কেনিয়ার দরিদ্র নারীরা পরিস্থিতির শিকার হয়ে পাচারকারীদের ফাঁদে পা দিচ্ছেন। ছবি: ইন্টারনেট
খোলাবার্তা২৪ ডেস্ক : বিবিসির আফ্রিকা আই অনুসন্ধান বিভাগ গত মাসে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে শিশু ব্যবসার রমরমা কালোবাজারের খবর উদঘাটন করার পর পুলিশ পাচারের অভিযোগে সাতজনকে গ্রেফতার করে। কিন্তু মুনাফার লোভে কালোবাজারে অবৈধভাবে যেসব মায়েদের শিশু বিক্রি হয়েছে, কেন তারা এই পথে গেছেন? কেন সামান্য অর্থের বিনিময়ে নিজের সন্তান বিক্রি করে দিয়েছেন?
আডামার বাবা মা যখন বেঁচে ছিলেন, তখন তার জীবন অনেক সহজ ছিল, তিনি বলছেন। তাদের পরিবার স্বচ্ছল ছিল না, চাইলেও সবকিছু করার সামর্থ্য ছিল না, কিন্তু তারপরেও জীবনে একটা শৃঙ্খলা ছিল। তিনি স্কুলে গেছেন, স্কুলজীবন আনন্দে কেটেছে। কোন কিছু নিয়ে তাকে চিন্তা করতে হতো না। বাবা মারা গেলেন তার ১২ বছর বয়সে। কয়েক বছর পরে মাও মারা গেলেন।
”জীবন খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়াল,” কেনিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে এক গ্রামে বসে কথা হচ্ছিল আডামার সাথে। ”আমাকে স্কুল ছেড়ে দিতে হল জীবিকার তাগিদে।”
আডামার যখন ২২ বছর বয়স এক পুরুষের সাথে তার পরিচয় হয়, আডামা অন্ত:স্বত্তা হন। কিন্তু তাদের কন্যা সন্তান জন্মানোর তিনদিন পর সন্তানের বাবাও মারা যান। তার একাকীত্বের যন্ত্রণা গভীর হয়।
বাচ্চাটা ১৮ মাস বয়স হওয়া পর্যন্ত নানা অসুখে ভুগত। এরপর মেয়ের অবস্থা স্থিতিশীল হবার পর তাদের দুজনের বেঁচে থাকার জন্য আয়ের প্রয়োজন হয়ে পড়ল। আডামা বাচ্চাকে তার বৃদ্ধা নানীর কাছে রেখে নাইরোবি গেলেন কাজের খোঁজে।
”মনে রেখো, বাচ্চাটার জন্যই তুমি কাজের খোঁজে ছুটে যাচ্ছ,” নানী বলেছিলেন।
আডামা নাইরোবি পৌঁছে প্রথমে রাস্তায় তরমুজ বিক্রির কাজ নেয়। এতে আয় হত খুবই সামান্য। যার সাথে ভাগাভাগির বন্দোবস্তে সে বাসা ভাড়া নিয়েছিল, আডামা বাসায় না থাকলে ঘরে রাখা তার আয়ের অর্থ সেই মেয়েটি চুরি করে নিত। শহরের জীবন খুবই কঠিন ছিল। তার কপালে একটা ক্ষত ছিল। আডামা বলছিলেন নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হয়েছিলেন, “কিছু পুরুষ আমার সাথে অসদাচরণ করার চেষ্টা করেছিল, নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে আঘাত পেয়েছিলাম।”
আডামা এরপর নির্মাণ শ্রমিক হিসাবে কাজ করতে যান, কিন্তু সেখানে কোন বেতনই পেতেন না। এরপর একটি নাইটক্লাবে তার কাজ জোটে। প্রথমে তিনি তার বসকে বলেছিলেন তার বেতনের পুরো অর্থ সরাসরি গ্রামে তার নানীর কাছে পাঠিয়ে দিতে। পরে তিনি বেতনের কিছু অর্থ নিজের জন্য রাখার সিদ্ধান্ত নেন। নাইরোবিতে একটি বাসা ভাড়া নেন। আর একটু ভাল বেতনের কাজ জোগাড় হয় আরেকটি নির্মাণ সাইটে। সেখানে এক পুরুষের সাথে আলাপ হয়। দুজনে মেলামেশা শুরু করেন। পুরুষটি তাকে বলে সে বাচ্চা চায়।
