পঞ্চগড় প্রতিনিধি : পঞ্চগড়ে চা প্রক্রিয়াকরণ কারখানা উত্তরা গ্রীণ টি ইন্ডাস্ট্রিজের মালিকানা, জবর দখল ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগে পঞ্চগড় সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছে প্রতিষ্ঠানটির দুই পরিচালক।
সম্প্রতি থানায় দায়ের করা ওই অভিযোগ পত্রে বলা হয়েছে ২০১৮ সালে পঞ্চগড় সদর উপজেলার সদর ইউনিয়নের কেচরা পাড়া এলাকায় আব্দুর রাজ্জাক, তারিকুল ইসলাম ও কাজী এ এনএম আমিনুল হক মিলে উত্তরা গ্রীণ টি ইন্ডাস্ট্রিজটি প্রতিষ্ঠা করে ২০০০ সালের জুন মাসে উৎপাদনে যায়।
সকলের সম্মতিতে আমিনুল ইসলাম প্রতিষ্ঠানটির এমডি ও অপর দুইজন আব্দুর রাজ্জাক ও তারিকুল ইসলাম পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর মাসে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে এমডি আমিনুল হক মারা যায়।
এর মাঝে কোম্পানীর অগোচরে এমডি আমিনুল হককে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ৫৫ শতাংশ শেয়ার তৎকালীন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বর্তমানে দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলায় কর্মরত শিক্ষা কর্মকর্তা বোরহান উদ্দিন তার স্ত্রী, সন্তান ও ভায়রার নামে কিনে নেয়।
কোম্পানীর আইন ও বোর্ড মিটিং ছাড়াই বর্তমানে শিক্ষা কর্মকর্তা বোরহান উদ্দিন তার স্ত্রীকে চেয়ারম্যান ও ছেলেকে এমডি বানিয়ে রেজুলেশন করেন।
এদিকে গত ৪ মে পঞ্চগড় সদর উপজেলার তৎকালিন শিক্ষা কর্মকর্তা ও বর্তমানে দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বোরহান উদ্দিন ২৫-৩০ জন সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে পঞ্চগড়ে চা প্রক্রিয়াকরণ কারখানা উত্তরা গ্রীণ টি ইন্ডাস্ট্রিজ দখল, মালিক কর্মচারীদের হুমকি ও মারধর করে।
এ বিষয়েও পঞ্চগড় থানায় একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এদিকে চা কোম্পানীর প্রয়ত এমডির ছেলে কাজী মোহাইমিনুল হক ও পরিচালক (হিসাব) শাহ আলম নিলু বেশ কিছু লোকজন নিয়ে কোম্পানীতে প্রবেশ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে যায়।
বর্তমানে তারা কোম্পানী দখল করার জন্য সার্বক্ষণিক অবস্থান করছে। চা কোম্পানীর এমন অবস্থায় কর্মরত শ্রমিক কর্মচারীরাও আতংকে থাকতে চায় না।
এর আগে ২ মাসের মধ্যে ফেরত দেয়ার শর্তে প্রয়ত এমডি এএনএম আমিনুল ইসলামের কাছ থেকে কোম্পানীর ১ কোটি ১৩ লাখ টাকা নিয়ে আজও পরিশোধ করেনি শিক্ষা কর্মকর্তা বোরহান উদ্দিন। এতে চা কোম্পানীটি তারল্য সংকটে পড়েছে।
এদিকে চা কোম্পানীর উৎপাদন ও সার্বিক দায়িত্ব পালন করার জন্য শাহ আলমকে পরিচালক (অর্থ) ও প্রয়াত এমডির ছেলে মোহাইমিনুল হককে বিক্রয়ের দায়িত্ব পালন করেন।
এ সময় প্রয়াত এমডি ও তার ছেলে মিলে বড় অংকের টাকা হস্তগত করেছেন বলেও ওই অভিযোগে উল্লেখ করেছেন পরিচালক দুই জন।
অভিযোগে বলা হয়েছে প্রয়াত এমডি পরিবার ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বোরহান উদ্দিন যোগসাজসে উত্তরা গ্রীণ টি ইন্ডাস্ট্রিজের প্রায় তিন কোটি টাকা আত্মসাত করেছে।
এ বিষয়ে পঞ্চগড় থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়া হলে থানায় উভয় পক্ষকে ডাকা হলেও তারা এ বিষয়ে অসহযোগিতা করেন। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে তারা অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে উত্তরা গ্রীণ টি ইন্ডাস্ট্রিজটি দখলের পায়তারা করছেন।
এদিকে পঞ্চগড় সদর উপজেলার তৎকালিন শিক্ষা কর্মকর্তা বর্তমানে দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলায় কর্মরত মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বোরহান উদ্দীনের বিরুদ্ধে দুনীতি ও অনিয়ম নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও অনলাইলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
এ বিষয়ে পঞ্চগড় সদর উপজেলার তৎকালিন শিক্ষা কর্মকর্তা ও দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলায় বর্তমানে কর্মরত মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বোরহান উদ্দিনের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মোবাইল ফোনটি রিসিফ করে সংগে সংগে মোবাইলটি কেটে দেন। তাই তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এদিকে উত্তরা গ্রীণ টি ইন্ডাস্ট্রিজের প্রয়াত এমডির ছেলে মোহাইমিনুল হকের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, চা কোম্পানীটি আমাদের আমি লোক মারফত জানতে পারি যে কোম্পানী থেকে অবৈধভাবে চা পাতা বের করা হচ্ছে। তাই আমি কোম্পানীতে গিয়েছি। কোম্পানী জবর দখল ও টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করেন।
পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) জানান, উত্তরা গ্রীণ টি ইন্ডাস্ট্রিজের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেখছেন।
এ বিষয়ে উত্তরা গ্রীণ টি ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক ও তারিকুল ইসলাম বলেন,আমরা স্থানীয় চা চাষীদের সহযোগিতা করার জন্য চা প্রক্রিয়াকরণ কারখানা স্থাপনে আমাদের সমুদয় সম্পদকে বিনিয়োগ করেছি। এখন কারও অবৈধ ও ব্যক্তি স্বার্থের কারণে আমাদের বিনিয়োগসহ চা কোম্পানীটি বন্ধ হোক সেটা আমরা কল্পনাও করি না। তারা বিষয়টি তদন্ত করে স্থায়ী সমাধান করার জন্য প্রতিষ্ঠানটির এ দুই পরিচালক পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের সহায়তা চেয়েছেন।