এম মাঈন উদ্দিন, মিরসরাই (চট্টগ্রাম) : ভারতের অন্যতম প্রসাধন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেডের সাথে জমি লিজ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। রোববার (৬ জুন) বেজা কার্যালয়ে এই চুক্তি স্বাক্ষর সম্পন্ন হয়।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরীর সভাপতিত্বে আয়োজিত সভায় উপস্থিত ছিলেন ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশীষ গোপাল ও প্রতিষ্ঠানটির উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
সভাপতির বক্তব্যে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চলের হাত ধরে বাংলাদেশ বিনিয়োগ-বান্ধব সুস্থ পরিবেশ গড়ে তুলতে সমর্থ হয়েছে এবং বিশ্বের কাছে উন্নয়নের একটি রোল মডেল স্থাপন করেছে।
তিনি উল্লেখ করেন, মিরসরাইতে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মিত হচ্ছে এবং এর ফলে এদেশে শিল্পায়নের অভূতপূর্ব বিপ্লব সাধিত হবে এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যসমূহ পূরণ হবে। এছাড়াও, জলবায়ুর পরিবর্তনের নিরিখে সবুজ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য নীতি নির্ধারণের কাজও শীঘ্রই বাস্তবায়িত হবে।
তিনি উল্লেখ করেন ভৌগোলিক ও কৌশলগত অবস্থানের কারণে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগ আসছে, এবং ম্যারিকো তাদের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। তিনি প্রতিষ্ঠানটিকে তাদের এ অর্জনের জন্য অভিনন্দন জানান।
ম্যারিকো বাংলাদেশ এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর আশীষ গোপাল বলেন, বর্তমানে ম্যারিকো’র ৯৯ শতাংশ পোর্টফলিও বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে প্রস্তুতকৃত।
তিনি জানান, ১০টি ক্যাটাগরির ৩৬টি ব্র্যান্ড রয়েছে ম্যারিকোর এবং দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে তারা পণ্য রপ্তানি করেন। তিনি আরো বলেন, ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’-এর একটি গর্বিত অ্যাম্বাসেডর হয়ে দেশ ও দেশের বাইরে ভোক্তাদের বিশ্ব মানের পণ্য সরবরাহে তারা সর্বদাই সচেষ্ট।
তিনি আরো বলেন, উৎপাদন পরিধি বৃদ্ধি করতে তারা ২২০ কোটি টাকার অধিক বিনিয়োগের লক্ষ্য স্থির করেছেন এবং স্থানীয়ভাবে পণ্যসামগ্রী উৎপাদনের মাধ্যমে পোর্টফোলিও আরও মজবুত করতে বদ্ধপরিকর। বেজা-তে বিনিয়োগকারী সেবার দ্রুততা এবং দক্ষতা নিয়ে তারা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের পক্ষে নির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ আলী আহসান এবং ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেডের এর পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মি. আশিষ গোপাল জমি লিজ চুক্তিটি স্বাক্ষর করেন।
জানা গেছে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে ১৫ বছরের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, পত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১ কোটি লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতিবছর অতিরিক্ত ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় প্রত্যাশা নিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে ।
মিরসরাই, সীতাকুন্ড ও ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। ইতোমধ্যে ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ এখানে নিশ্চিত হয়েছে।
বিদেশী বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রয়েছে জাপানের নিপ্পন, ভারতের এশিয়ান পেইন্টস, যুক্তরাজ্যের বার্জার পেইন্টস, সিঙ্গাপুরের উইলমারসহ আরো অনেকে এবং দেশী স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে পিএইচপি, বসুন্ধরা গ্রুপ, টি কে গ্রুপ ছাড়াও আরো নানা বিনিয়োগকারী।
এ শিল্পনগরে ইতোমধ্যে সরকারী বিভিন্ন সংস্থার সাথে বেজার সুসমন্বয়ের ফলে নির্মিত হয়েছে শেখ হাসিনা সরণি, দেশের সর্বপ্রথম সুপারডাইক, প্রতিষ্ঠিত হয়েছে গ্যাস সংযোগ, বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজ।
এ শিল্পনগরে বর্তমান ১৩টি শিল্প নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে আরও ১৫টি প্রতিষ্ঠান শিল্প নির্মাণের অংশ হিসেবে প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে। জুলাই মাস নাগাদ কমপক্ষে দুটি শিল্প কারখানা উৎপাদনে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ শিল্পনগরে মাধ্যমে ১৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। কোভিড-১৯ মহামারীর সময়েও এ শিল্পনগরের জন্য প্রায় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব গৃহিত হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে (মিরসরাই, ফেনী এবং সীতাকুন্ড অর্থনৈতিক অঞ্চল) ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেড বাংলাদেশে তাদের তৃতীয় ফ্যাক্টরি স্থাপন করতে যাচ্ছে। এখানে প্রায় ২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রায় ৫০০ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এ কারখানায় মূলত প্রসাধন সামগ্রী এবং পিইটি বোতল প্রস্তুত হবে।