আডামা একটা শর্ত দেন। বলেন ওই পুরুষ যদি তার কন্যা সন্তানকে গ্রাম থেকে নিয়ে আসার ব্যাপারে রাজি হয়, যাতে তারা একসাথে থাকতে পারে, তাহলে ওই পুরুষের সাথে আরেকটি সন্তান নিতে তিনি রাজি আছেন। পুরুষটি রাজি হন। আডামা অন্ত:স্বত্তা থাকার প্রথম পাঁচ মাস তিনি বাসাভাড়া, ও যাবতীয় খরচ দিয়েছেন, খাবারদাবার কিনেছেন। আডামা তখনও তার মেয়েকে গ্রাম থেকে শহরে আনার জন্য সঠিক সময়ের অপেক্ষায় ছিলেন। এরই মধ্যে পুরুষটি একদিন তাকে ছেড়ে চলে যায়। সে আর কখনও ফিরে আসেনি।
অনেক নারীই জানে একজন সন্তানকে পৃথিবীতে আনার আগে তার খাওয়াপরা জোগানোর চিন্তা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আর দুজন হলে তো সে চিন্তা আরও বেড়ে যায়। কেউই অপরিচিত লোকের কাছে নিজের সন্তান বিক্রি করার কথা কখনই ভাবে না। কিন্তু কেনিয়ার দরিদ্র কিছু নারী অভাবে পড়ে বাঁচার শেষ উপায় হিসাবে পাচারকারীদের কাছে তাদের শিশুসন্তানদের বিক্রি করছে।
পাচারকারীরা এর বিনিময়ে এসব নারীকে এত কম অর্থ দেয় যা অভাবনীয়। আরেকজন নারী সারা, যখন দ্বিতীয়বার গর্ভধারণ করেন, তার বয়স ছিল ১৭। বাচ্চার ভরনপোষণের সামর্থ্য তার ছিল না। এক মহিলার কাছে সে বাচ্চাকে বিক্রি করে দেয় ৩০০০ কেনিয়ান শিলিং-এর বিনিময়ে- পাউন্ডের হিসাবে যার অর্থমূল্য মাত্র বিশ পাউন্ড।
“আমার বয়স ছিল কম, আমি যে কী ভুল করছি, তখন বুঝিনি,” তিনি বলেন। “পাঁচ বছর পর আমি বুঝেছিলাম কী করেছি। আমি মহিলাকে ওই অর্থ ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম।”
তিনি বলেন, আরও কয়েকজন নারীর কথা তিনি জানেন যারা প্রায় একই অর্থের বিনিময়ে সন্তানকে বেচে দিয়েছে।
“চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে মেয়েরা সন্তান বিক্রি করছে। অনেকে মায়ের দাবি মেটাতে না পেরে সন্তান বেচেছে, অনেকে আবার স্কুলে পড়তে পড়তে অন্ত:স্বত্তা হয়ে গেছে ১৫/১৬ বছর বয়সে, যা নানাধরনের সমস্যা তৈরি করেছে। একমাত্র পথ তখন সন্তানকে বিক্রি করে দেয়া।”
“এসব মেয়েদের পরামর্শ দেবার বা তাদের সাথে কথা বলার কেউ নেই।”
আফ্রিকার মধ্যে যেসব দেশে কিশোরীদের মধ্যে গর্ভধারণের হার সবচেয়ে বেশি, তার অন্যতম হল কেনিয়া। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে এই সঙ্কট আরও তীব্র হয়েছে। মহামারির কারণে কিছু নারীকে বাধ্য হয়ে যৌন কর্মীর কাজ করতে হচ্ছে। স্কুল বন্ধ থাকায় অনেক মেয়ের জন্য স্কুল নিয়মের শৃঙ্খলও ভেঙে পড়েছে।
