খোলাবার্তা২৪ ডেস্ক : বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারী করোনাভাইরাসের প্রভাবে জনসাধারণের অনলাইননির্ভরতা বেড়েছে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বহুগুণ।
এ সময় সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার লক্ষ্যে ঘরে থেকেই নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজার, অনলাইন ক্লাস, ভিডিও কনফারেন্সে হোম অফিস এমনকি চিকিৎসা, সবই হচ্ছে অনলাইনে।
দেশের মানুষের অনলাইননির্ভরতা বাড়ার কারণে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনলাইন ক্লাস চালু হওয়ায় স্মার্টফোন বিক্রিও বেড়েছে। জানা গেছে দেশে স্মার্টফোন বিক্রির এ হার আগের প্রান্তিকের চেয়ে প্রায় আড়াই গুণ বেশি। বছরের তৃতীয় প্রান্তিক, জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের হিসাবে দেশে স্মার্টফোন বিক্রি হয়েছে ৩২ লাখ ৬৩ হাজার ৭০৫টি।
যেখানে দ্বিতীয় প্রান্তিকে এপ্রিল, মে, জুনে এ সংখ্যা ছিল ১৩ লাখ ৯১ হাজার ৮৮১টি। বছরের প্রথম প্রান্তিকে যা ছিল ১৪ লাখ ৩৫ হাজার ৮৮১টি। করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী ২০২০ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে স্মার্টফোনের বাজার বেশ পড়ে গেলেও বাংলাদেশের বাজার ছিল জমজমাট।
আর তৃতীয় প্রান্তিকে এসে এর উল্লম্ফন ঘটেছে। বাজার গবেষণার একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্যানুযায়ী, তৃতীয় প্রান্তিকে দেশে স্মার্টফোন বাজার দখল করেছে ৩২ শতাংশ। এর আগের প্রান্তিকে এটি ছিল ২৬ শতাংশে। বছরের শুরুতে যা ছিল মাত্র ২০ শতাংশ। এদিকে রাজধানীর মোবাইল ফোনের শো-রুমগুলো ঘুরেও মোবাইল ফোন কেনার-বেচার এমন দৃশ্য দেখা গেছে। বিক্রেতারাও আগের তুলনায় বিক্রি বেড়ে যাওয়ার তথ্য জানিয়েছেন।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কের লেভেল ৪-এর একটি শো-রুমে সৈয়দ আসাদুজ্জামান আরমান স্কুলে পড়ুয়া ছেলের জন্য মোবাইল ফোন কিনতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে সব স্কুল-কলেজ অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে। আমার বাসার কম্পিউটারটি নষ্ট হয়ে গেছে, এমতাবস্থায় ছেলের স্কুলে অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে হচ্ছে। যার জন্য একটি স্মার্টফোন কেনা জরুরি হয়ে গেছে। স্মার্টফোনেই যেহেতু কম্পিউটারের সব কাজ করা সম্ভব তাই স্মার্টফোন কেনাই যৌক্তিক মনে করছি, যোগ করেন মিরপুরের এ বাসিন্দা’।
এছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটের মোবাইল ফোনের প্রায় প্রতিটি স্টলেই ক্রেতার ভিড় ছিল লক্ষণীয়। মিরপুরের শাহআলী প্লাজার লেভেল ৫-এর ‘মোটিভ মাল্টি মিডিয়া সার্ভিস’-এর স্বত্বাধিকারী ফরহাদ হোসাইন বলেন, ‘আগের চেয়ে মোবাইল ফোন বিক্রি দ্বিগুণ হারে বেড়েছে, বিশেষত অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন’। আগে প্রতি মাসে ১৫-১৭টি স্মার্টফোন বিক্রি হলেও এখন ২৫-৩০টি স্মার্টফোন বিক্রি হচ্ছে।
কোনো কোনো মাসে এর থেকে বেশিও হয়। জনাব ফরহাদ বলেন, শুধু মোবাইল ফোন নয় মোবাইল ফোনের হেডফোন, স্ট্যান্ডসহ তথ্যপ্রযুক্তির নানা সামগ্রীর বিক্রিও বেড়েছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, মোবাইল বিক্রি বৃদ্ধির এ পরিসংখ্যান দেখেই বুঝা যায় দেশে বৃহৎ ডিজিটাল রূপান্তর ঘটেছে। ‘করোনার মতো পরিস্থিতিতে দেশের ইন্টারনেটসহ টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থায় কোনো বিঘ্ন ঘটেনি। মানুষ স্মার্টফোনে ক্লাস করছে, কেনাকাটা করছে, সরকারি সেবা নিচ্ছে, লেনদেন করছে।’
স্মার্টফোনের বাজার বিশেষজ্ঞ অসিকুল মিল্লাত পান্না জানান, করোনার সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্লাস হচ্ছে অনলাইনে। অফিসিয়াল অনেক কার্যক্রমও চলছে অনলাইনে। অন্যদিকে করোনায় অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পারিবারিক ও সামাজিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন।
সময় কাটাতে অনেকে দীর্ঘসময় পার করছেন বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এসব কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজন স্মার্টফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ বা কম্পিউটার। ফলে করোনার এ সময়ে অনেক পণ্যের চাহিদা কমে গেলেও বেড়েছে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ এবং ট্যাবের চাহিদা। আর মানুষ আগের চেয়ে বেশি অনলাইননির্ভর, আর এ নির্ভরতা বেড়েই চলেছে, সুতরাং অনলাইনের অন্যতম অনুষঙ্গ স্মার্টফোন বিক্রিও বেড়েছে, আরও বাড়বে।