মিজানুর রহমান মিজান, রংপুর অফিস : রংপুরের ফুলচাষীদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে ফেব্রুয়ারি। নানা ফুলের সমারোহে বর্ণিল হয়ে উঠেছে রংপুরের কয়েকটি এলাকা। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাস ঘিরে ব্যবসার ছক করেন এই জেলার ফুলচাষিরা।

১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস আর ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এই দুই দিনকে ঘিরে সারাদেশের অন্যান্য স্থানের মতো রংপুরেও প্রচুর ফুল চাষ হয়েছে।

জেলায় দিন দিন ফুল চাষে আগ্রহও বাড়ছে। এবার রংপুরের ফুলচাষিরা ভালো লাভের আশা করছেন। এখান থেকে ফুল শুধু রংপুরে নয় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়ও পাঠানো শুরু হয়েছে বলে জানান ফুল চাষীরা।

জেলার লাহিড়ির হাট, বড় দারগা, বালাটারী, তামপাট, খাসবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের চাষ হচ্ছে।

চাষিদের এখন বাগানে ফুল গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে।

বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) জেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় ফুলের বিচিত্র সমারোহ। বিস্তীর্ণ জমিতে শুধু ফুল আর ফুল। ফুটে আছে গাঁদা, জারবেরা, জিপসি, গ্লাডিওলাস, কামিনী, বেলি, জবা, গন্ধরাজসহ বিভিন্ন রঙের প্রায় ২০ প্রজাতির ফুল। এসব এলাকায় সকাল থেকে ফুল বাগান দেখতে ভিড় জমান বিভিন্ন এলাকার দর্শনার্থীরা।

লাহিড়ির হাট এলাকার ফুলচাষি শহিদুল ইসলাম বলেন, তিনি এবার সাড়ে চার একর জমিতে বিভিন্ন জাতের ফুলের চাষ করেছেন। এ বছর ফুলের উৎপাদন গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম হয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, “যেহেতু এবার শীত বেশি সেহেতু ফুল কম হবে। আবার হঠাৎ দুইদিনের বৃষ্টি আর বাতাস; যার কারণে কিছু ফুল নষ্ট হয়ে গেছে।

তবে কোনো ধরনের দুর্যোগ না হলে ভালো দাম পাবেন; এবং প্রায় ২০ লাখ টাকার ফুল বিক্রি করার প্রত্যাশা তার। গত বছর করোনার কারণে অনেক ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি। এবার সেই লোকসান কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেয়ার আশা এই কৃষকের।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুরের উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান বলেন, রংপুর জেলার চার উপজেলায় ৪৫ বিঘা জমিতে কৃষকরা নিজ উদ্যেগে বিভিন্ন জাতের ফুলের চাষ করছেন।

এবার কৃষকদের কথা অনুযায়ী চাষাবাদ গত বছরগুলোর তুলনায় কিছুটা কম হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তবে ফুলের বাজারে তো দাম উঠানামা করে। আর ফেব্রুয়ারিতে ফুলের ভালো দাম পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই হিসাবে ভালো ব্যবসা হবে বলে আশা এই কর্মকর্তার।

বালাটারী এলাকার ফুলচাষি আনিসুল ইসলাম বলেন, এবার ফুলের সব বাগান হয়তো ১৪ ফেব্রুয়ারির বাজার ধরতে পারবে না; কারণ অনেক ফুল এখনও পরিপক্ব হয়নি। তবে ২১ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী টার্গেট রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “চাষাবাদ আরেকটু আগে শুরু করতে পারলে এবার পুরোপুরি টার্গেট সম্পন্ন হতো ব্যবসায়ীদের।

তিনি এবার দুই একর জমিতে ফুল চাষ করেছেন; তার বাগানে লাল, সাদা গোলাপ, গাঁদা, জিপসি, গ্লাডিওলাস ফুটছে বলে জানান তিনি।

কদম তলা এলাকার ফুলচাষি মামুন মিয়া বলেন, এবার ভালো ফলন পেয়েছি। ফুলের বাগানগুলো এখন ফুলে ফুলে ভরা, ছড়াচ্ছে সুবাস। আমাদের সঙ্গে ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যে যোগাযোগ শুরু করেছেন। অনেক চাষি বাগানসহ ফুল বিক্রি করে ফেলেছেন।

আজকালের মধ্যেই ব্যবসায়ীরা ফুল নিয়ে যাওয়া শুরু করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, এবার পুরো জেলায় সব মিলিয়ে অর্ধ কোটি টাকার ব্যবসা হবে বলে প্রত্যাশা। তবে অনেক বাগান এবার হয়তো ১৪ ফেব্রুয়ারির বাজার ধরতে পারবে না। কারণ অনেকে চাষাবাদ দেরিতে শুরু করেছেন।

আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র রংপুরের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আশিষ কুমার সাহা জানান, ফুল চাষের সম্ভাবনার কথা।

তিনি বলেন, রংপুর ও দিনাজপুর অঞ্চলের জমি বেশিরভাগ উঁচু ও মাঝারি উঁচু। এ অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগও কম হয়। তাই গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাসসহ অন্যান্য ফুল চাষের সম্ভাবনা বেশ উজ্জ্বল। এবারে ফুল চাষে কৃষকরা অনেক লাভবান হবে বলে মনে করেন তিনি।