মোঃ ফজলুর রহমান, নন্দীগ্রাম (বগুড়া) : লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে রেকর্ড পরিমাণ জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে এবার নন্দীগ্রাম উপজেলায়। হলুদ চাদরে ছেঁয়ে গেছে মাঠের পর মাঠ। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে দেখা মিলছে সরিষার। সকালে সূর্যের কিরণ যেন হেসে খেলে যায় হলুদ চাদরে।
মাঠের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় নাকে আসছে সরিষা ফুলের সুবাসিত ঘ্রাণ। উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা মিলিয়ে লক্ষ্যমাত্রা ৪০৭৫ হেক্টর থাকলেও এবার সরিষা আবাদ হয়েছে ৬৫৬৫ হেক্টর জমিতে যা গত বারের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। সরিষা চাষের মাধ্যমে দুই ফসলি জমিগুলো এবার তিন ফসলি জমিতে রুপান্তরিত হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখাযায়, সরিষা মাঠে নানা বয়সী মানুষের ভীড়। কেউ কেউ মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছেন সরিষা ফুলের দিকে আবার কেউ কেউ করছেন ফটোসেশন। উপজেলার ওমরপুর মাঠে দেখা মিলল মৌ চাষীদের। প্রায় ১৫০ টি মৌবাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলমান।
মৌ চাষী আরমানের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা গত বছরও এখানে মৌ বাক্স বসিয়ে ছিলেন। ভাল লাভ হওয়ায় এবারও এসেছেন।
কৃষক মোঃ জামিল হোসেন জানান, এবার তিনি প্রায় ছিয়াশি বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। অল্পদিনের ফসল হওয়ায় এবং বাজারে ভাল দাম থাকায় উচ্চ মুনাফার আশা করছেন।
কৃষক জামিলের মতো আরো অনেকেই সরিষা আবাদে ঝুঁকছেন। ১নং বুড়ইল ইউনিয়নের সহকারী কৃষি অফিসার মোঃ জহুরুল ইসলাম, ২নং সদরে সোহেল রানা, ৩নং ভাটরা ইউনিয়নে নাজমুল হোসেন, ৪নং থালতা মাঝগ্রামে সুজন কুমার, ও ৫নং ভাটগ্রাম ইউনিয়নের শাহাদত হোসেন, ৫টি উইনিয়নের সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা জানান, বিগত বছর গুলোর চাইতে এবছর নন্দীগ্রাম উপজেলায় রেকর্ড পরিমান সরিষা আবাদ হয়েছে।
কৃষি অফিস সর্বদা নন্দীগ্রামের কৃষকদের পাশে রয়েছে। আমরা নিয়মিত সরিষা চাষিদের জমি পরিদর্শন করছি এবং সকল ধরনের পরামর্শ প্রদান করছি। জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ আদনান বাবু জানান, নন্দীগ্রামে সরিষা আবাদে রীতিমতো বিপ্লব হয়েছে। আমন এবং বোরো ধানের মাঝে স্বল্পকালীন ফসল হিসেবে কৃষকের মাঝে সরিষা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
এ ছাড়াও উৎপাদন খরচ এবং বাজারে দাম বেশ ভাল। সরিষার জমিতে বোরো আবাদে সারের পরিমান তুলনামূলক কম লাগে। আমরা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদেরকে সরিষা চাষে নানা ধরনের পরামর্শ এবং সহযোগিতা প্রদান করছি।
উল্লেখ্য, নন্দীগ্রামে এবার বারি উদ্ভাবিত উন্নতজাত বারি সরিষা-১৪ চাষ হয়েছে সবচেয়ে বেশী। এছাড়াও বারি সরিষা-১৫,১৭, বিনা সরিষা-৪,৯ এবং টরি-৭ উল্লেখযোগ্য। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন আগামী দিনে নন্দীগ্রামের কৃষিতে এক অনন্য অবস্থান করে নিবে সরিষা।