“আমি বহু নারী ও মেয়ের এধরনের পরিস্থিতিতে পড়ার কাহিনি শুনেছি। অল্পবয়সী মেয়েরা কাজের খোঁজে শহরে আসছে, পুরুষদের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে, অন্ত:স্বত্তা হচ্ছে, তারপর সন্তানের বাবা তাদের পরিত্যাগ করে চলে যাচ্ছে,” বলছেন কেনিয়ার মানবাধিকার আইনজীবী প্রুডেন্স মুটিসো। তিনি শিশু সুরক্ষা এবং প্রজনন অধিকার নিয়ে কাজ করেন।
“সন্তানের পিতা যদি এসব নারীদের অর্থ না দেন, তাহলে আয়ের জন্য তাদের বিকল্প পথ খুঁজতেই হয়। আর তার থেকেই সন্তান বিক্রিতে তারা উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। তারা ভাবছে এভাবে নিজেদের এবং হয়ত গ্রামে রেখে আসা আগের সন্তানদের ভরনপোষণের জন্য হাতে কিছু অর্থ আসবে। লোকে এসব নিয়ে কথা বলে না, কিন্তু এটা একটা সমস্যা।”
আডামা যে নির্মাণ কোম্পানিতে কাজ করত, সেখানে তার গর্ভধারণের খবর যতদিন পর্যন্ত সম্ভব লুকিয়ে রেখেছিল। যতদিন না সিমেন্টের ভারী বস্তা তার পক্ষে আর বহন করা সম্ভব হয়নি বা তার পেটের আকৃতি আর গোপন করা সম্ভব হয়নি, সে বলে নি সে অন্ত:স্বত্তা। বললে ঘর ভাড়ার অর্থ হাতে আসত না। তিন মাস তার বাড়িওয়ালা সময় দিয়েছিল। তারপর তাকে তাড়িয়ে দেয় এবং ঘরে কাঠের দেয়াল তুলে ঘর বন্ধ করে দেয়।
আট মাসের অন্ত:স্বত্তা আডামা কোন বাড়ির পেছনে লুকিয়ে ঢুকে রাতটুকু ঘুমতেন, ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে বেরিয়ে যেতেন।
“ভাগ্য ভাল থাকলে কোনদিন কিছু খাবার জুটত,” তিনি বলেন। “কখনও কখনও শুধু পানি খেয়ে কাটত।”
কেনিয়ায় কোন একজন নারী আডামার পরিস্থিতিতে পড়লে, তাদের পাচারকারীদের কব্জায় পড়তে বেশ কয়েকটি কারণ কাজ করে।
দেশটিতে গর্ভবতী মা বা শিশুর জীবন ঝুঁকিতে পড়লে তবেই গর্ভপাত বৈধ। ফলে এসব ক্ষেত্রে গর্ভপাতের জন্য বিকল্প হল ঝুঁকিপূর্ণ হাতুড়েদের শরণাপন্ন হওয়া।
এছাড়াও সমস্যা হল বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েদের যৌনতা ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে শিক্ষাদানের অভাব, বিশেষ করে গ্রাম এলাকায়। তাছাড়া বৈধ পথে শিশুকে দত্তক দেয়ার ব্যবস্থা সম্পর্কেও সচেতনতার বড় অভাব রয়েছে।
“কোন নারী বা কিশোরী গর্ভের সন্তান না চাইলে সরকারের দিক থেকে তাকে সাহায্য করার কোন ব্যবস্থা নেই,” বলছেন হেল্থ পভার্টি অ্যাকশন নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কেনিয়া শাখার পরিচালক ইব্রাহিম আলি। “এসব নারী প্রায়শই গ্রামাঞ্চলে অবস্থার শিকার হয়ে পড়েন এবং তাদের একঘরে করার প্রবণতা থাকে, ফলে তারা পালানোর পথ বেছে নেন, এবং শহরে গিয়ে তারা ঝুঁকির মুখে থাকেন।”
