ছবি: ইন্টারনেট

খোলাবার্তা২৪ ডেস্ক : রাজনীতির মাঠে এখন আর রাজনীতিবিদরা নেই। রাজনীতির মাঠে খেলছেন আমলারা আর রাজনীতিবিদরা লাইনে বসে খেলা দেখছেন। গতকাল বনানীতে পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী দেশের মালিক হচ্ছেন জনগণ। তাদের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই দেশ পরিচালনা করার কথা। কিন্তু কাজ-কর্মে এমপি সাহেবদের খবরই নেই, আর সচিব সাহেবরা সব কাজ করেন মন্ত্রীরা শুধু জানতে চান।

রোববার জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে দলটির খুলনা বিভাগ আয়োজিত পোস্টার ও ক্যালেন্ডার বিতরণ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জিএম কাদের এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, জনপ্রতিনিধিরাই জনগণের দুঃখ-কষ্ট সবচেয়ে ভালো বোঝেন। তারাই জনগণের বেশি উপকার করতে পারেন। আবার আমলারা হচ্ছে রোবটের মতো, তারা একটি গণ্ডির ভেতরে কাজ করতে অভ্যস্ত। আমলারা রাজনীতিবিদদের মতো সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট বোঝেন না। তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মূল্য দিন। জনপ্রতিনিধিরা সুযোগ পেলে দেশের মানুষের অনেক বেশি উপকার হবে। জনপ্রতিনিধিদের উপেক্ষা করে আমলাদের দিয়ে দেশ পরিচালনা কখনোই মঙ্গলজনক হবে না।

জিএম কাদের বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সাধারণ মানুষের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দিয়ে দেশ পরিচালনা করেছেন। তখন উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের অধীনে আমলারা কাজ করেছেন। জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশনায় কাজ করেছেন আমলারা। এখন উল্টে গেছে সব। উপজেলা চেয়ারম্যান হচ্ছেন ‘চেয়ারম্যান’ মানে চেয়ারে বসে থাকবেন। আর উপজেলা পরিষদ চালাচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কথা ইউএনও সাহেব শুনলে ভালো, না শুনলে কিছুই করার নেই। জনপ্রতিনিধিরা যদি দেশ পরিচালনা করতে না পারে, তা সংবিধান পরিপন্থী হবে। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টিকে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে তৈরি করা হবে। জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের সম্মান করবে দেশের জনসাধারণ।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ১৯৯১ সালের পর থেকে জাতীয় পার্টিকে ধ্বংস করতে অনেক ষড়যন্ত্র করেছে। জাতীয় পার্টিকে অনেক দুর্বল করেছে। কিন্তু পল্লীবন্ধুর প্রতি মানুষের ভালোবাসা আর জাতীয় পার্টির প্রতি গভীর আস্থার কারণে আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। দেশের মানুষ দুটি রাজনৈতিক দলের দুঃশাসন থেকে মুক্তি পেতে চায়। জনসাধারণ চায় জাতীয় পার্টির রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পাক। কারণ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শাসনামলের চেয়ে জাতীয় পার্টির শাসনামলে তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি সুশাসন ছিল। আর এ কারণেই জাতীয় পার্টি দেশের সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় রাজনৈতিক শক্তি।

জাতীয় পার্টির খুলনা বিভাগীয় অতিরিক্ত মহাসচিব সাহিদুর রহমান টেপার সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় দলটির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, এখনও চলন্ত বাসে নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। নারী ও শিশু নির্যাতন অনেক দিন ধরেই চলছে। এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।

তিনি বলেন, করোনার প্রকোপ বাড়ছে কিন্তু সাধারণ মানুষের জন্য কোনো চিকিৎসা নেই। সংবিধান স্বীকৃত অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে মানুষ। প্রচণ্ড শীতে একটি কম্বলের জন্য মানুষের মাঝে হাহাকার উঠেছে। আবার কেউ কেউ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে। বৈষম্যের জন্য মুক্তিযোদ্ধারা জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করেননি। যারা দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে তাদের পরিচয় প্রকাশ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান জাতীয় পার্টির মহাসচিব। তিনি বলেন, দুর্নীতি, দুঃশাসন, অন্যায়, অবিচার, বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও অপসংস্কৃতি বন্ধ করে পল্লীবন্ধুর স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়তেই জাতীয় পার্টির রাজনীতি।

জাতীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা, সুনীল শুভরায়, আবদুস সাত্তার মিয়া, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা শেরিফা কাদের, মাহমুদুর রহমান মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, যুগ্ম মহাসচিব শেখ মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন মঞ্জু, হুমায়ুন খান, জহিরুল হক জহির, সাইফুদ্দিন খালেদ, সম্পাদমণ্ডলীর সদস্য সুলতান মাহমুদ, এমএ রাজ্জাক খান, সুমন আশরাফ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।