চট্টগ্রাম ব্যুরো : সফরকারী ভারতীয় ক্রিকেট দলকে বাংলাওয়াশ করার লক্ষ্য নিয়ে আজ তৃতীয় ওয়ানডেতে মাঠে নামছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। প্রথম দুই ম্যাচ জয়ের পর প্রথমবারের মত ক্রিকেটের যেকোন ফরম্যাটে ভারতকে বাংলাওয়াশের লক্ষ্যে আজ চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে মাঠে নামছে টাইগাররা।

আজকের ম্যাচটি শুরু হবে দুপুর ১২টায়। টি-স্পোর্টস ও গাজী টেলিভিশন ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে।

প্রথম ওয়ানডেতে ১ উইকেটের পর দ্বিতীয় ম্যাচে ৫ রানে জয়ী হয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ভারতের বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক ওয়ানডে সিরিজ নিশ্চিত করেছে টাইগাররা। বাংলাদেশের দুই জয়েই নায়ক ছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। হারের মুখ থেকে দুই ম্যাচেই বাংলাদেশকে জয় এনে দেন মিরাজ।

প্রথম ম্যাচে শেষ উইকেটে ৫১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে বাংলাদেশকে অবিশ্বাস্য জয় এনে দেন মিরাজ। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৬৯ রান তুলতেই ৬ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। আট নম্বরে ব্যাট হাতে নেমে ইনিংসের শেষ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মিরাজ। ৮৩ বলে অপরাজিত ১০০ রান করেন তিনি। মিরাজের সেঞ্চুরিতেই ৭ উইকেটে ২৭১ রান পায় বাংলাদেশ।

ওদিকে, বাঁ-হাতের বুড়ো আঙুলে ইনজুরির কারণে ভারতের ইনিংস শুরু করতে পারেননি অধিনায়ক রোহিত শর্মা। শেষ দিকে ইনজুরি নিয়ে ব্যাট করতে নেমে ২৮ বলে অপরাজিত ৫১ রান করে ভারতকে জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছিলেন রোহিত। তবে শেষ পর্যন্ত জয়ের পায় বাংলাদেশই।

কঠিন পরিস্থিতি থেকে ঘুড়ে দাঁড়িয়ে ভারতকে পরপর দুই ম্যাচে হারানোয় আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ দল। এবার টিম ইন্ডিয়াকে বাংলাওয়াশের মিশনে বাড়তি সুবিধাও পাবে তারা। ইনজুরির কারণে সিরিজের শেষ ম্যাচ থেকে ছিটকে গেছেন রোহিতসহ তিনজন খেলোয়াড়। অতিরিক্ত ক্রিকেট খেলার মাশুল দিতে হয়েছে ভারতকে। রোহিতের পরিবর্তে শেষ ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দিবেন লোকেশ রাহুল। রোহিতের সাথে দেশে ফিরেছেন দুই পেসার দীপক চাহার এবং কুলদীপ সেন।

দ্বিতীয় ম্যাচে মাত্র তিন ওভার বল করেছেন চাহার। তার অনুপস্থিতিতে অন্যান্য বোলারদের ব্যর্থতায় ডেথ ওভারে ভারতের বিপদ বাড়ে। শেষ পাঁচ ওভারে বাংলাদেশ তুলে নিয়েছে ৬৮ রান। ওয়ানডের পর এমনকি টেস্ট সিরিজও মিস করতে পারেন রোহিত। ভারতের আন্তর্জাতিক সূচি এতটাই ব্যস্ত যে, গত ছয় মাস ধরে প্রায় সময় বাড়ির বাইরে ক্রিকেটাররা। এমনকি ভারতের রোটেশন পদ্ধতিও কাজে আসেনি।

কিন্তু প্রতিপক্ষের ইনজুরি, উদ্বেগ বা ঠাসা সূচি নিয়ে ভাবতে চায় না ভারতের মত শক্তিশালী দলকে বাংলাওয়াশের স্বপ্ন টাইগারদের। এবার আর এই সুযোগ হারাতে চায় না তারা। এর আগে ২০১৫ সালে সিরিজের শেষ ম্যাচে হেরে ভারতকে বাংলাওয়াশের সুযোগ হারায় টাইগাররা।

বাংলাদেশের ফিল্ডিং কোচ শেন ম্যাকডারমট বলেন, আমাদের কাজ এখনো শেষ হয়নি। এই দলটি কখনোই ভারতকে ৩-০ ব্যবধানে হারায়নি। এটাই এখন আমাদের মূল লক্ষ্য।

তিনি আরো বলেন, ৩-০ ব্যবধানে জিততে পারলে আমরা অবশ্যই নিজেদের গর্বিত মনে করবো। এর আগে আমরা পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জিতেছি। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলার খুব কাছাকাছি চলে গিয়েছিলাম। আমরা এখন প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলছি এবং আমরা চাপের মুখে জিততে শুরু করছি। আমি জানি, সিরিজ জয়ের পর ছেলেরা আরো একটি ম্যাচ জিততে মুুখিয়ে আছে।

ভারতকে হোয়াইটওয়াশের লক্ষ্য থাকায় একাদশে পরিবর্তনের কোন সম্ভাবনা নেই বলেই ইঙ্গিত দিয়েছেন ম্যাকডারমট।

নিয়মিত অধিনায়ক রোহিতসহ তিনজন খেলোয়াড় ইনজুরিতে পড়ায় একাদশে পরিবর্তন আনতে হবে ভারতকে। ইতোমধ্যে দলে স্পিনার কুলদীপ যাদবকে যোগ করেছে তারা। শেষ ওয়ানডেতে তার খেলার সম্ভাবনা রয়েছে। যেকোন ভাবে বাংলাওয়াশ এড়াতে চাইছে ভারত।

চট্টগ্রামের উইকেট সাধারণত বাউন্সি হয়ে থাকে। বিদেশী দলগুলোর জন্য এটি বড় শক্তি হিসেবে কাজ করে। কিন্তু এবারের উইকেটে স্বাগতিকরা সুবিধা পাবে বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। স্বাগতিক দলের সুবিধা প্রাপ্তিই বিশ্ব ক্রিকেটের আদর্শ নিয়ম।

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ও ভারত ৩৮বার মুখোমুখি হয়েছে। এরমধ্যে বাংলাদেশ জিতেছে সাতটিতে। ভারতের জয় ৩০টিতে। একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়।

বাংলাদেশ দল : লিটন দাস (অধিনায়ক), এনামুল হক বিজয়, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, আফিফ হোসেন, ইয়াসির আলি চৌধুরি, মেহেদি হাসান মিরাজ, মুস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ, এবাদত হোসেন চৌধুরী, নাসুম আহমেদ, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, নাজমুল হোসেন শান্ত ও নুরুল হাসান সোহান।

ভারত দল : লোকেশ রাহুল (অধিনায়ক), বিরাট কোহলি, রজত পাতিদার, শিখর ধাওয়ান, শ্রেয়াস আইয়ার, ইশান কিশান (উইকেটরক্ষক), রাহুল ত্রিপাঠি, শাহবাজ আহমেদ, অক্ষর প্যাটেল, ওয়াশিংটন সুন্দর, শারদুল ঠাকুর, মোহাম্মদ সিরাজ ও কুলদীপ যাদব।