বসতঘরের সামনে মা ভাইয়ের সাথে ইকবাল (বামে) পুরস্কার হাতে ইকবাল (ডানে)। ছবি: প্রতিনিধি

শেখ মোহাম্মদ আলী, সুন্দরবন অঞ্চল প্রতিনিধি : বাংলাদেশ শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলের ওপেনিং ব্যাটসম্যান ইকবাল হোসেন খান ও তার পরিবার এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অর্থাভাবে বিধবা মা ও প্রতিবন্ধী ভাইকে নিয়ে অর্ধাহার ও অনাহারে দিন কাটছে তার। সং¯কার করতে পারেননি ঘূর্ণীঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত বসতঘর। দেশ-বিদেশে খেলেছেন তিনি একাধিক আর্ন্তজাতিক ম্যাচ।

বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার মধ্যকালিকাবাড়ি গ্রামের ইয়াছিন খানের ছেলে বাংলাদেশ শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলের ওপেনিং ব্যাটসম্যান ইকবাল হোসেন বলেন, মাত্র দেড় বছর বয়সে পোলিও টিকা দেওয়ার ফলে তিনি পক্ষাঘাতগ্রস্ত (প্যারালাইজড) হয়ে পড়েন। কয়েক বছর পরে কিছুটা সুস্থ্য হলেও বাম পায়ের শক্তি কমে যায়।

বয়স বাড়ার সাথে সাথে ইকবালের বাম-পায়ের উরু থেকে পাতা পর্যন্ত চিকন হতে থাকে। এর ফলে স্বাভাবিক চলাফেরা করতে না পারলেও ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসা থেকে অদম্য মনোবল নিয়ে গ্রামের ছেলেদের সঙ্গে ব্যাট হাতে মাঠে নামেন তিনি। দিন যতো গড়ায় পরিবারের কাছে বোঝা হয়ে ওঠে প্রতিবন্ধী ইকবাল খান।

পরিবারে স্বচ্ছলতা আনতে খুলনার একটি হোটেলে কাজ নেয় ইকবাল।এর মধ্যেই বাংলাদেশ শারিরীক প্রতিবন্ধী ক্রিকেট টিমে চান্স হয় ইকবালের। ৪-৫ বছরে দেশে-বিদেশে একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলে দেশের জন্য বয়ে এনেছেন সুনাম নিজেও পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার ।

জাতীয় দলে খেললেও পরিবারের আর্থিক কষ্ট দূর হয়নি ইকবালের। খেলার পাশাপাশি খুলনার একটি খাবার হোটেলে কাজ করে মা ও মানসিক প্রতিবন্ধী ছোট ভাইয়ের ভরন পোষনের ব্যবস্থা করতেন তিনি। কিন্তু করোনাকালীন সময়ে টুর্নামেন্ট বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে তার আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যায়। খেলায় মনোযোগ দেওয়ার পরে তার হোটেলের কাজ চলে যায়। টাকার অভাবে ঘূর্ণীঝড় সিডর আইলায় ক্ষতিগ্রস্ত বসত ঘর সংস্কার করাতে পারেননি। ভাঙা ঘরে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে বসবাস করেন তারা।

ইকবাল হোসেনের মা মোমেনা বেগম বলেন, ২০০২ সালে স্বামী মারা যাওয়ার পরে চার মেয়ে ও প্রতিবন্ধী দুই ছেলেকে নিয়ে সংগ্রাম শুরু করি। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাতে থাকি। কোনমতে চার মেয়েকে বিয়ে দেই। বড় ছেলে ইকবাল যখন প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলে খেলা শুরু করে তখন ভেবেছিলাম, আমাদের সংসারে স্বচ্ছলতা আসবে। কিন্তু আজ ৪-৫ বছর ধরে খেলছে, কিন্তু ভাঙা ঘর ভাঙাই রয়েছে। খাবার জোটে না তিন বেলা।

বাগেরহাট জেলা ক্রীড়া সংস্থার কোষাধ্যক্ষ সরদার ওমর ফারুক বলেন, বাগেরহাটের একজন প্রতিবন্ধী খেলোয়াড় জাতীয় দলে খেলছে এজন্য আমরা গর্বিত। ইকবাল হোসেনের আর্থিক স্বচ্ছলতার জন্য জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও বিসিবির সঙ্গে যোগাযোগ করব।

মোরেলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শাহ-ই-আলম বাচ্চু বলেন, করোনাকালীন সময়ে ইকবালের পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ইকবালের পরিবারকে আরও সহযোগিতা করার চেষ্টা চলছে।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ও প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতার আশায় বুক বেধে আছেন ইকবাল।