তৌহিদ চৌধুরী প্রদীপ, সুনামগঞ্জ থেকে : করোনার কারণে নিরবেই কেটে গেল সুনামগঞ্জের মরমী সাধক দেওয়ান হাছন রাজা চৌধুরীর ১৬৬তম জন্মদিন। জন্মদিন উপলক্ষে সোমবার (২১ ডিসেম্বর) প্রতি বছরই সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির যৌথ আয়োজনে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হতো। চলতি বছর করোনা মহামারির কারণে তাঁর জন্মদিনে অনুষ্ঠানিকভাবে বড় কোনো কর্মসূচি নেওয়া হয়নি। তবে সোমবার সন্ধ্যায় ভার্চুয়াল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে জেলা শিল্পকলা একাডেমি।
এ ছাড়া কবি পরিবারের পক্ষ থেকে সীমিত আকারে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। হাছন রাজা একাধারে মরমী কবি ও বাউল শিল্পী ছিলেন।
বাংলার দর্শন চেতনার সঙ্গে সংগীতের এক অসামান্য সংযোগ ঘটিয়েছে এ মরমী সাধক হাছন রাজা। ‘বাউলা কে বানাইলো রে… হাছন রাজারে বাউলা কে বানাইলো রে’, মাটিরও পিঞ্জিরার মাঝে বন্ধি হইয়ারে…, কান্দে হাছন রাজার মন ময়না…, লোকে বলে, বলে রে.. ঘর বাড়ি ভালা না আমার, ভালা কইড়া ঘড় বানাইয়া বাঁচমু কত দিন…, এমন অসংখ্য আধ্যাতিক গানের মরমী সাধক ছিলেন তিনি। অনেকেই লালন শাহের পর মরমী সাধনায় হাসন রাজার স্থান দিয়ে থাকেন।
মরমী সাধক দেওয়ান হাছন রাজার তিনি ১৮৫৪ সালের ২১ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ শহরের সুরমা নদীর তীরের তেঘরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জেলা শহরের তেঘরিয়ার সুরমা নদীর কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রয়েছে হাছন রাজার স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটি। এ বাড়িটি সুনামগঞ্জের অন্যতম দর্শনীয় স্থানের একটি। কালোত্তীর্ণ এ সাধকের ব্যবহৃত কুর্তা, খড়ম, তরবারি, পাগড়ি, ঢাল, থালা, বই ও নিজের হাতের লেখা কবিতার ও গানের পান্ডুলিপি আজও বহু দর্শনার্থীদের আবেগ আপ্লুত করে। তিনি ছিলেন তৎকালীন প্রতাপশালী জমিদার দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরীর দ্বিতীয় ছেলে। তার মায়ের নাম ছিল হুরমত জাহান চৌধুরী। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও ১৯২৫ সালে কলকাতায় এবং ১৯৩৩ সালে লন্ডনের হিবার্ট বক্তৃতায় হাছন রাজার দুটি গানের প্রশংসা করেছিলেন।
সুনামগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার আহমেদ মঞ্জুরুল হক চৌধুরী জানান, মরমি কবি হাসন রাজার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ (২১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় অনলাইন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে সুনামগঞ্জ ও বৃহত্তর সিলেটের গুণী সংগীত শিল্পীরা গান গাইবেন এবং আলোচনা করবেন।