জিলা স্কুলে অভিভাবকদের হাঙ্গামা
বগুড়া অফিস : ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে সরকারী স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তির জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ছাত্রদের নাম বাদ পড়ার জের ধরে বগুড়া জিলা স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে অভিভাবকদের হাতাহাতির অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (২১ ডিসেম্বর) সকাল ১১ টার দিকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
বগুড়া জিলা স্কুল সূত্রে জানা গেছে, চলতি ডিসেম্বর মাসে একযোগে দেশের সব সরকারি বিদ্যালয়ে অনলাইনের মাধ্যমে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। গত ১২ ডিসেম্বর বিকেল ৫ টার দিকে ডিজিটাল পদ্ধতির লটারীর ফলাফল ঘোষণা করা হয় অনলাইনে ও স্কুলের নোটিশ বোর্ডে। এ সময় একই শিক্ষার্থীর নাম ভর্তি তালিকায় একাধিকবার পাওয়া যায় । শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা আবেদন প্রক্রিয়ায় কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে একাধিকবার আবেদন করায় এমনটি ঘটে।
এ নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) সর্বশেষ নির্দেশ দেয় একাধিকবার আবেদনকারী শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেনা। এ নিদের্শের আলোকে ভর্তি প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে বগুড়া জিলা স্কুল কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার থেকে শিক্ষার্থীদের আবেদন ও কাগজ পত্র যাচাই-বাছাই শুরু করে। এ সময় স্কুল কর্তৃপক্ষ গতমঙ্গলবারে ২০৫টি শূণ্য আসনের বিপরীতে অনলাইন লটারীতে নির্বাচিত ৫৪ শিক্ষার্থীর আবেদন বাতিল করে তালিকা প্রকাশ করে। একাধিকবার আবেদন, আবেদনের সাথে জন্মনিবন্ধনের মিল না থাকা ও অনলাইন জন্মনিবন্ধন না থাকায় তাদের আবেদন বাতিল করা হয় বলে স্কুল সূত্র জানিয়েছে।
এ তালিকা দেখে ক্ষুদ্ধ হয়ে বুধবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে প্রায় ২০ জন নারী ও পুরুষ অভিভাবক জিলা স্কুলের প্রশাসনিক ভবনের দরজায় ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন। এক পর্যায়ে তারা প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। এ সময় অভিভাবকরা শিক্ষদের ওপর চড়াও হয়ে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় তাদের হেনস্থার শিকার হন কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মচারী।
একাধিকবার আবেদনে বাদ এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক রেফাত আরা বলেন, আমি না বুঝেই দিবা ও প্রভাতি শাখার একবার করে দু’বার আবেদন করেছি। এজন্য আমার ছেলেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বাদ দিলে কেন তারা আবেদন একাধিকবার নিয়েছে।
বগুড়া জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামপদ মোস্তফী জানান, লটারিতে জালিয়াতি করায় মঙ্গলবার ৫৪ শিক্ষার্থীর আবেদন বাতিল করা হয়েছে। বুধবার দুপুর পর্যন্ত আরও ৩ শিক্ষার্থীর আবেদন বাতিল হয়েছে। মাউশি’র নির্দেশে আমরা এ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। কিছু অভিভাবক হট্টগোল করলে তাদের নিয়ন্ত্রণে এনে মাউশির কাছে আবেদনের পরামর্শ দিয়েছি।
বগুড়া সদর পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) খোরশেদ আলম জানান, কিছু অভিভাবক হট্টগোল করেছিলেন। এরপর আমাদের সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এখন কোন ঝামেলা নেই।
বগুড়া জিলা স্কুল সূত্রে আরও জানা যায়, এ বছর তৃতীয় শ্রেনীর ২০৫টি শূণ্য আসনে ভর্তির জন্য ১১ হাজার ৪০০ শিক্ষার্থী অনলাইনে আবেদন করে। এরমধ্যে প্রভাতি ও দিবা শাখায় ২০৬ শিক্ষার্থী লটারিতে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়। কিন্তু মাউশি আবেদন প্রক্রিয়ায় জালিয়াতি ও ত্রুটি থাকা শিক্ষার্থীদের বাদ দেওয়ার নির্দেশ দিলে কাগজপত্র জমা নিয়ে যাচাই বাছাই শেষে লটারীতে নির্বাচিত ২০৬ জনের মধ্যে মাত্র ৬৫জন বৈধ বলে বিবেচিত হয়। বাকী শূণ্য আসনে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ভর্তি করা হবে।
এদিকে বগুড়া সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শূণ্য ২০৬টি আসনে লটারীতে নির্বাচিতদের মধ্য থেকে মাউশির নির্দেশনা মোতাবেক ৮৮জন ভর্তির জন্য বৈধ বলে বিবেচিত হয়েছে। শূণ্য আসনে অপেক্ষমান তালিকা থেকে ভর্তি করা হবে।
অপরদিকে বগুড়া সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এক শিক্ষার্থী ১৫৬টি আবেদন করে ৩টি আবেদন লটারীতে নির্বাচিত হয়। কিন্তু মাউশির বিধি মোতাবেক তার আবেদন অবৈধ ঘোষনা করা হয়েছে। ফলে দেখা যাচ্ছে, দুটি সরকারী স্কুলে লটারীতে নির্বাচিত ৪১১ জনের মধ্যে ১৫৩জন ভর্তির জন্য বৈধ বলে বিবেচিত হয়েছে।