খোলাবার্তা২৪ ডেস্ক : অপরূপ সৌন্দর্যের এক গ্রাম। গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যে কারো মন কাড়বে। চারদিকে সবুজের সমারোহ। ওই এলাকায় দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে রয়েছে ডোয়াং নদী, নাগাল্যান্ড বিজ্ঞান কেন্দ্র, হংকং মার্কেট, শিলোই লেক। অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে এই গ্রামে অনেক পর্যটকই যেতে চান।
ভারতের নাগাল্যান্ডের মন জেলার অন্যতম বড় একটি গ্রাম। এই গ্রামের কয়েকটি বাড়ির মধ্যে দিয়ে গিয়েছে আন্তর্জাতিক সীমান্ত। এই গ্রামের বাসিন্দারা দুই দেশেরই নাগরিকত্ব পান। ভারত ও মিয়ানমার।
একই বাড়িতে থেকে রান্না-খাওয়া এক দেশে। আর ঘুমোতে যেতে হয় অন্য দেশে। অথচ আপনাকে কষ্ট করে কোথাও যেতেই হল না। হ্যাঁ, এমন বিচিত্র অভিজ্ঞতারই মুখোমুখি হতে হলে আপনাকে যেতে হবে মিয়ানমার সীমান্তে ভারতের নাগাল্যান্ডের মন জেলার শেষ গ্রাম লংওয়াতে।
ভারতের নাগাল্যান্ডের মন জেলার অন্যতম বড় গ্রাম হল লংওয়া। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মোড়া এই গ্রাম ঘিরে জনমানসে আগ্রহের সীমা নেই। এই গ্রামের বুক চিরেই গিয়েছে ভারত ও মায়ানমারের মধ্যে আন্তর্জাতিক সীমান্ত। অর্থাৎ, গ্রামের এক দিকটি ভারতের, অপর প্রান্তটি মিয়ানমারের।
এই গ্রামের বাসিন্দা দুই দেশেরই নাগরিকত্ব পান। এমনকি, এক দেশ থেকে অন্য দেশে গেলে ভিসা লাগে। কিন্তু এই গ্রামের ক্ষেত্রে তার কোনও দরকার পড়ে না।
এক দেশ থেকে সীমান্ত পেরিয়ে অন্য দেশে যাতায়াতে অনেক বিধিনিষেধ থাকে। তবে এই গ্রামের ক্ষেত্রে তেমন কোনও বাধা নেই। অনায়াসে যখন খুশি ওই গ্রামের বাসিন্দারা সীমান্ত পেরিয়ে অবাধে যাতায়াত করতে পারেন।
এই গ্রামের প্রধান যিনি, তার বাড়ির মধ্যে দিয়েই গিয়েছে আন্তর্জাতিক সীমানা। বলা হয়ে থাকে, গ্রামের প্রধান যে ঘরে খান, সেটি ভারতের মধ্যে পড়ে। আর যে ঘরে ঘুমোন, সেটি মিয়ানমারের মধ্যে!
শুধু গ্রামের প্রধানই নন। গ্রামবাসী অনেকের বাড়ির মধ্যে দিয়েও গিয়েছে আন্তর্জাতিক সীমান্ত। যার জেরে তাদের রান্নাঘর এক দেশে। আর শোওয়ার ঘর অন্য দেশে পড়েছে।
এই গ্রামের প্রধানকে বলা হয় ‘অ্যাং’। ৭০টিরও বেশি গ্রামের রাজ্যপাট সামলান তিনি। তার স্ত্রী ৬০ জন। মিয়ানমার ও অরুণাচলপ্রদেশে ৭০টিরও বেশি গ্রামে তাঁদের আধিপত্য রয়েছে।
লংওয়া হল বিখ্যাত কোনিয়াক উপজাতির বাস। বর্তমানে এই উপজাতির অধিকাংশ মানুষ থাকেন মিয়ানমারে।
অতীতে এই উপজাতির বাসিন্দাদের নিয়ে রীতিমতো আতঙ্ক ছিল এলাকায়। জমি দখলের জন্য আশপাশের গ্রামের বাসিন্দাদের উপর তারা আক্রমণ চালাতেন। শত্রুদের শিরশ্ছেদ করতেন তারা।
এই গ্রামে উপজাতির বাসিন্দাদের বাড়ি সাধারণত রয়েছে পাহাড়ের উপর। যাতে তারা সহজেই উপর থেকে শত্রুদের উপর নজর রাখতেন। ১৯৪০ সালে শিরশ্ছেদ করার প্রথা নিষিদ্ধ করা হয়।
শুত্রুদের শিরশ্ছেদের পর তাদের মাথার খুলি সংগ্রহ করতেন ওই উপজাতির মানুষরা। তারা বিশ্বাস করতেন যে, মাথার খুলি সংগ্রহ করলে চাষের জমি উর্বর হয়।
এই উপজাতির মানুষদের শরীরে নানা ধরনের উল্কি আঁকা থাকে। নিজেদের ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন ধরনের গয়না পরেন তারা।
উপজাতির মানুষদের ঘরও সাজানো হয় মাথার খুলি দিয়ে। এ ছাড়াও হাতির দাঁত দেখা যায় ঘরগুলিতে।
লংওয়া গ্রামে রয়েছে অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। চারদিকে সবুজের সমারোহ। ওই এলাকায় দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে রয়েছে ডোয়াং নদী, নাগাল্যান্ড বিজ্ঞান কেন্দ্র, হংকং মার্কেট, শিলোই লেক।
এই গ্রামে এখন পরিবহণ ব্যবস্থা আরো উন্নত হয়েছে। রাস্তাও ঝকঝকে। নাগাল্যান্ড রাজ্য পরিবহণ কর্তৃপক্ষের বাসে করে মন এলাকায় পৌঁছনোর পর ভাড়া গাড়ি নিয়ে সহজেই ওই গ্রামে পৌঁছতে পারবেন।
সবুজে ঘেরা নির্মল পরিবেশের ওই গ্রামে ঘুরতে যাওয়ার সবচেয়ে ভাল সময় হল অক্টোবর থেকে মার্চ। এই সময় নাগাল্যান্ডে নানা উৎসব ও মেলার আয়োজন করা হয়।
ইতিহাস বলছে, ১৯৬০-এর দশক পর্যন্ত গ্রামে ‘হেড হান্টিং’ জনপ্রিয় অনুশীলন ছিল। গ্রামের অনেক পরিবারে এখনও পিতলের খুলির মালা দেখতে পাওয়া যায়। এই মালা গ্রামবাসী খুব বিশ্বাস করে। যুদ্ধে প্রতিপক্ষকে পরাজিত করে নিজের জয়ের প্রতীক হিসাবে বিবেচিত হয় এই ধরনের প্রতীক।
অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে অনেকেই এই গ্রামে অনেক পর্যটকই যেতে চান। এই গ্রামটি মন শহর থেকে প্রায় ৪২ কিমি দূরে অবস্থিত।