই বগুড়া শেরপুরসহ উত্তরাঞ্চলে জেঁকে বসেছে শীত। দিন দিন শীতের তীব্রতা বাড়ছে। বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় গত কয়েক দিনে শীতের তীব্রতায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। বিপাকে পড়েছেন ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষরা। বিশেষ করে সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকে চারদিক। সামনের সব কিছুই দেখা যায় ধোঁয়াশার মত। ঘন কুয়াশায় যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। সবচেয়ে দুর্ভোগে পড়েছে কৃষক, শ্রমজীবী-হত দরিদ্র ও ছিন্নমুল মানুষরা। শ্রমজীবীদের দূর্দশা চরমে। কাজে বের হতে পারছেন না অনেকেই। ক্ষেতে পঁচে যাচ্ছে রবি শস্য।
শীতের প্রকোপে দেখা দিয়েছে নানা রোগ। হাসপাতালে বেড়ে চলেছে শিশু ও বয়স্ক রোগী সংখ্যা। প্রচণ্ড শীত আর ঘন কুয়াশায় পঁচে যাচ্ছে শিম, লাউ, করলা, মিষ্টিকুমড়া, আলু, শাক-সবজিসহ বিভিন্ন রবি শস্য। ফসল রক্ষায় সার ও কীটনাশক ব্যবহার করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। ফলে কৃষকদের দিন কাটছে হতাশায়। শেরপুর উপজেলায় চলতি রবি মৌসুমে প্রায় ২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন শাকসবজির চাষ হয়েছে।
তবে কৃষি বিভাগ বলছে, বৈরী আবহাওয়ায় রবি ফসল রক্ষায় প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আর আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, জানুয়ারির শুরুতেই টানা শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়বে দেশ। এবার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চাহিদার চেয়েও বেশি রবি শস্য চাষ করেছে কৃষক। টানা বন্যার কারণে অন্য সময়ে সবজির বাজার ছিল চড়া। এ কারণে এবার সবজি চাষ করা হয় বেশি। কিন্তু মৌসুমের শুরুতেই তীব্র শীতের সঙ্গে ঘন কুয়াশায় কৃষকের স্বপ্নের ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নষ্ট ফসল ও পাতা পঁচা রোগ থেকে বাঁচাতে কয়েক দফা কীটনাশক প্রয়োগ করেও মিলছে না প্রতিকার।
গাড়িদহ ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামের সবজি চাষি জাহিদুল হতাশ কণ্ঠে বলেন, ‘পাঁচ বিঘা জমিতে বেগুন, কপি, শিম চাষ করেছি। ঘন কুয়াশা ও শীতে শীম গাছের পাতা লাল হয়ে পচে যাচ্ছে। কীটনাশক দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। গাছ বাঁচাতে না পারলে বিশাল আর্থিক ক্ষতি হয়ে যাবে।’
শীত আর ঘন কুয়াশার কারণে জমির ফসল নিয়ে একইভাবে চিন্তিত ওই গ্রামের পটল চাষি মিজানুর, বেগুন চাষি মেহের।
গাড়িদহ ইউনিয়নের কালসি মাটি, বাংড়া গ্রামের কৃষক মাহবুব, মোস্তফা জানান, গত মৌসুমে ভালো দাম পেয়ে এবারও বেশি জমিতে সবজি চাষ করেন কৃষক। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ায় দেখা দিয়েছে পচনজনিত রোগ। শেরপুরে সবজি চাষের পাশাপাশি উৎপাদন করা হয় সবজির চারা। নির্দিষ্ট অঞ্চল ছাড়াও উপজেলার অন্য এলাকাতেও কমবেশি সবজি চাষ হয়ে থাকে।
উপজেলার গাড়ীদহ ইউনিয়নের রামনগর, কালশিমাটি, শিবপুর ও বাংড়া গ্রামের কৃষকরা জানান, শীতকালীন সবজি আবাদে ফলন ভাল হয় এবং কৃষক লাভের মুখ দেখতে পারে এবার দামও ভাল পেয়েছি এখন আবহাওয়ার হেরফের হলে সবজির ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বাড়তি বৃষ্টি ও ঘন কুয়াশা হলে ফসলের ক্ষতি হয় আর এবার সেই ঝুঁকিতেই পড়ছে কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, আমরা সবসময় কৃষককে পরামর্শ দিচ্ছি। কৃষকদের কাছে মোবাইল নম্বর দেওয়া আছে। এ ছাড়াও আমরা কৃষকদের মধ্যে পরামর্শপত্রও বিতরণ করছি।