এম এম হারুন আল রশীদ হীরা, নওগাঁ : নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার গোবরচাঁপা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সোমবার সাপ্তাহিক হাটের কারণে সোমবার বন্ধ রেখে শনিবার খোলা রেখেছিল প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের দাবী সহশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়ার কারণে হাটের দিন বিদ্যালয়ে মেয়ে শিক্ষার্থীরা তেমন আসে না।

সোমবার স্কুল বন্ধ রাখার কারণে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও একটি প্রিন্ট পত্রিকায় “নির্দেশ অমান্য করে শনিবার ক্লাস চলে স্কুলে, ছুটি সোমবার” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশে কর্তৃপক্ষ দাবী করেন হাটের দিন বাস্তব চিত্র দেখে সংবাদ প্রকাশের।

সে কারণে হাটের দিন সোমবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিদ্যালয় এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সকাল ৬টার আগে থেকে এই এলাকার কাঁচা সবজির পাইকারী হাট শুরু হয়। এ পাইকারী হাট চলে বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত। এ সময় নওগাঁ ও জয়পুরহাট জেলার ব্যবসায়ীরা এখান থেকে সবজি ক্রয় করে নওগাঁ, জয়পুরহাট, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে দেন। এরপর দুপুর ১টার দিকে শুরু হয় গরুর হাট। এ সময় স্থানীয় ও বাহিরের ক্রেতা-বিক্রেতায় ভরে যায় স্কুল মাঠ।

এ সময় অত্র প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিভাবকের সাথে কথা হয় প্রতিনিধির। তারা জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকটে সরকারের এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, আমাদের সন্তানদের যেমন লেখাপড়া প্রয়োজন তেমনি আমাদের জীবন ধারণের জন্য টাকারও প্রয়োজন। আমাদের এই এলাকা কৃষি প্রধান এলাকা। এখানের অধিকাংশ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। আমরা মাঠে ফসল ফলাই, সে ফসল আমাদের বিক্রি করে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়াসহ সংসার চালাতে হয়। আগে হাটের দিন স্কুল চলায় আমাদের মেয়েদের অনেক সমস্যা হতো। সরকার স্কুল দুইদিন ছুটি দেওয়ায় শনিবারের পরিবর্তে সোমবার স্কুল ছুটি দিয়েছে। শনিবার স্কুল চালিয়ে সোমবার ছুটি দেওয়ায় আমাদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার যেমন কোন ক্ষতি হচ্ছে না, তেমনি আমাদের হাটে বেচাকেনাও ঠিকমতো হচ্ছে। এ জন্য বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সাধুবাদ জানাই।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মামুনুর রশীদ বলেন, আপনি তো সরেজমিনে সবকিছু দেখলেন। এর আগে বিদ্যালয়ের ভেতরে হাট না বসানোর জন্য একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তাতে কোন লাভ হয়নি তাই শিক্ষার্থী ও অত্র এলাকার মানুষের স্বার্থে শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের সিদ্ধান্তে আমরা এ বিষয়ে রেজুলেশন করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে ডাকযোগে জানিয়েছি। যদি কর্তৃপক্ষ এটা অনুমতি না দেয় তাহলে আমরা হাটের দিন প্রতিষ্ঠান চালাবো। এতে আমাদের কোন আপত্তি নেই।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি বৈদ্দ্যনাথ সরদার বলেন, এই প্রতিষ্ঠান স্থাপনের আরও আগে থেকে এখানে হাট বসে। হাটের দিনে বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা আসে। এই হাট থেকে প্রতি সপ্তাহের হাটের দিন ১৫ থেকে ২০ ট্রাক সবজি লোড হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। এখানে একেক জন ব্যবসায়ীর কথাবার্তা একেক রকমের। আমাদের প্রতিষ্ঠানে মেয়ে শিক্ষার্থী আছে ২শ ৯৯ জন। যারা হাটের দিন (সোমবার) অধিকাংশই বিদ্যালয়ে আসে না। তাই আমরা সবাই মিলে জনস্বার্থে শনিবার দিন ছুটির পরিবর্তে সোমবার করার সিদ্ধান্ত নিয়ে অনুমতির জন্য আবেদন করেছি এবং শনিবার দিন ছুটির পরিবর্তে সোমবারে ছুটি দেওয়ার কথা প্রধান শিক্ষককে বলেছি।

উল্লেখ্য যে, দেশে বিদ্যুৎ ও জালানি সংকটে গত মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শুক্রবার ও শনিবার দুই দিন ছুটি ঘোষনা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শনিবার সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সরকারি ছুটি চললেও এই স্কুল খোলা রেখে পুরোদমে পাঠদান চালিয়ে গেছে। শনিবারের পরিবর্তে প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্তে সোমবার ছুটি ঘোষণা করেন প্রধান শিক্ষক।