এম মাঈন উদ্দিন, মিরসরাই (চট্টগ্রাম) : চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে যুবলীগ কর্মী শহিদুল ইসলাম আকাশ (২৮) হত্যাকান্ডের প্রধান আসামী হুমায়ুন কবির মামুন (২৫)সহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টায় প্রধান আসামী মামুনকে চট্টগ্রাম শহরের পাহাড়তলী থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীরা হলো, মুকেশ চন্দ্র দাশ ও মো. ইকবাল (২২)। বাকী দুইজনকে চাঁদপুর জেলার পুরান বাজার হতে রাত ৮টায় গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব-৭ সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. নুরুল আবছার রোববার দুপুরে বলেন, প্রধান আসামী হুমায়ুন কবির মামুন জানায়, ২০১৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর আমার ছোট ভাই আফজাল হোসেনকে ব্যবাসায়ীক দ্বন্ধে ও রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আকাশ আমার ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করে। তখন আমার ভাই ইকবাল ও আমি নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের মামলায় জেল হাজতে ছিলাম। পরবর্তীতে আমি গত ১৩ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পায়।
মুক্তি পেয়ে মামুন তার ভাইয়ের হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তার সহযোগী মোতালেব, রাজু, নেজাম, হামিদ ও মুকেশসহ হত্যার পরিকল্পনা করে। সে অনুযায়ী গত ১৯ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পাওয়ার ৫দিন মাথায় যুবলীগ কর্মী শহীদুল ইসলাম আকাশকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। মূলত ভাইয়ের হত্যার প্রতিশোধ নিতে জামিনে বের হয়ে হিঙ্গুলী ইউনিয়ন যুবলীগ কর্মী শহীদুল ইসলাম আকাশকে কুপিয়ে খুন করা হয়।
র্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, আকাশ-মামুন এক সময় খুব কাছের বন্ধু ছিলো। বারইয়ারহাট কেন্দ্রীক এক রাজনৈতিক নেতার গ্রুপ করতেন তারা। ২০১৫ সালে মাদক ও গাছ ব্যবসা নিয়ে দুজনের মধ্যে দ্বন্ধ শুরু হয়। তখন মামুন আকাশকে হত্যা চেষ্টা করে। তখন আকাশ অনেকদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ ঘটনায় মামলায় দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন মামুন। মামুন জামিনে বের হওয়ার পর থেকে তাদের দ্বন্ধ আরো প্রকাশ্যে আসে। সর্বশেষ গত ১৯ সেপ্টেম্বর পরিকল্পিবভাবে শহিদুল ইসলাম আকাশকে খুন করা হয়। ঘটনার পর আসামীরা গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যায়। গ্রেফতারকৃত আসামীদের পরবর্তী আইনানুগ শেষে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৯ সেপ্টম্বর সন্ধ্যায় সাড়ে ৬টায় পূর্বশত্রুতার জের ধরে হিঙ্গুলী ইউনিয়নের চিনকিরহাট এলাকায় যুবলীগ কর্মী শহীদুল ইসলাম আকাশকে হুমায়ুন কবির মামুন এবং তার সহযোগীরা অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মামুন দোকানে এসে আকাশকে গালাগাল করে। আকাশ প্রতিবাদ করলে মামুন তাকে দোকানের বাইরে নিয়ে কিচির দ্বারা মাথার পিছনে জখম করে। সাথে সাথে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে আসামী মোতালেব তার হাতে থাকা ধামা দিয়ে আকাশের গলায় এবং থুথনীতে আঘাত করে। এক পর্যায়ে আকাশের বাবা ছেলেকে বাঁচানোর জন্য ছুটে আসলে মামুন তাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয় এবং তাকে হুমকি দেয় যদি নড়াচড়া করে তবে তাকেও জবাই করে দিবে। এরপর তাদের সাথে থাকা চুরি, কিরিচ ও বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র দিয়ে আকাশকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। স্থানীয় লোকজন আসলে তারা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে তাকে উদ্ধার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মস্তাননগর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ চমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় নিহতের বোন নাজমা আক্তার বাদি হয়ে ২১ সেপ্টেম্বর জোরারগঞ্জ থানায় ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ৭/৮ জনকে আসামী একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন, যার মামলা নাং ১৮। এর আগে এই মামলার ৫ নং আসামী হিঙ্গুলী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মিজানুর রহমানকে গ্রেফতার করে জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ।