মামুন হোসেন : বাবা, আমাদের অতি আস্থার-ভরসার একটি নাম। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ‘বাবা’ শব্দটির উচ্চারণ বদলায়। তবে বদলায় না রক্তের টান। ইংরেজ সন্তানরা যাকে ‘ফাদার বা ড্যাড’ ডাকে, ভারতীয়রা তাকে ডাকে ‘পিতাজি’। জার্মানিরা বলেন ‘ফ্যাট্যা’। আর আমরা ডাকি ‘বাবা’।

আজ বিশ্ব বাবা দিবস। প্রতি বছর জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বিশ্বজুড়ে পালিত হয় দিবসটি। ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই আমেরিকার পশ্চিম ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টের এক গির্জায় এই দিনটি প্রথমবারের মতো পালিত হয়।

এর আগেও বাবা দিবসের এক ইতিহাস রয়েছে। সেটা ১৯০৯ সালের কথা। সে সময় সনোরা লুইস স্মার্ট নামের ওয়াশিংটনের এক ভদ্রমহিলার মাথাতে বাবা দিবসের আইডিয়াটা আসে। সনোরা ছিলেন ৬ ভাইবোনের মধ্যে সবার বড়। সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মা ইলেন স্মার্ট যখন মারা যান, তখন সোনোরার বয়স ছিল মাত্র ষোলো বছর। মা মারা যাওয়ার পর বাবা উইলিয়াম জ্যাকসন স্মার্ট কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন সন্তানদের মানুষ করার দায়িত্ব। পেশায় কৃষক উইলিয়াম শত ব্যস্ততার মধ্যেও তাদের মায়ের অভাব এতটুকু বুঝতে দেননি। একবার মা দিবসের অনুষ্ঠানে চার্চে যান সনোরা। তখনই তার মাথায় বাবা দিবস পালনের চিন্তাটা আসে। মায়েদের সম্মান জানানোর জন্য একটি দিন যদি থাকতে পারে, বাবাদের জন্য কেন নয়? তারপর বিশেষ একটি দিনে বাবার প্রতি সম্মান জানানোর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে জনমত গড়ে তোলেন তিনি। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ভার্জিনিয়ার বাবা দিবসের কথা সনোরা লুইস স্মার্ট জানতেনই না!

এরপর নানা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ১৯১০ সালের ১৯ জুন, অর্থাৎ জুন মাসের তৃতীয় রোববার বড় পরিসরে প্রথম বাবা দিবস পালিত হয়। প্রথম আনুষ্ঠানিক বাবা দিবসে শহরের ছেলে-মেয়েরা দুটি করে গোলাপ নিয়ে যান চার্চে। একটি লাল, অন্যটি সাদা। লাল গোলাপ জীবিত পিতার জন্য, আর সাদা গোলাপ মৃত পিতার আত্মার শান্তির জন্য। বাবা দিবস পালনের বিষয়টি মার্কিন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। ধীরে ধীরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও শুরু হয় বাবা দিবস উদযাপন। ১৯১৯ সাল থেকে পুরো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘বাবা দিবস’ পালন করা হয়। পরে ১৯৬৬ সালে ৫৬ বছর পর বাবা দিবসকে জাতীয় মর্যাদা দেওয়া হয়।

বাবা দিবসটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হয়ে থাকে। বাবা দিবসে মেক্সিকো সিটিতে ১৩ মাইল লম্বা দৌড় প্রতিযোগিতা হয়, যাকে বলা হয় ক্যানেরা ডিয়া ডেল পেড্রো। বাবাদের সঙ্গে সঙ্গে এই দৌড়ে সন্তানরাও অংশ নেন। জার্মানিতে এই দিনে সন্তানদের সঙ্গে সময় না কাটিয়ে সকল বাবারা বিভিন্ন গ্রুপ হয়ে হাইকিং করতে যান। অনেকে দলবেধে মদ খান, আনন্দ করেন। নেপালে সন্তানরা এই দিনে বাবাদের বিভিন্ন উপহার দেন, বাবাদের কাছ থেকে সন্তানরা আর্শীবাদ নিয়ে থাকেন। আর ফ্রান্সে এই দিনে জীবিত বাবাদের লাল গোলাপ দিয়ে আর্শীবাদ গ্রহণ করে থাকেন সন্তানরা। যাদের বাবা মারা গেছেন তাদের সন্তানরা সাদা গোলাপ নিয়ে বাবাদের সমাধিস্থলে গিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

আজ বিশ্বের সব বাবার প্রতি ভালোবাসা জানাবেন সন্তানরা। ভালোবেসে উপহারও দেবেন। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের ওয়ালগুলো ভরে যাবে প্রিয় বাবার ছবিতে। যাদের বাবা বেঁচে আছেন তারা আনন্দ-উচ্ছ¡াসে ছবি আপলোড করবেন। আর যাদের বাবা নেই, তারা বাবার ছবি পোস্ট করে, বাবাকে নিয়ে লিখে স্মৃতিচারণ করবেন।