শীত মৌসুমে চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল রসের যোগান

এম মাঈন উদ্দিন, মিরসরাই (চট্টগ্রাম) : এক সময় চরাঞ্চলের খেজুর গাছ থেকে পাওয়া রস দিয়ে চাহিদা মিটিয়ে বাইরে পাঠানো যেতো। বাইরে পাঠানো তো দুরের কথা, শিল্পাঞ্চলের ছোঁয়ায় মিরসরাইয়ে অনেকটা বিলুপ্তির পথে খেজুর রস। খেজুর রস না থাকায় শীতের ভাপাপিঠা এখন আর চোখে পড়েনা আগের মতো। খেজুর রসের চাহিদা থাকলেও পর্যাপ্ত পরিমাণ গাছ না থাকায় পাওয়া যাচ্ছেনা স্বাদের এ রস। একসময় পর্যাপ্ত পরিমাণ খেজুর গাছ থাকলেও আধুনিকায়ন ও শিল্পায়নের ছোঁয়ায় হারাতে বসেছে খেজুর গাছ। হারাচ্ছে হাজার বছরের বাঙালী ঐতিহ্য খেজুর রস।

মিরসরাইয়ের উপকূলীয় সাহেরখালী, মঘাদিয়া, চরশরৎ, ইছাখালী ও মুহুরী প্রকল্প এলাকা খেজুর রসের জন্য বিখ্যাত থাকলেও বর্তমানে এসব অঞ্চলে চোখে পড়েনা পর্যাপ্ত খেজুর গাছ। মিরসরাই, সীতাকুন্ড, ফেনী ও সোনাগাজী অঞ্চলজুড়ে ৩০ হাজার একর পতিত জমির উপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর প্রতিষ্ঠার ফলে নির্বিচারে কেটে ফেলা হয় হাজার হাজার খেজুর গাছ। যার ফলে ঘাটতি দেখা দেয় খেজুর রস।

চরশরৎ এলাকার একসময়ের পেশাদার গাছি ইয়াছিন মিয়া বলেন, একসময় যখন এখানে শিল্পাঞ্চল হয়নাই, তখন আমি নিজেই ৫০ টা গাছ খুলতাম। দৈনিক ২০ হাড়ির উপরে রস বিক্রি করতাম। কিন্তু আমি এবার নিজে রস খেতে হলো কিনে।

চরাঞ্চল ছাড়া উপজেলার প্রায় এলাকাতেই বিক্ষিপ্তভাবে দুচারটা করে খেজুর গাছ চোখে পড়ে। তবে এসমস্ত অঞ্চলে গাছির অভাব। গাছ থাকলেও পেশাদার গাছি না থাকায় গাছগুলো থেকে খেজুর রস সংগ্রহ সম্ভব হয় না। যে কয়টি গাছ থেকে খেজুর রস সংগ্রহ করা হয় তা থেকে চাহিদা মেটানো সম্ভব না উপজেলার এতগুলো মানুষের।

মঘাদিয়ার খেজুর গাছি মফিজ উদ্দিন বলেন, আগে থেকে খুলতাম সে হিসেবে এখনো ৭-৮ টি গাছ খুলি। রস যা পাই তাতে আমার উঠানামা ও কলস কিনার পয়সাও এক হিসেবে লস। বর্গা গাছ খুলি। দুইদিন আমি নিই। একদিন মালিক পক্ষকে দিই। ৭-৮ টা গাছ মিলে বড়জোর ১ কলস রস পড়ে। নিজে খাই, আত্মীয়স্বজনদের দিই। মাঝে মধ্যে বিক্রিও করি।

চাহিদার তুলনায় রসের যোগান কম থাকায় দামও সাধারণ মানুষের ক্রয়সিমার বাইরে। খোঁজ নিয়ে জানা যায় প্রতি হাঁড়ি রস বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা দামে। গাছিদের দাবি, এখন গাছ কম। যে কয়টি থেকে রস সংগ্রহ করা হয় তাতে করে প্রতিদিন দুইবার গাছে উঠানামার বেতনই হয় না। তাছাড়া রস পড়ে কম। সারারাত মিলে কোন গাছে আধা লিটার, কোন গাছে ১ লিটার রস পড়ে। এক হাড়ি রস হতে কয়েকটা গাছের রস একসাথে করতে হয়। তাই রসের দাম বাড়তি না নিয়ে উপায় নেই।

মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, প্রাকৃতিক ও জলবায়ুর পরিবর্তনগত কারণে এ অঞ্চলে খেজুর গাছের সংখ্যা কমেছে। চাহিদার তুলনায় উৎপাদনও কমেছে। তবে বর্তমানে কাঁচা রসে নিপা ভাইরাসের উপস্থিতির কারণে মানুষের আগ্রহও কমেছে।

খেজুর গাছের সংকট কাটাতে সরকারীভাবে চারা বিতরণের কোন কার্যক্রম আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলে, খেজুর চারা বিতরণের কোন কার্যক্রম আমাদের হাতে আসেনি। তবে কোন কৃষক যদি স্বপ্রণোদিত হয়ে খেজুর চারা লাগানোরা আগ্রহ প্রকাশ করে আমরা তাদের চারা সংগ্রহ, রোপন পদ্ধতি ও পরিচর্যা বিষয়ক পরামর্শ দিয়ে থাকি।