তার সন্তানকে বৈধভাবে ও নিরাপদে কারো হাতে তুলে নেবার যে পথ আছে আডামা তা জানতেনই না। দত্তক প্রক্রিয়া সম্পর্কে তার কোন ধারণাই ছিল না। “আমি জানতামও না, কখনও এ বিষয়ে শুনিওনি,” তিনি বলেন।
তিনি হাতুড়েকে দিয়ে গর্ভপাতের কথা ভেবেছিলেন, তিনি বলেন। কিন্তু ধর্মবিশ্বাসের কারণে তা তিনি করতে পারেননি। তিনি এরপর আত্মহত্যার কথাও ভেবেছিলেন।
“আমার মনের ওপর প্রচণ্ড চাপ ছিল, ভাবছিলাম পানিতে ডুবে কীভাবে আত্মহত্যা করা যায়, যাতে মানুষ আমার কথা পুরো ভুলে যায়।”
তার সন্তান প্রসবের কয়েক সপ্তাহ আগে একজন তার সাথে মেরি আওমা নামে এক মহিলার আলাপ করিয়ে দেয়। তিনি বলেন গর্ভপাত বা আত্মহত্যা কোনটাই করো না। তিনি নাইরোবির বস্তি এলাকা কেওলে রাস্তার ধারে একটি অবৈধ ক্লিনিক চালাতেন। তিনি আডামাকে ১০০ শিলিং (স্থানীয় মুদ্রা) দেন এবং বলেন পরেরদিন তার ক্লিনিকে যেতে।
মেরি আওমার অস্থায়ী ক্লিনিকটি আসলেই কোন ক্লিনিক নয়। কেওলের রাস্তার পাশে একটা সন্দেহজনক দোকানঘরের পেছনে লুকানো দুটি ঘর নিয়ে এই ক্লিনিক।
দোকানের ভেতর কয়েকটি খালি তাক, তাতে ছড়ানো ছেটানো কিছু পুরনো ওষুধপত্র। তার পেছনে রয়েছে দুটো ঘর, যেখানে নারীদের প্রসব করানো হয়। ভেতরে বসেন মেরি তার সহকারীকে সাথে নিয়ে। মুনাফা রেখে বাচ্চা কেনাবেচা করেন। যারা বাচ্চা কিনছেন তারা কে বা কেন কিনছেন সেসব খোঁজ নেবার কোন দরকার তিনি দেখেন না।
আডামাকে তিনি বলেছিলেন তার খদ্দেররা সবাই মমতাময়ী পরিবার, তারা বাচ্চা নিতে পারেন না, তাই তারা বাচ্চা কেনেন। কিন্তু রাস্তার যে কেউ তার হাতে ঠিক ঠিক নগদ অর্থ তুলে দিলেই আওমা খুশি- তিনি সদ্যোজাতদের বেচে দেন।
মেরি আওমা গর্ভবতীদের বলেন তিনি আগে নার্স ছিলেন। কিন্তু শিশু প্রসবের সময় বড়ধরনের সমস্যা হলে তা মোকাবেলার জন্য কিন্তু তার কাছে না আছে চিকিৎসা বা অন্যান্য সরঞ্জাম বা তার নিজের বিষয়ে কোন দক্ষতা।
“তার ওই ঘরটা নোংরা। রক্তের জন্য তিনি একটা ছোট পাত্র ব্যবহার করেন, ঘরে কোন বেসিন নেই, বিছানাও অপরিষ্কার,” আডামা বলেন। “কিন্তু আমার তখন পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমার কাছে আর কোন বিকল্প ছিল না।”
আডামা যখন সেই ক্লিনিকে পৌঁছন, মেরি আওমা তাকে দুটি ট্যাবলেট খেতে দেন। তিনি বলেননি প্রসববেদনা তাড়াতাড়ি ওঠানোর জন্য তাকে ওই ট্যাবেলট দেয়া হয়েছে, জানান আডামা। আওমার হাতে একজন খদ্দের ছিল এবং তিনি চাইছিলেন তাড়াতাড়ি বাচ্চাটা তার কাছে বিক্রি করে দিতে। আডামা যখন একটি ছেলে সন্তান প্রসব করলেন, জন্মের পর তার বুকের সমস্যা দেখা দিল। মেরি আডামাকে বললেন বাচ্চাটাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে।
