ক্যাম্পকেন্দ্রীক জঙ্গি তৎপরতা

হুমায়ুন কবির জুশান, কক্সবাজার : উগ্রবাদ সন্ত্রাসী ও জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আস্তানা থেকে নব্য জঙ্গি সংগঠন জামায়তুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার শীর্ষ নেতা শুরা সদস্য ও সামরিক শাখার প্রধান রনবীর ও তার সহযোগী বোমা বিশেষজ্ঞ বাশারকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করে কক্সবাজার র‌্যাব-১৫। এতে কিছুটা হলেও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে সাধারণ রোহিঙ্গাসহ স্থানীয়রা।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে আরসা ও নবী হোসেন গ্রুপসহ একাধিক সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রীয় রয়েছে। উগ্রবাদ ও জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে আটটি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশ সরকার। এর মধ্যে হিযবুত তাহরীর অন্যতম। এই সংগঠনটিকে ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবরনিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে নিষিদ্ধ ঘোষণার পরও আড়ালে থেকে উগ্রবাদী কার্যক্রম ও প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে সংগঠনটি।

এই সংগঠনের কিছু সদস্য সুকৌশলে উখিয়া কক্সবাজারে অবস্থান করে ক্যাম্প ভিত্তিক বিভিন্ন এনজিওতে চাকরির সুবাদে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবক জানান, সেবা কার্যক্রমের আড়ালে হিযবুত তাহরীর বেশ কিছু সদস্য উখিয়া-টেকনাফ ও কক্সবাজারে অতি গোপনে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এই সংগঠনের বেশ কিছু সদস্য ২০২০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বিকালে অনলাইনে সমাবেশ করেন। ওই ঘটনার পর পলাতকদের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলার পর তারা বিভিন্ন অজ্ঞাত স্থানে আত্মগোপনে চলে যান।

হিযবুত তাহরীর সদস্যরা ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠাসহ সাধারণ জনগণকে তাদের সংগঠনের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে সেবার মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও দাবি এই যুবকের।

এদিকে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) প্রধান আতাউল্লাহ জুনুনিসহ তার সংগঠনের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ধরিয়ে দিতে পোস্টার লাগানো হয়েছে। বার্মিজ ভাষায় এসব পোস্টার লাগানো হয়। তবে কারা এ সব পোস্টার লাগিয়েছে তার কোনো তথ্য জানাতে পারেনি কেউ।

৮ এপিবিএনের সহকারী পুলিশ সুপার (মিডিয়া) ফারুখ আহমেদ বলেন, বিভিন্ন ক্যাম্পে পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। পোস্টারে থাকা নামগুলোর সবাই সন্ত্রাসী। তারা একাধিক মামলার পলাতক আসামি। আমরাসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের খুঁজছে। ক্যাম্পের বিভিন্ন স্থানে আমাদের নজরদারি রয়েছে। গোয়েন্দা তৎপরতাও বাড়ানো হয়েছে।

সাধারণ রোহিঙ্গারা জানান, রোহিঙ্গাদের স্বাধীকার আদায়ে নয় বরং মাদক ব্যবসা এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে সশস্ত্র মহড়া চালাচ্ছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। একই সঙ্গে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে ব্যবহার করছে অত্যাধুনিক অস্ত্র। জিরো পয়েন্ট ক্যাম্পে মজুত করছে গ্রেনেট, রকেট লাঞ্চারসহ ভারী অস্ত্র।

এ ছাড়া আইশৃঙ্খলা বাহিনীর গতিবিধির ওপর নজর রাখতে ব্যবহার করছে ওয়াকিটকি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হোয়াটস অ্যাপ, ম্যাসেঞ্জার, ইমুসহ বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করছে তারা। অনেকে আবার মিয়ানমারের মোবাইল নেটওয়ার্ক কাজে লাগাচ্ছে। বর্তমানে ক্যাম্পজুড়ে রাজত্ব করছে আরসা ও নবী হোসেন গ্রুপ। আর ক্যাম্পে রয়েছে তাদের উপগ্রুপ।

মূলত ইয়াবা ব্যবসাকে ঘিরেই খুনের মহড়া চলে তাদের মাঝে। তাদের উগ্রতা ক্যাম্প ছাড়িয়ে প্রভাব পড়ছে স্থানীয়দের মাঝেও।

আইশৃঙ্খলা বাহিনীর দেয়া তথ্যমতে, চার মাসে উখিয়ার একাধিক রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরসার সঙ্গে নবী হোসেন বাহিনীর একাধিক সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ২৩ রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১০ রোহিঙ্গা মাঝি এবং পাঁচজন আরসার সদস্য।