রাঙামাটি প্রতিনিধি : গোয়েন্দা অ্যাপস’ ব্যবহার করে স্ত্রীর ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি, ভিডিওসহ বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ায় সাবেক স্বামীসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন রাঙামাটির ভুক্তভোগী এক নারী। সোমবার চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনাল’র বিচারক মো. জহিরুল কবির’র আদালতে মামলাটি করা হয়।

মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- ভুক্তভোগী নারীর স্বামী রাঙামাটি আমানতবাগ রোড কলেজ গেইট এলাকার মোস্তাফিজুর রহমান (৪৪), সাবেক ননদ আইসিটি ডিভিশনের চাকরিজীবী শাহিনা আক্তার (৩৯), রাঙামাটি যুবলীগের সিনিয়র সহসভাপতি শহীদুল আলম স্বপন (৪৫), হিমেল জীবন চাকমা ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর বেলাল হোসেন টিটু।

মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০৫ সালে কাবিন ও দেনমোহর ছাড়া মোস্তাফিজুর রহমান তাকে বিয়ে করে। তাদের ২টি ছেলেমেয়ে রয়েছে। কাবিন সংক্রান্ত পীড়াপীড়ি এড়াতে ২০১৭ সালে মোস্তাফিজ ভুক্তভোগী নারীকে কলেজ গেইট আমানতবাগস্থ ৮ শতক খাস জমি দানপত্র করেন। এরপর উক্ত জমিতে স্থাপনা তৈরি করে ভুক্তভোগী নারী। কিন্তু অন্যের প্ররোচনায় মোস্তাফিজ জমি নিজের আয়ত্বে রাখতে, নানা রকম অকৌশল প্রয়োগ করে বলে দাবী করেন এ নারী।

এমনকি জায়গার বিষয়টি অমীমাংসিত থাকায়, অভিযুক্তরা পরষ্পর পরষ্পরের সাথে যোগসাজশ করে ভুক্তভোগীকে নানা উপায়ে ঘায়েল করার চেষ্টা চালান অভিযুক্তরা। সেই ধারাবাহিকতায় মোস্তাফিজ স্ত্রীর মোবাইলে গোপনে একটি ডিজিটাল অ্যাপ সংযোগ করে রাখে। যার মাধ্যমে ভুক্তভোগীর জি-মেইল, ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ’র সমস্থ অডিও,ভিডিও এবং ছবি আয়ত্ব করে ফেলেন।

মুঠোফোনের সমস্থ তথ্য হাতিয়ে নিয়ে বাদীর ফেইসবুক আইডিও হ্যাক করে রাখে তারা।এরপর উদ্দেশ্যমূলকভাবে ভুক্তভোগী নারীর ছবির সঙ্গে অন্যের ছবি এডিট করে স্থিরচিত্র এবং ভিডিও বানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্নজনের কাছে অশালিন এবং কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য, শেয়ার মাতামতসহ ছড়িয়ে দেয়। যা চলতি বছরের ১১ জুন নিজের ফেসবুক আইডি চেক করার সময় ভুক্তভোগী নারীর নজরে আসে। তিনি লিঙ্কগুলোয় দেখতে পান, সাবেক স্বামী মোস্তাফিজুর তার বিভিন্ন স্ট্যাটাসে উদ্দেশ্যমূলক, অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ কমেন্ট লিখেন।

প্রমান হিসেবে তিনি তার স্বামী মোস্তাফিজুর রহমানের নিজস্ব ফেসবুক আইডি থেকে ভুক্তভোগী নারীকে নিয়ে এডিটকৃত এবং বিভিন্ন জনের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে পাঠিয়ে সঙ্গে লিখেন, দু’জন বিয়ে করেছে। তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের অনেক ভিডিও ফুটেজ আমার কাছে আছে, আমার নতুন পোস্টটা শেয়ার কর।

মোস্তাফিজুরের বোন শাহিনা আক্তারও তার নিজস্ব ফেসবুক আইডি থেকে ভুক্তভোগী নারীর নাম ও ছবি দিয়ে জনৈক ছাত্রদল নেতার সাথে ভুক্তভোগীর বিয়ে হয়েছে মর্মে বানোয়াট, মানহানিকর স্ট্যাটাস শেয়ার করে অন্যকে শেয়ার ও কমেন্টের অনুরোধ করেন।

রাঙামাটি জেলা যুবলীগ নেতা শহীদুল আলম স্বপনমমমমও তার নিজস্ব ফেসবুক আইডি থেকে ভুক্তভোগী নারীর ছবি দিয়ে বিকৃত কোলাজকার্টুন বানিয়ে রাঙামাটির বিতর্কিত ‘মিনি পাপিয়া’ দাবী করে স্ট্যাটাস দেন।

হিমেল জীবন চাকমা তার ফেসবুক আইডি থেকে ভুক্তভোগী নারীর ছবি দেওয়া একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন- এই নারী রাঙামাটিতে বহু পুরুষের সাথে হোটেল-বোর্ডিংয়ে ধরা খেয়ে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।

রাঙামাটি ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর বেলাল হোসেন টিটু তার নিজস্ব ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট দিয়ে ওই নারীকে আইনের আওতায় এনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।

ভুক্তভোগী নারী তার প্রতিক্রিয়ায় কান্নাজড়িত কন্ঠে এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছে, প্রতারণা করে একাধিক বিয়ে করেছেন মোস্তাফিজুর রহমান। তার জাতীয় পরিচয়পত্রে স্ত্রী হিসেবে অন্যের নাম রয়েছে। তাছাড়া আমার নামে দেওয়া জায়গাটিও তারা দখল করে রেখেছে। ডিজিটাল টেকনোলজিতে অনভিজ্ঞ হওয়ায় তার সাথে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। তিনি ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করেন।

বাদী পক্ষের এডভোকেট গোলাম মাওলা মুরাদ বলেন, হিডেন অ্যাপস ব্যবহার করে নারী উদ্যোক্তার মোবাইল, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ হ্যাকিংসহ সাইবার ক্রাইমে জড়িত থাকার অভিযোগটি আদালত আমলে নিয়ে পাঁচজনের বিরুদ্ধে ফরেনসিক রিপোর্টসহ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছেন।