করোনাকালীন স্থবিরতা কেটে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মিলন মেলা বসে
গাজীপুর মহানগর প্রতিনিধি : দীর্ঘ প্রায় দুই বছর বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালীন স্থবিরতা কেটে টঙ্গী তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসায় গতকাল শনিবার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা বসে। বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের শ্রেষ্ঠ এ প্রতিষ্ঠানে শনিবার নবীন বরণকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রাণের উচ্ছাস লক্ষ্য করা গেছে।
এ দিন ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় আলিম প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে বরণ করা হয়। নবীন বরণ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ দিন পর মাদ্রাসা মিলনায়তন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মিলন মেলায় পরিণত হয়।
এ মাদ্রাসায় আলিম শ্রেণিতে (প্রথম বর্ষ) ভর্তি হওয়া দেড় সহস্রাধিক শিক্ষার্থী এ নবীন বরণ অনুষ্ঠানে অংশ নেয়।
মাদ্রাসা মিলনায়তনে অনুৃষ্ঠিত নবীন বরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তা’মীরুল মিল্লাত ট্রাস্ট্রের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা যাইনুল আবেদীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, পুঁথিগত কয়েকটা বই পড়লেই এলেম হবে না, গভীর জ্ঞানের অধিকারী হতে হবে। দ্বীনের গভীর জ্ঞান অর্জন করতে হবে। ওয়ারেসাতুল আম্বিয়া হিসেবে এমন এক দল লোক দরকার যাদের অন্তর হবে স্বচ্ছ। যেই অন্তরে কোন লোভ-লালসা-হিংসা, শয়তানের ধোকা, নফসের ধোকা থাকবে না। আর্টিফিশিয়াল কিছু থাকবে না, লোক দেখানো কিছু থাকবে না, মানুষকে খুশি করার কিছু থাকবে না। যা থাকবে সব আল্লাহকে খুশি করার জন্য। অন্তর থাকবে শুধু ইমানের নূরে আলোকিত। তা’মীরুল মিল্লাত মাদ্রাসা সেই লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল।
তিনি আফসোস করে বলেন, বিপদ মুছিবতে মানুষ আল্লাহর দিকে রুজু হয়। কিন্তু করোনা মহামারির মুছিবতে উল্টো আমাদের নৈতিকতার ধস নেমেছে। করোনা পরবর্তী সময়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক তথা সবার মধ্যে গাফলতি ও অলসতা সৃষ্টি হয়েছে। কেউ পরিশ্রম করতে রাজি নন। শিক্ষা লাভ করা যে কঠিন কাজ এই কাজটা কেউ করতে রাজি নন।
তিনি বলেন, যে পরিমাণ আল্লাহভীতি হওয়ার উচিত ছিলো, তাকওয়া আমাদের মাঝে হওয়া উচিত ছিলো, আল্লাহকে রাজি খুশ করার চেষ্টা করার উচিত ছিলো এবং সাহাবায়ে কেরাম যা করেছেন তার দ্বারে কাছেও আমরা নেই। বরং আগে যা ছিলে তার চেয়েও বেশি নৈতিকতার ধস নেমেছে।
তিনি বলেন, করোনায় অমুসলিমরা ও তাদের সরকার প্রধানরা বলেছিলো, এখন আমাদের আর কিছু করার নেই। তারা আকাশের দিকে আঙ্গুল ইশারা দিয়ে বলেছিলেন, যা হবে আকাশ থেকে হবে। অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে হবে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে হবে। কিন্তু আমরা মুসলমান যারা আছি তাদের এই অনুভ‚তি হয় নাই। অনুভুতি হয়েছে অমুসলমানদের। তারা অনেকে মসজিদে গিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনাও করেছে। আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করেছে, রুজু হয়েছে। কিন্তু মুসলমানদের তেমন অনুভুতি হয় নাই।
তিনি বলেন, নৈতিকতার অভাবের কারণে ধনী আরো ধনী হচ্ছে, গরীব আরো গবীব হচ্ছে। যেখানে আল্লাহর মাগফিরাতের জন্য প্রতিযোগিতা করার দরকার ছিলো, সেই প্রতিযোগিতা এখন দুনিয়ার ফাস্ট-সেকেন্ড-থার্ড হওয়ার জন্য হচ্ছে।
মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা মো. মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শ্রেণিশিক্ষক ও নবীন-প্রবীন শিক্ষার্থীরা বক্তব্য দেন। মাঝে বিরতি নিয়ে সুললিত কাণ্ঠে একক ও দলীয় সংগিত পরিবেশ অনুষ্ঠানে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি করে।