শরীয়তপুর প্রতিনিধি : দেশের ভোজ্য তেলের ঘাটতি কমাতে সরকারের মহা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে শরীয়তপুর জেলায় বেড়েছে সরিষার আবাদ। গত মৌসুমের তুলনায় এবার শরীয়তপুরের ৬ উপজেলায় ৪ হাজার ১৩০ হেক্টর অধিক জমিতে স্থানীয় জাত সহ উফশী জাতের সরিষার আবাদ হয়েছে।
এর মধ্যে জেলার কৃষি রাজধানী খ্যাত জাজিরা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি সরিষার আবাদ হয়েছে। ২০২৫ সালের আগেই জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা ৪০ শতাংশ তেল ফসল উৎপাদন ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা কৃষি বিভাগের।
শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, দেশের ভোজ্য তেলের আকাশচুম্বি মূল্য বৃদ্ধির ফলে যে সংকট তৈরি হয়েছে তার উত্তরণ ঘাটাতে বর্তমান সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ তেল ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছে শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
তেল ফসলের উৎপাদন বাড়াতে কৃষি বিভাগ মাঠ পর্যায়ে ব্লক ভিত্তিক বোরো শস্য বিন্যাসের মাধ্যমে আগাম জাতের অন্তর্ভুক্তি করে সরিষার আগের জাতের চেয়ে অধিক তেল উৎপাদনকারী জাত আবাদ প্রক্রিয়া গতিশীল রয়েছে।
ইতিমধ্যে বারি-১৮, বারি-১৪, বারি-১৭, বিনা-৪ ও বিনা-৯ জাতের সরিষার আবাদ জাত ভেদে ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে জাজিরা উপজেলায় ৩ হাজার ৪৫০, সদরে ৩ হাজার ১৬০, নড়িয়ায় ২ হাজার ৫৬৫, ভেদরগঞ্জে ২ হাজার ৪৯০, গোসাইরহাটে ১ হাজার ৬৪৮ ও ডামুড্যায় ৯১৭ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। যা গত মৌসুমের তুলনায় এবার শরীয়তপুরের ৬ উপজেলায় ৪ হাজার ১৩০ হেক্টর বেশি।
নড়িয়া উপজেলার রাজনগর ইউনিয়নের কৃষক লিটন মালত বলেন, গত মৌসুমে আমি এক বিঘা জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষা আবাদ করে ৮ মন ফলন পেয়েছিলাম। ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে এবার ৪ বিঘা জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষা আবাদ করেছি। আবহাওয়া ভাল থাকায় ফলনও হয়েছে বেশ ভাল। আশা করছি বিঘায় ফলন ৮ মনের কম হবে না।
জাজিরা উপজেলার বিকেনগর ইউনিয়নের কৃষক গিয়াস উদ্দিন মোল্লা বলেন, দুই বছর আগে তিন বিঘা জমিতে মাঘি জাতের সরিষা আবাদ করে ১৩ মন ফলন পেয়েছিলাম। গত বছর কৃষি বিভাগের পরামর্শে তিন বিঘা জমিতে উফশী বারি-৪ জাতের সরিষা আবাদ করে ২৩ মন ফলন পেয়েছিলাম। মাঘি জাতের সরিষার এক ঘাইনে (১০) কেজি সাড়ে তিন কেজি তেল পেতাম। এখন বারি-১৪ জাতের সরিষায় এক ঘাইনে তেল সাই সাড়ে ৪ কেজি। এতে ফলনও বেশি, তেলও বেশি। এখন আর বাজার থেকে বেশি দাম দিয়ে খাবার তেল কিনতে হবে না, বিক্রিও করতে পারব।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. রবিআহ নুর আহমেদ বলেন, সরকারের মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ভোজ্য তেলের ঘাটতি কমাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মাঠ পর্যায়ে আমরা কাজ করছি। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে উৎপাদন বাড়াতে প্রণোদনা কর্মসূচি, তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প, রাজস্ব কর্মসূচি ও এনএটিপি-২ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করা সহ প্রদর্শনী স্থাপন করে বৃদ্ধি করা হয়েছে অধিক তেল উৎপাদনকারী সরিষার আবাদ। গত মৌসুমের তুলনায় এবছর শরীয়তপুরে ৪ হাজার ১৩০ হেক্টর অধিক জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। আমরা আশা করছি ২০২৫ সালে আমরা লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে অনেকদূর এগিয়ে যাব।