ছবি: ইন্টারনেট
খোলাবার্তা২৪ ডেস্ক : স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন বাংলাদেশের বেক্সিমকো এবং ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউটের মধ্যে একটি চুক্তির অধীনে তারা যে পরিমাণ করোনা ভাইরাসের টিকা কিনেছেন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছ থেকে তারা যে টিকা পাবার আশা করছেন তার পরিমাণ হবে সব মিলিয়ে চার কোটি ৯০ লাখ ডোজ।
ভ্যাকসিন চলে আসায় নজিরিবিহীন এই সঙ্কট থেকে পরিত্রাণের একটা আশাবাদ তৈরি হয়েছে। পৃথিবীতে অন্তত দুটো দেশে সাধারণ মানুষকে কোভিডের টিকা দেওয়া শুরু হয়ে গেছে।
এই পটভূমিতে বাংলাদেশে মানুষের মধ্যে টিকা নেয়া সম্পর্কে কী ধরনের ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তাবাসসুম মুনতাহা। চলতি বছরের মার্চ মাসে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়েছিল তখন অন্যদের মতো তিনিও বেশ উদ্বিগ্ন ছিলেন।
এর কয়েকমাস পরে জীবনযাত্রা যখন স্বাভাবিক হতে শুরু করে তখন সে ভয় কেটেছে।
সংবাদমাধ্যমে তিনি সম্প্রতি তিনি লক্ষ্য করেছেন যে ব্রিটেন এবং রাশিয়ায় কোভিড১৯-এর টিকা দেয়া শুরু হয়ে গেছে।
মিস মুনতাহা আশা করেন, ২০২১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশে হয়তো করোনাভাইরাসের টিকা আসতে পারে।
তবে টিকার ব্যাপারে মিস মুনতাহা এবং তার পরিবার বেশ সাবধানী। বাংলাদেশে টিকা আসলেই সাথে সাথে সেটি নেবেন না তারা।
কারণ, টিকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে তিনি সাবধানী।
তিনি বলেন, “এইটা একটা নতুন জিনিস। সাইড ইফেক্টের ব্যাপারটি আমরা আগে দেখবো। অন্যরা টিকা নিলে আমরা সেটা পর্যবেক্ষণ করবো। তারপর সিদ্ধান্ত নেবো। অপেক্ষা করবো।”
ব্রিটেন এবং রাশিয়াতে টিকা দেয়া শুরু হবার পর বাংলাদেশে অনেকে বেশ আশাবাদী হয়েছেন।
রাজশাহীর বাসিন্দা কামরুজ্জামান সরকার মনে করেন, বাংলাদেশে টিকা সহজলভ্য হতে দেরি হবে।
তিনি বলছেন, “যেহেতু এখনো বিশ্বের বড়-বড় দেশগুলো ঠিকমতো শুরু করতে পারেনি, কেবল তারা শুরু করেছে অল্প-অল্প করে। এ কারণে আমাদের এখানে টিকা আসতে দেরি হবে।”
যদিও বাংলাদেশে টিকা সহজলভ্য হলে নিতে আগ্রহী মি. সরকার। কিন্তু বিষয়টি নির্ভর করছে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কতটা হবে তার উপর।
তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলোতে টিকা প্রয়োগের অনেক পরে যেহেতু এটি বাংলাদেশে আসবে, সেজন্য এই টিকা কতটা কার্যকর এবং এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিষয়গুলো এরই মধ্যে পরিষ্কার হয়ে যাবে।
“বাইরের দেশে যে কাজগুলো হচ্ছে সেটার সফলতা দেখে এবং তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি না সেটা দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নেব,” মি. সরকার বলেন।
বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?
টিকা উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে যারা এগিয়ে আছে তার মধ্যে আমেরিকার কোস্পানি ফাইজার অন্যতম।
এই টিকা এরই মধ্যে ব্রিটেনে প্রয়োগ শুরু হয়েছে। যদিও আমেরিকা এখনো সেটির প্রয়োগ শুরু করেনি।
ফাইজারের টিকা পরিবহন এবং সংরক্ষণ করতে হবে হিমাঙ্কের ৭০ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার নিচে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর সহযোগী অধ্যাপক ড. লায়লা খালেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, ফাইজার টিকার তাপমাত্রা সংরক্ষণ করার সক্ষমতা বাংলাদেশের হাসপাতাল কিংবা হেলথ সেন্টারগুলোতে নেই।
তিনি বলেন, টিকা আনার পর সেটির পরিবহন এবং সংরক্ষণ কীভাবে হবে সে বিষয়টি আগে নির্ধারণ করতে হবে।
ড. লায়লা খালেদ বলেন, বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ কোভিড-১৯ টিকা সম্পর্কে অবগত নয়।
তিনি বলেন, এই টিকা দেশের সব মানুষকে বিনামূল্যে দেয়া উচিত। এই টিকার জন্য দাম নির্ধারণ করলে বেশিরভাগ মানুষ সেটি গ্রহণ করবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
“বড় জনগোষ্ঠীকে আমরা যদি টিকা আওতায় আনতে না পারি তাহলে এই রোগ নির্মূল হবে না,” বলেন ড. লায়লা খালেদ।
সরকার কী বলছে?
ইতোমধ্যে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি ডোজ টিকা ক্রয়ের জন্য বাংলাদেশের বেক্সিমকো এবং ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউটের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছে।
ব্রিটেনের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকা কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে তৈরি করোনাভাইরাসের টিকাটি ভারতে উৎপাদনের দায়িত্ব পেয়েছে সিরাম ইন্সটিটিউট।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, সরকার কোভিড-১৯ টিকার ব্যবস্থা করছে।
তিনি বলেন, “আমরা আশা করি সামনের মাসের প্রথম দিকেই আমরা টিকা পেয়ে যাব। অক্সফোর্ড- অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন আমরা ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউটের মাধ্যমে ব্যবস্থা করেছি।”
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, তিন কোটি ডোজ টিকা সরকার সরাসরি নিয়ে আসছে। এছাড়া জনসংখ্যার ২০ শতাংশকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা টিকা দেবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মন্ত্রী জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে টিকা দেবে সেটার জন্য হয়তো কিছুটা সময় লাগতে পারে।
তিনি দাবি করেন, অনেক দেশ এখনো ‘টিকার ব্যবস্থা’ করতে পারেনি। সে তুলনায় বাংলাদেশ অনেক আগেই টিকার ব্যবস্থা করেছে বলে তিনি দাবি করেন।
মি. মালেক বলেন, টিকা সংগ্রহের জন্য টাকার কোন সমস্যা হবে না। এজন্য বিশ্বব্যাংক সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। – বিবিসি অবলম্বনে