ধোলাইপাড় চত্বরে ভাস্কর্য তৈরির বিপক্ষে ইসলামপন্থী দলগুলো বেশ কয়েকবার বিক্ষোভ করেছে। ছবি: ইন্টারনেট
খোলাবার্তা২৪ ডেস্ক : হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার এবং ‘আলেমদের উদ্দেশ্যে কটু মন্তব্য’ বন্ধ না হলে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে হুমকি দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম।
হেফাজতে ইসলামের সহকারী মহাসচিব মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী স্বাক্ষরিত একটি যৌথ বিবৃতিতে এই ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বিবৃতিতে ২৮জন আলেম স্বাক্ষর করেছেন।
এই বিবৃতি দেয়া হলো এমন সময় যখন ভাস্কর্য ইস্যুতে অনেকটা মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে ইসলামী দলগুলোর একটি অংশ ও সরকার।
খেলাফত মজলিশের নেতা মামুনুল হক গত ১৩ই নভেম্বর ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য তৈরির তীব্র সমালোচনা করেন। পনেরোই নভেম্বর এক সম্মেলনে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব নির্বাচিত হন মি. হক।
তিনি সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেছিলেন, ভাস্কর্য নির্মাণ পরিকল্পনা থেকে সরে না দাঁড়ালে তিনি আরেকটি শাপলা চত্বরের ঘটনা ঘটাবেন এবং ওই ভাস্কর্য ছুঁড়ে ফেলবেন। তার ওই বক্তব্য সরকারি দল আওয়ামী লীগে অস্বস্তি তৈরি করে।
২৮শে নভেম্বর চট্টগ্রামে একটি ওয়াজ মাহফিলে অংশ নিয়ে হেফাজতে ইসলামের আমীর জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, “আমি কোন পার্টির নাম বলছি না, কোন নেতার নাম বলছি না…. কেউ যদি আমার আব্বার ভাস্কর্য স্থাপন করে, সর্বপ্রথম আমি আমার আব্বার ভাস্কর্যকে ছিঁড়ে, টেনে-হিঁচড়ে ফেলে দেব”।
তবে মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে কোন দল বা ব্যক্তির নাম উল্লেখ না করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭১’ র পরাজিত শক্তির একটি অংশ মিথ্যা, বানোয়াট, মনগড়া বক্তব্য দিয়ে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করতে ইদানীং মাঠে নেমেছে। এ দেশ সকলের। এ দেশে ধর্মের নামে আমরা কোন ধরণের বিভেদ-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে দেবো না।”
২০১৩ সালে ঢাকার শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশের সময় যে সহিংসতা ঘটেছিল, সেই ঘটনার মামলাগুলো সম্প্রতি আবার সচল করা হয়েছে। মাওলানা আহমদ শফির মৃত্যুর তিনমাস পরে হত্যার অভিযোগ এনে ৩৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তার শ্যালক, যাদের মধ্যে হেফাজতের কয়েকজন নেতার নাম রয়েছে।
সেই প্রেক্ষাপটেই হেফাজতে ইসলামের পক্ষে এই বিবৃতিটি এলো। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন ২৮জন আলেম।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি এবং অদৃশ্য শক্তির এজেন্ডা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকসহ আলেম-উলামাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে।
অবিলম্বে এসব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্টকারীদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানানো হয়েছে ওই বিবৃতিতে । অন্যথায় হেফাজতে ইসলাম জেগে উঠলে ষড়যন্ত্রকারীরা পালাবার জায়গা খুঁজে পাবে না বলে বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে।
ওই বিবৃতিতে বলা হয়, আহমদ শফীর মৃত্যুর পরও তাকে পুঁজি করে একটি কুচক্রী মহল বিভ্রান্তি সৃষ্টি ও আলেম সমাজকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা করছে।
বাংলাদেশে মুজিব ভাস্কর্যের বিরোধিতাকারী ইসলামপন্থীদের সাথে সরকারের পক্ষে সম্প্রতি দু’জন মন্ত্রী আলোচনা করছেন। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী বা সমমনা বিভিন্ন সংগঠন রাজনৈতিক প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছে।
ওয়াজ বা ধর্মীয় সমাবেশ স্থগিত হওয়ায় চাপের মুখে কিছু নেতা?
আওয়ামী লীগ এবং সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মুজিব ভাস্কর্য নির্মাণ থেকে তারা সরে আসবে না।
সেজন্য ভাস্কর্য বিরোধীদের ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার এক ধরনের হুমকিও সরকারের দিক থেকে রয়েছে।
অন্যদিকে, এখন শীতে ইসলামপন্থীদের ধর্মীয় সমাবেশ বা ওয়াজ করার মৌসুম।
এরইমধ্যে ভাস্কর্য বিরোধী ইসলামপন্থী নেতাদের কয়েকজন বাধা পেয়ে এবং নিরাপত্তার আশংকা থেকে কয়েকটি জায়গায় ধর্মীয় সমাবেশ স্থগিত করেছেন।
এই বিষয়টিই তাদের বড় চাপে ফেলেছে বলে তাদেরই অনেকের সাথে কথা বলে মনে হয়েছে।