মিজানুর রহমান মিজান, রংপুর অফিস : তিন দফায় ৫০ লাখ টাকা নগদ প্রদান ১৭ ভড়ি সোনার অলংকারসহ প্রায় ৭০ লাখ টাকা যৌতুক দেবার পরেও রংপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ইউনিট কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসাদ্দেক হোসেন বাবলুর ভাতিজি মাইশা মোজাহিদের কাছে আরো ২৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে না পাওয়ায় চলন্ত গাড়ি থেকে দুই শিশু সন্তানসহ ফেলে দিয়েছে পাষন্ড স্বামী। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এই অমানবিক ঘটনাটি ঘটেছে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হাজিপাড়া এলাকায়। এ ঘটনায় নির্যাতনকারী পাষন্ড স্বামী সুমনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এ ঘটনায় নির্যাতিতা নারী মায়িশা মোজাহিদ তন্নী বাদী হয়ে রংপুর মেট্রোপলিটান কোতয়ালী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেছে। তবে পুলিশ অন্যান্য আসামীদের এখনো গ্রেফতার করেনি বলে অভিযোগ স্বজনদের।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, পাঁচ বছর আগে ১৯৯৬ সালে রংপুর নগরীর শালবন মহল্লার বীরমুক্তিযোদ্ধা মোসাদ্দেক হোসেন বাবলুর ছোট ভাই মোজাহেদ হোসেন ফুলুর মেয়ে মায়িশা মোজাহিদ তন্নীর সাথে কাউনিয়া থানার হারাগাছ হাজিপাড়া এলাকার মাহমুদার রহমানের ছেলে মতিউল হাসান সুমনের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় ছেলে ও তার স্বজনদের অনুরোধে মেয়ের সুখের জন্য নগদ দশ লাখ টাকা ১৭ ভড়ি সোনার গহনাসহ প্রায় ২৮ লাখ টাকার মালামাল ও অর্থ প্রদান করা হয়।
বিয়ের কিছুদিন পর মায়িশা জানতে পারে তার স্বামী সুমন রংপুরের তারাগজ্ঞ উপজেলায় একটি বিয়ে করেছিলো যৌতুক সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সেই বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটে। এত কিছু জানার পরেও মায়িশা স্বামীর সাথে ঘর সংসার করতে থাকে। এ সময় তাদের দু’টি কন্যা সন্তান জন্ম লাভ করে। তাদের বয়স যথাক্রমে চার বছর ও দেড় বছর।
এদিকে তার স্বামী মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে তার প্রতিদিন মাদক সেবন করতে ৫/৭ হাজার টাকা লাগে। প্রথম দিকে তার বাবা মা এ মাদক কেনার টাকা টাকা প্রদান করলেও হঠাৎ করে টাকা দেয়া বন্ধ করে দেয়। এরপরেই শুরু হয় স্বামী সুমনের মায়িশার উপর নির্যাতন সে বাবার বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে আসার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। রাজি না হওয়ায় তাকে মারধর করে।
বিষয়টি মায়িশা তার বাবা-মাকে জানালে তার বাবা মেয়ের সুখের কথা ভেবে আবারো দশ লাখ টাকা প্রদান করে। এ টাকা শেষ হওেয় গেলে আবারো ২৫ লাখ টাকা যৌতুক হিসেবে বাবার বাড়ি থেকে আনার জন্য এক মাস আগে মারধর করে বাসা থেকে দুই শিশু সন্তানসহ বের করে দেয়। মায়িশা বাবার বাড়িতে চলে আসে।
এর মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবলু তার ছোট ভাই সহ স্বজনরা দুই শিশু সন্তানের কথা ভেবে সংসার করার জন্য আবারো ছেলে সুমন ও তার বাবা সহ স্বজনদের বাড়িতে দাওয়াত দিয়ে গত ২৪ মে বাসায় ডেকে আনে।
সেখানে আলোচনা করার পর আবারো ছেলে সুমনকে বার লাখ টাকা প্রদান করে। তার পর মায়িশা তার দুই শিশু সন্তান ও স্বামী সুমন শশুড় মাহমুদার রহমান প্রাইভেট কারে করে গাড়িতে তুলে দেয়। কিছুদূর যাবার পর যৌতুকলোভি সুমন কেন তার দাবি করা ২৫ লাখ দেয়া হলো না একথা বলে গাড়ির ভেতরেই আবারো মায়িশাকে মারধর করে। এক পর্যায়ে গাড়ির ভেতরে ইলেকট্রিক তার গলায় পেঁচিয়ে শ্বাস রোধ করে হত্যার চেষ্টা করে। এ সময় তার আত্মচিৎকারে লোজন এগিয়ে এলে চলন্ত গাড়ি থেকে সুমন তার স্ত্রী মায়িশা ও দুই শিশু সন্তানকে ফেলে দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে যায়।
গুরতর আহত অবস্থায় মায়িশাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধিন অবস্থা থেকে সুস্থ হবার পর মায়িশা নিজেই বাদী হয়ে গত ২৭ মে তিন জনকে আসামী করে মেট্রোপলিটান কোতয়ালী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করে। যার মামলা নম্বর ৫৭।
এ ঘটনায় পুলিশ পাষন্ড স্বামী সুমনকে গ্রেফতার করে আদালতে চালান দিলে বিজ্ঞ বিচারক তার জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। মামলা করার পর তার স্বজনরা মামলা তুলে নেবার জন্য নানানভাবে হুমকি প্রদান করছে, ফলে মায়িশা চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
এ ব্যাপারে মায়িশার বাবা মোজাহিদ হোসেন ফুলু খোলাবার্তা টোয়েন্টিফোর কে বলেন মেয়ের সুখের জন্য ৫০ লাখ টাকা দিয়েও নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করতে পারলামনা তিনি ঘটনার দায়িদের বিচার ও দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি করেন।
এদিকে রংপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসাদ্দেক হোসেন বাবলু খোলাবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আমরা ভাজিজির সংসার সুখের জন্য ৫০ লাখ টাকা দিয়েছি কিন্তু ছেলে যে মাদক সেবী আর যৌতুক লোভি তা জানতামনা আমরা মামলা দায়ের করেছি ন্যায় বিচারের জন্য আশা করি ন্যায় বিচার পাবো।
এ ব্যাপারে কোতয়ালী থানার ভারপ্রপ্ত কর্মকর্ত আব্দুর রশিদ খোলাবার্তা টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতার করার চেষ্টা করছি এটা চরম অমানবিক ঘটনা।