আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর (মানিকগঞ্জ) : নিজের হাতে কেক কেটে শততম জন্মদিন পালন করলেন তিনি। ৭ সন্তান, অর্ধশত নাতি-পুতি আর আত্মীয়-স্বজন নিয়ে বেশ ঘটা করেই রোববার সন্ধ্যায় পালন করা হলো মানিকগঞ্জের ঘিওরের জাবরা গ্রামের হামিদা বেগম নামের অতি প্রবীণ এক নারীর শততম জন্মদিন।
কেক কেটে আর মিষ্টি বিতরণ করে ১০১ বছরে পা রাখলেন তিনি। শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় পালিত জন্মদিন পালনের সময় আনন্দ এবং আপ্লুত অশ্রু ছিল চোখে পড়ার মতো।
জন্মদিনে এত স্বজন আর নাতী পুতিদের দেখে উচ্ছসিত হামিদা বেগম। এখনো হাঁটাচলা আর কথাবার্তায় তিনি স্বাচ্ছন্দময়। কেক কাটার সময় তার হাস্যোজ্জল চেহারায় ফুটে ওঠে যেন এক কিশোরীর প্রতিচ্ছবি।
জন্মদিন পালন উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছেলে, মেয়ে ও তাদের স্বামী, নাতি-নাতিন, তাদের সন্তান এবং আত্মীয় স্বজন, শুভাকাঙ্খিদের এক মিলন মেলায় পরিনত হয়। ঘন ঘন মোবাইলের ক্লিকে স্মৃতি স্মরণে রাখার প্রত্যয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন সবাই।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, হামিদা বেগমের পিতা হরিরামপুর উপজেলার যাত্রাপুর গ্রামের মাজেম আলী খান কোলকাতায় মুদ্রণ ব্যবসায়ী ছিলেন। পিতার কর্মস্থল কোলকাতায় হামিদা বেগমের জন্ম ১৯২২ সালের ৬ ই নভেম্বর। ১৯৩৬ সালে ১৪ বছর বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন পাশ্ববর্তী ইব্রাহীমপুর গ্রামের বাসিন্দা (তৎকালীন সেনা বাহিনীর চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত) আক্তার উদ্দিন আহমেদের সাথে। তাদের ঘর আলো করে আসে পাঁচ ছেলে আর দুই মেয়ে।
পদ্মা নদীতে বসতবাড়ি ভেঙে যাবার পর হরিরামপুর থেকে ঘিওরের জাবরা গ্রামে আবাস গড়েন। ১৯৫৭ সালে মারা যায় পিতা মাজেম আলী, মা জবেদা খাতুন মারা যান ২০০০ সালে। হামিদার ২০ বছরের একমাত্র ছোট ভাই লিয়াকত আলী খানও মারা যান ২০১৮ সালে। তার স্বামী আক্তার উদ্দিন আহমেদ ৭১ পরবর্তীতে খুন হোন স্বাধীনতা বিরোধীদের গুলিতে। পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন হামিদা বেগম। তাই লেখাপড়ার গুরুত্ব তিনি বুঝতেন, নিজের সন্তানদের পাশাপাশি এলাকার অবহেলিত নারী শিক্ষার দিকে তিনি বরাবরই ছিলেন সোচ্চার। অনেক কষ্ট আর ত্যাগ তিতিক্ষার পর সন্তানদের বড় করে তোলেন। তারা আজ সবাই স্ব স্ব ক্ষেত্রে সাবলম্বী।
সেজো ছেলে আশরাফ উদ্দিনের সঙ্গে হামিদা বেগম
হামিদা বেগমের বড় ছেলে মুক্তার উদ্দিন আহমেদ (৭৮) বলেন, আল্লাহর অশেষ রহমত। আমার মা বেঁচে আছেন। এখনো বাড়িতে ঢুকে মাকে ডাক দেই। মা আমাদের খোঁজ নেয়। একসাথে বসে খাবার খাই। এ এক অন্যরকম অনূভূতি।
হামিদা বেগমের নাতী দেশের জনপ্রিয় চিত্র পরিচালক শামীম আহমেদ রনি বলেন, আমার দাদী একশো বছর অতিক্রম করলো। সবাইকে গর্ব ভরে বলে থাকি। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা আমাদের মুরুব্বীর দীর্ঘায়ু দান করেন। যেন আমাদের মাঝে আরো আনন্দ অঅর ভালবাসা ছড়াতে পারেন।
হামিদা বেগমের নাতিন মুক্তা আক্তারের ছেলে (চতুর্থ প্রজন্ম) নবম শ্রেণীর ছাত্র জয় বলে, আমার বড় মার জন্মদিন। অনেক আনন্দ করেছি। ছবি তুলে রেখেছি।
জীবনের নানা বাঁক আর চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ১০০ বছর অতিক্রম করা হামিদা বেগমের স্বপ্ন আল্লায় যতদিন বাঁচিয়ে রাখে, আমাকে যেন সুস্থ ভাবেই বাঁচিয়ে রাখেন।