বগুড়া অফিস : ঢাকার চাঞ্চল্যকর সেলুন শ্রমিক বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত অন্যতম আসামি ছাত্রলীগ ক্যাডার আলাউদ্দিন (৩৫) বগুড়ার শ্বশুরবাড়ি থেকে গ্রেফতার হয়েছেন।
এর আগে তিনি ঈদুল আযহা উদযাপনের জন্য বগুড়ার শ্বশুর বাড়ী আসেন। তিনি ২০১২ সালে বিশ্বজিৎ হত্যাকান্ডের পর থেকেই পলাতক ছিলেন। শুক্রবার ভোর রাতে বগুড়ার শিবগঞ্জ থানা পুলিশ মোকামতলা বন্দরের শ্বশুরবাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করে। সে পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী থানার ছোট ধাপ গ্রামের হবিবুর রহমানের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শ্বশুর বাড়িতে ঈদ উল আযহা উদযাপন করতে গত বৃহস্পতিবার রাতে স্ত্রীসহ শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে আসেন আলাউদ্দিন। শুক্রবার রাতে তিনি কর্মস্থল কক্সবাজার জেলার টেকনাফে চলে যেতেন।
আলাউদ্দিন টেকনাফে এনজিও ব্রাকে কর্মরত এবং তার স্ত্রী নাহিদ ফেরদৌস টেকনাফে একটি বিদেশি সাহায্য সংস্থায় চাকরি করেন। সেখানেই আলাউদ্দিনের সাথে পরিচয় হলে ২০১৬ সালে তারা বিয়ে করেন।
এর আগে আলাউদ্দিন গাজিপুরে একটি পোল্ট্রি ফার্মে চাকরি করতেন।
আলাউদ্দিন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতেন এবং ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। ২০১২ সালে আলাউদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩য় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। সেই বছরের ৯ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন দর্জি দোকান কর্মচারী বিশ্বজিৎ দাস (২২)। কোন কারণ ছাড়াই জগন্নাথ বিশ্বিবদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে বিশ্বজিৎকে।
এমন হৃদয় বিদারক হত্যাকান্ড সাংবাদিক, পুলিশ ছাড়াও শত-শত মানুষ দেখলেও কেউ বিশ্বিজৎকে উদ্ধারে এগিয়ে আসেনি। সাংবাদিকদের ভিডিও করা হত্যাকান্ডের দৃশ্য দেশ-বিদেশে প্রচার হলে দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। হত্যাকান্ডর ঘটনায় বিশ্বজিতের ভাই উত্তম দাস ঢাকার সুত্রাপুর থানায় মামলা করেন।
মামলা তদন্ত শেষে পুলিশ চার্জশিট দাখিল করলে ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ২১ জন আসামির মধ্যে ৮ জনের মৃত্যুদন্ড এবং ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারদন্ড প্রদান করেন বিচারক। ২১ জন আসামির মধ্যে ৮ জন পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় এবং অপর ১৩ জন ঘটনার পর থেকেই পলাতক। পরে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিদের পক্ষে আপিল করা হলে হাইকোর্ট ২ জনের মৃত্যুদন্ড বহাল রাখেন এবং ৪ জনের মৃত্যুদন্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন সাজা এবং ২ জনকে খালাস প্রদান করেন। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের মধ্যে আলাউদ্দিন একজন। মামলার এজাহারে আলাউদ্দিন ৪ নং আসামি ছিলেন।
বগুড়া জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলী হায়দার চৌধুরী ও শিবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দীপক কুমার দাস জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার ভোর রাতে মোকামতলা বন্দরের বাসিন্দা তার শ্বশুর কাজী নুরুল ইসলামের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। হত্যাকান্ডের পর থেকেই সে পলাতক ছিল।