এক সপ্তাহ হাসপাতালে থাকার পর শিশুটিকে যখন ছেড়ে দেয়া হল, তখন সে সুস্থ হয়ে গেছে। তার বাড়িওয়ালা, যিনি তাকে বের করে দিয়েছিলেন, তিনি তাকে ঘরে আবার ঢুকতে দেন, এবং আডামা বাচ্চাটিকে সেখানে দেখাশোনা শুরু করেন।
মেরি আওমার সাথে আবার আডামার বাজারে দেখা হয়ে যায়, আওমা তাকে আবার ১০০ শিলিং দেন এবং বলেন পরদিন তার ক্লিনিকে যেতে।
“আরেকটি শিশু জন্মেছে,” আওমা তার খদ্দেরের কাছে টেক্সট মেসেজ পাঠিয়ে বলেন, দাম “৪৫,০০০ শিলিং।”
আডামার তার সন্তানকে কোলে করে আদর করছেন, তাকে বিক্রি করে দেবার কয়েক মুহূর্ত আগে। ছবি: ইন্টারনেট
মেরি আওমা কিন্তু আডামাকে ৪৫,০০০ শিলিং দেবার প্রস্তাব দেননি- পাউন্ডের হিসাবে যা ৩০০ পাউন্ডের সমান। যে অর্থ তিনি খদ্দেরের কাছে দাবি করেছিলেন। তিনি আডামাকে ১০ হাজার শিলিং (প্রায় ৭০ পাউন্ড) দিতে চান। কিন্তু মেরি আওমা জানতেন না যে, যে খদ্দেরকে তিনি ঠিক করেছেন তিনি ছদ্মপরিচয়ে বিবিসির সাংবাদিক। বিবিসি শিশু পাচার নিয়ে প্রতিবেদনের জন্য এক বছর ধরে তাদের অনুসন্ধান চালাচ্ছিল।
আডামা যখন পরদিন মেরির ওই ক্লিনিকে গেলেন, তিনি পেছনের ঘরে বসলেন, কোলে ছিল তার পুত্র সন্তান। তিনি যখন বসেছিলেন তার শিশুর কথিত খদ্দের তার কানে ফিসফিস করে তার কাছে আর কী বিকল্প আছে সে বিষয়ে কিছু বললেন। আডামা সেদিন ছেলে কোলে নিয়ে ক্লিনিক থেকে বেরিয়ে যান। শিশুকে নিয়ে যান সরকার পরিচালিত একটি শিশু আশ্রয় কেন্দ্রে। সেখানে তার শিশুর যত্ন নেয়া হবে যতদিন না বৈধ পথে তার দত্তকের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বিবিসি মেরি আওমাকে বলেছিল তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পর্কে তার কিছু বলার আছে কিনা, মেরি এই প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন।
আডামার বয়স এখন ২৯। তিনি ফিরে গেছেন তার গ্রামে যেখানে তিনি বড় হয়েছিলেন। এখনও তিনি অনেক সময়ই অভুক্ত ঘুমাতে যান। জীবন এখনও তার জন্য সংগ্রামের। কাছের একটা হোটেলে মাঝেমধ্যে তার কাজ জোটে। কিন্তু সেই আয় যথেষ্ট নয়। তার স্বপ্ন তার গ্রামে তিনি একটা জুতার দোকান খুলবেন। নাইরোবি থেকে জুতা এনে বিক্রি করবেন। কিন্তু এটা তার অনেক দূরের স্বপ্ন। ছেলের সাথে তার কোন যোগাযোগ নেই। কিন্তু তার কোন দুঃখ নেই।
“ছেলেকে বিক্রি করতে আমি চাইনি। আমি ওই অর্থ ছুঁতে পর্যন্ত চাইনি। কিন্তু ওকে যখন আর্থিক লেনদেন ছাড়া দিয়ে দিতে হল, তখন দুঃখ পাইনি।”
যে শিশু আশ্রয় কেন্দ্রে তিনি তার ছেলেকে রেখে এসেছেন সেই এলাকা তার পরিচিত। ছেলের জন্মের কয়েকদিন আগে যে বাসা থেকে বাড়িওয়ালা তাকে তাড়িয়ে দিয়েছিল, কেন্দ্রটি তার কাছেই। “আমি জানি এলাকাটা নিরাপদ,” তিনি বলেন, “এবং যারা ওর দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়েছেন তারা ভাল লোক।” – বিবিসি অবলম্বনে