বগুড়া অফিস : বগুড়ায় ভূমিদস্যুদের অপতৎপরতায় সাধারণ মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেই বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

জানা গেছে, বগুড়া জেলার ১২ উপজেলায় ভূমিদস্যু চক্র জোরপূর্বক মানুষের জমি, বালু মহাল দখল, দখলকৃত ভূমি থেকে মাটি ও বালু উত্তোলন করে বিক্রির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এ ছাড়া ভূমিদস্যুরা শ্যালো মেশিন দ্বারা মাটি ও বালু উত্তোলনের ফলে স্ব-স্ব এলাকার ভূ-বৈচিত্র্যের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে। একইভাবে নির্বিচারে মাটি ও বালু উত্তোলনের ফলে অনেক এলাকায় ব্যাপক ভূমি ধসের সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে বাড়ি ঘর, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা যেমন নদী বা পুকুরের গর্ভে বিলিন হচ্ছে তেমনিভাবে জনসাধরণের চলাচলের রাস্তাঘাট ভেঙে যাচ্ছ। এতে কোথাও কোথাও মাটি দেবে যাওয়াতে যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট এলাকা সমূহের জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ভূমি দস্যুরা প্রভাবশালী এবং ক্ষমতাসীন দলের নাম ব্যবহার করে এসব অপকর্ম করায় ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহসও পাচ্ছে না। তাই এ বিষয়ে ভুক্তভোগীরা জেলা প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ দাবী করেছেন।

সম্প্রতি বগুড়া শহরতলীর রাজাপুর, নওদাপাড়া, শাজাহানপুর, কাহালু, আদমদিঘী, দুপচাঁচিয়া ও ধুনট উপজেলার একাধিক গ্রাম এবং নদী তীরবর্তি এলাকার আবাদি জমি পরিদর্শন কালে দেখা গেছে, স্থানীয় চিহ্নিত ভ‚মি দস্যুরা জোরপূর্বক মানুষের আবাদি জমি, খাস জমি, বাসযোগ্য ভূমি, দখল করে অবাধে সেখান থেকে মাটি ও বালি উত্তোলন করছে।

গত সপ্তাহে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার আশেকপুর ইউনিয়নের বৈঠাপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে , এলাকার আব্দুস সামাদ আকন্দের পুত্র রাজনৈতিক প্রভাবশালী আবু সুফিয়ান একই এলাকার জনৈক আবুল কালাম আজাদের বসত বাড়ী সংলগ্ন পতিত জায়গা ও পুকুর থেকে ফ্যাকো মেশিন দিয়ে খনন করে শত-শত টন মাটি উত্তোলন করছে এবং ট্রাক যোগে উত্তোলনকৃত মাটি বগুড়া শহর সহ বিভিন্ন উপজেলায় বিক্রি করছে। ইতিমধ্যেই মাটি উত্তোলনের জায়গায় একাধিক গভীর খাদের সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি এলাকায় ব্যবহারের একমাত্র ইটের রাস্তাটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। রাস্তার কোথাও কোথাও দেবে গেছে। ফলে অত্র এলাকার সাধারণ মানুষ তথা শ্রমজীবীদের পথ চলা সহ পণ্য পরিবহন করা দুস্কর হয়ে পড়েছে। এর ফলে মাঝে মধ্যে উক্ত সড়কে ছোট-মাঝারি যানবাহন উল্টে একাধিক দুর্ঘটনাও ঘটেছে। অথচ এলাকার সাধারণ মানুষ আবু সুফিয়ানের ভয়ে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না।

এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্থ ভূমি মালিক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ওরা প্রভাবশালী নেতা। তাই কিছু বলতে পারি না। পাশাপাশি আমি অসুস্থ অবস্থায় বিশ্রামে থাকায় এ বিষয়ে প্রতিকার চাওয়ার মতো শারীরিক অবস্থাও নেই।

একইভাবে অত্র এলাকার বাসিন্দা ভ্যান চালক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, স্যার কি বলবো আমরা গরিব মানুষ তাই কিছু বলার সাহস পাই না। আবু সুফিয়ানের কারণে আমাদের এলাকার একমাত্র রাস্তাটি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। অনুরূপ ভাবে এলাকার কৃষক রহিম উদ্দিন বলেন, অব্যাহত মাটি উত্তোলনের ফলে আমাদের একমাত্র চলাচলের ইটের রাস্তা দিয়ে রাতের বেলায় চলাচল করা যায় না। অনেক জায়গায় গর্ত হওয়ার কারণে মাঝে মধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে।

এ বিষয়ে শাজাহানপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশিক খান বলেন, বিষয়টি জনগুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় আমি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব।

অবৈধ ভূমি দস্যুদের মাটি ও বালু উত্তোলনের বিষয়ে শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা পারভীন বলেন, ভূমি দস্যুদের অপতৎপরতা বন্ধে ইতিমধ্যে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান শুরু হয়েছে। ভূমিদস্যুদের অপতৎপরতা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত এ অভিযান চলবে।