শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি : বগুড়ার শেরপুরে সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই বিগত কয়েকদিন ধরেই দরপত্র ছাড়াই সরকারি বেশ কয়েকটি মূল্যবান মেহগণি গাছ কাটলেন ভূমি অফিসের কর্তা ব্যক্তিরা। বৃহস্পতিবার (৩ জুন) দুপুরের দিকে উপজেলার গাড়ীদহ ইউনিয়ন (ভূমি) অফিস প্রাঙণে গিয়ে অন্তত ছয়টি মেহগণি গাছ কাটার নমুনা দেখা যায়।

সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের উপ-সহকারি (ভূমি) কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজার দাবি, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সবকিছুই জানেন। বিশেষ করে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) এ্যাসিল্যান্ড স্যারের নির্দেশেই গাছগুলো কাটা হয়েছে। তাই কিছু বলার বা জানার থাকলে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। এক্ষেত্রে কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন ওই ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা।

জানা যায়, ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের পাশেই উপজেলার রহমাননগর (কলতাপাড়া) এলাকায় গাড়ীদহ ইউনিয়ন (ভূমি) অফিসটির অবস্থান। ইটের প্রাচীর বেষ্টিত সবুজ চত্বর। প্রায় দুইবিঘা জায়গা জুড়েই রয়েছে বেশকিছু পুরণো দামি দামি বনজ ও ফলজ গাছ। আর উত্তর-পশ্চিম কোণে অবস্থিত ভূমি অফিস। সামনেই স্তুপ করে রাখা হয়েছে কিছু কাটা মেহগণি গাছের গুঁড়ি। তার পাশেই কাটা মেহগণি গাছগুলোর গোড়া অবিকল রয়েছে। কোনোটির গোড়া মাটি খুঁড়ে তুলে ফেলা হলেও ছয়টি গাছের গোড়া ও শিকড় এখনো রয়েছে। তবে কেটে ফেলা গাছের ডাল-পালাগুলো দেখা যায়নি।

এসময় অফিসটির একজন কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ডাল-পালার মতো অফিসের সামনে স্তুপ করে রাখা গাছের গুঁড়িগুলোও হয়তো রাঁতের আধারে উধাও হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ ভূমি অফিসের দুই পাশে সীমানা প্রাচীর থাকলেও অন্য দুইপাশে কোনো প্রাচীর নেই। তাই বেশিরভাগ সময় এই এলাকাটি অরক্ষিত থাকে। তাছাড়া সপ্তাহের দুইদিন সরকারি ছুটির কারণে অফিস বন্ধ থাকে। তাই কেউ এখানে আসে না।

স্থানীয় বাসিন্দা আনিছুর রহমান, সাইদুর রহমান, ওহিদুল আলম বলেন, তিন-চারদিন ধরে দেখছি বেশ কয়েকজন শ্রমিক গাড়ীদহ ভূমি অফিসের সরকারি গাছগুলো কাটছেন। এরবেশি কিছু জানি না। তবে শ্রমিকদের কাছ থেকে শুনেছেন, ভূমি অফিসের স্যারদের নির্দেশেই গাছগুলো কাটার কাজ করছেন। দশ হাজার টাকায় চুক্তিতে এসব গাছ তারা কেটে দিচ্ছেন বলেও জানান।

সরকারি মাল দরিয়ায় ঢাল-এমন মন্তব্য করে ওইসব স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকাশ্যে দরপত্র আহবান করে বিক্রি করা হলে গাছগুলো ন্যায্যমূল্যে বিক্রির মাধ্যমে অনেক বেশি রাজস্ব আদায় হতো। সরকারি কোষাগারে জমা হতো টাকা। কিন্তু এখন কী আর সেটি হবে। আপনাদের (সাংবাদিক) পত্রিকায় লেখার কারণে হয়তো সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে জবাব চাওয়া হবে। কিছুদিন চলবে চিঠি চালাচালি। এরইমধ্যে সব চাপা পড়ে যাবে। এভাবেই পার পেয়ে যাবে সরকারি সম্পদ লুটপাটকারীরা। তাই এসব নিয়ে আর কিছু বলতে চাই না-বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) সাবরিনা শারমিন বলেন, ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ কাজ শুরু হয়েছে। এজন্য জরুরি ভিত্তিতে গাছগুলো কাটার প্রয়োজন হওয়ায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করেই সেটি করা হয়েছে। এছাড়া সড়কের কাজও সরকারি। তাই সরকারি কাজের জন্য সরকারি গাছ কাটা হয়েছে। তবে কাটা গাছগুলো ইউনিয়ন (ভূমি) অফিসের সামনেই রাখা হয়েছে। দরপত্রের মাধ্যমেই সেটি বিক্রি করা হবে বলেও দাবি করেন তিনি।