এম মাঈন উদ্দিন, মিরসরাই : দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জা ও সুদৃশ্য অপরূপ ইন্টেরিয়র ডিজাইন। অসামান্য কারুকাজ। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরায় ছোট পরিসরে তৈরি করা হয়েছে ফুলে বাগান। রয়েছে পাঠাগার। মিরসরাইয়ের চিনকী আস্তানা রেল ষ্টেশন এলাকায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী নিয়ে গড়া বঙ্গবন্ধু ভ্রাম্যমান রেল জাদুঘর শেষ দিন দর্শনার্থীদের ভীড় দেখা গেছে। শিশু, কিশোর, শিক্ষার্থী ও বৃদ্ধরাসহ সব বয়সের লোকজন একপলক দেখার জন্য সকাল থেকে পরিদর্শন করছেন। জানছেন বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের অনেক অজানা ইতিহাস।

বুধবার ১০ আগস্ট সকাল ১০টা থেকে বৃহষ্পতিবার ১১ আগস্ট দুপুর ১টা পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিলো এ জাদুঘরটি।

জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্ব-পরিবারে হত্যার মাসে ১ আগস্ট থেকে যাত্রা শুরু হয়েছে এই জাদুঘরের।

বৃহষ্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভ্রাম্যমাণ এই জাদুঘরে প্রবেশ করেই দর্শনার্থীরা পরিচিত হচ্ছেন জাতির পিতার শৈশবের দিনগুলোর সঙ্গে। পর্যায়ক্রমে বঙ্গবন্ধুর ছাত্রজীবন, বেড়ে ওঠা, মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের মাধ্যমে গণমানুষের প্রাণের নেতা হয়ে ওঠা এবং ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক হিসেবে তার অবদান তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি অধিকার আদায়ের সংগ্রামের অবর্ণনীয় নির্যাতনের চিত্র, মিথ্যা মামলা ও কারাভোগের করুণ দলিল। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, বহু কাঙ্খিত স্বাধীনতা, যুদ্ধবিদ্ধস্ত সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ পুনর্গঠনে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ। কোচের এক প্রান্তে একটি বড় এলইডিতে জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণসহ গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ, থিম সং এবং বঙ্গবন্ধুর উপর রচিত অন্যান্য গান প্রচার করা হচ্ছে।

পরিদর্শনে আসা মিরসরাই মারূফ মডেল স্কুলের নার্সারী ২ এর ছাত্র আয়াত বিন মাঈন বলেন, এখানে এসে আমার অনেক ভালো লাগছে। বঙ্গবন্ধুর ব্যবহার করা অনেক কিছু দেখেছি।

বৃহস্পতিবার জাদুঘর পরিদর্শনে আসেন উপজেলার মহাজনহাট ফজলুর রহমান স্কুল এন্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়া জাহান ও নাদিয়া তাবাচ্ছুম। তারা বলেন, অনেক অজানা তথ্য জেনেছি বঙ্গবন্ধু ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরে। যা আগে কখনো জানা হয়নি। আরও দু’একদিন থাকলে আমাদের কলেজের সকল শিক্ষার্থীরা দেখতে পারতো।

আল আলাবী ও শাহীন আলম নামের দু’জন শিক্ষার্থী বলেন, বঙ্গবন্ধু সর্ম্পকে আমাদের মা-বাবা, দাদা-দাদী ও কলেজের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর সম্পর্কে শুনেছি। আজকে বঙ্গবন্ধু ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক, দেশের মানুষের জন্য উনার যে আত্মত্যাগ তা দেখেছি। সত্যি আমাদের খুভ ভালো লেগেছে।

মহাজনহাট ফজলুর রহমান স্কুল এন্ড কলেজের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো. নোমান বলেন, এ বঙ্গবন্ধু ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরটি মিরসরাইয়ে অবস্থার করার আগে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের একটু প্রচার-প্রচারণা করা হলে অনেক শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আসতো। এ জাদুঘরটিতে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা এটা দেখে অনেক কিছু শিখতে পারবে।

চিনকি আস্তানা রেল ষ্টেশন মাস্টার মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, বঙ্গবন্ধু ও মুুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন তথ্য চিত্রে দৃষ্টিনন্দন জাদুঘরটি এখানকার মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বুধবার সকাল থেকে বিভিন্ন স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রী সহ নানা বয়সী মানুষ জাদুঘরটি দেখতে ভীড় করছেন। নতুন প্রজন্ম এই জাদুঘরে এসে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সর্ম্পকে জেনেছে।

তিনি আরো বলেন, বুধবার ১০ আগষ্ট সকাল ১০ টা থেকে জাদুঘরটি বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিলো। বৃহস্পতিবার বিকালে বঙ্গবন্ধু ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরটি ফেনী রেল ষ্টেশন এলাকায় অবস্থান করবে।