কাজী খলিলুর রহমান, ঝালকাঠি প্রতিনিধি : আষাঢ়ের শেষের দিকেও শুরু হয়নি দক্ষিণাঞ্চলে “বাংলার আপেল”খ্যাত মিষ্টি পেয়ারার সমারোহ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঝালকাঠী সহ দক্ষিণাঞ্চলের ৫৫ গ্রামে উৎপাদিত পেয়ারা ফলনে বিলম্ব হচ্ছে। পেয়ারা পরিপক্ক হতে সময় লাগবে আরো ১৫ দিন। তবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের ফলে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে স্বল্প সময়ে সরবরাহ ও পর্যটকদের আগমনে সম্ভাবনা দেখছেন চাষীরা।

জানা যায়, ঝালকাঠি সদর, পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি ও বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার ৫৫ গ্রাম নিয়ে গড়ে উঠেছে মিষ্টি পেয়ারা রাজ্য। প্রতি বছর আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র মাস এলেই পেয়ারার কারণে পাল্টে যায় ঐ অঞ্চলের চিত্র। পেয়ারা বেচা-বিক্রির জন্য ঐ সব এলাকার খালে রয়েছে ভাসমান বাজার। প্রতিদিন শত শত নৌকায় পেয়ারা বিক্রি করতে আসেন চাষীরা। ট্রাক ও বড় বড় ট্রলার নিয়ে আসেন পাইকাররা।

পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ায় পাইকার ও পর্যটকদের আগমন প্রতি বছরের চেয়ে এ বছর বেশি হবে। ফলে শুধু পেয়ারাই নয় অন্য কৃষি পণ্যও ঢাকাসহ সারাদেশে অল্প সময়ে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে চাষিরা পণ্যের ন্যায্য ও কাঙ্খিত মূল্য পাবেন। সেই সঙ্গে পণ্যের ন্যায্য ও কাঙ্খিত মূল্য পাবেন বলে সম্ভাবনার আশায় বুক বাঁধছেন চাষীরা।

স্থানীয়রা জানায় এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় ভাসমান হাট সদর উপজেলার ভীমরুলীতে যা সারা দেশেই অনন্য। এছাড়াও পাশের পিরোজপুরের স্বরূপকাঠির (নেছারাবাদ) আটঘর, কুড়িয়ানা, আতা, ঝালকাঠির মাদ্রা। এ সবই পিরোজপুর সন্ধ্যা নদী থেকে বয়ে আসা একই খাল পাড়ে অবস্থিত। তবে যথা সময় বৃষ্টি না হওয়ায় আষাঢ়ের শেষের দিকে হলেও এখনো পরিপক্ক হয়নি পেয়ারা। ফলে ভীমরুলী পেয়ারার ভাসমান হাটে পাকা পেয়ারার সমারোহ নেই। ভীমরুলী এলাকার পেয়ারা চাষী গৌতম মিস্ত্রি জানান আমরা কয়েক পুরুষ ধরে পেয়ারা চাষ করেই জীবিকা নির্বাহ করি।

এ বছর ফলন কম ধরেছে। ফলন যা আসছে তাও পরিপক্ক হতে দেরী হচ্ছে। শুধু পেয়ারার দিকে তাকিয়েই দিন গুনছি। কখন পাকতে শুরু করবে আর কবে তা বিক্রি করবো। একই কথা বলেন আদমকাঠি গ্রামের পেয়ারা চাষী প্রেমানন্দ মন্ডল। তবে শ্রাবণের প্রথম সপ্তাহে পেয়ারা তোলার আশা করছেন তারা। ডুমুরিয়া গ্রামের পঙ্কজ বড়াল জানান জ্যৈষ্ঠের শেষের দিকে অথবা আষাঢ়ের প্রথম দিকে পেয়ারা পাকতে শুরু করে। এ বছর পেয়ারা গাছে ফুল দেরীতে আসায় পেয়ারা পাকতেও দেরি হচ্ছে। এ বছর ফলনও কম। তবে দুই বছরের করোনার পর এবার উন্মুক্ত রয়েছে সব কিছুই। দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগের অন্যতম সহজ মাধ্যম পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ায় পাইকার ও পর্যটকদের আগমন প্রতিবছরের চেয়ে এ বছর বেশি হবে। ফলে পেয়ারার সঙ্গে অন্য কৃষি পণ্যও কিনে কম সময়ে ঢাকাসহ সারাদেশে সরবরাহ করতে পারবেন পাইকাররা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মনিরুল ইসলাম জানান জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পেয়ারার ফলনে বিলম্ব হচ্ছে। প্রতি বছর এমন সময় কয়েকশ মণ পেয়ারা বিক্রি করেন চাষীরা। কিন্তু এখন পেয়ারা পাকতেও শুরু করেনি। পেয়ারা পাকতে আরো ১৫ দিন সময় লাগবে। তিনি আরো বলেন পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ায় পাইকার ও পর্যটকদের আগমন প্রতি বছরের চেয়ে এ বছর বেশি হবে। ফলে শুধু পেয়ারাই নয় অন্য কৃষি পণ্যও ঢাকাসহ সারাদেশে অল্প সময়ে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে চাষীরা পণ্যের ন্যায্য ও কাঙ্খিত মূল্য পাবেন।