এম. মনিরুজ্জামান, রাজবাড়ী প্রতিনিধি : যুগের পর যুগ ধরে রাজবাড়ী ও মাগুরা জেলার সীমানা বিরোধ চলে আসছে। আদিকাল থেকেই এই দুই জেলার মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে গড়াই নদী। গড়াই নদীর যৌবনের সময় কোন চর জাগতো না। তখন প্রকৃতির নিয়সেই গড়াই দুপারেই ভাঙ্গন দেখা দিত।

তখন কোন সীমানা বিরোধও ছিল না। ফারাক্কার বিরুপ প্রভাবে ওই প্রমত্তা গড়াই গত ১৫/২০ বছর ধরে শৃুষ্ক মওসুমে চরপরে ধু-ধু বালুর চর পরে। পানি না থাকায় মাছ নেই। কিন্তু চর পরায় বালুর রাজ্য সৃষ্টি হয়েছে। বালু দাম মাছের চেয়ে কম না।

আর ওই বিরোধের সুযোগ নিচ্ছে রাজবাড়ী ও মাগুরার কতিপয় বালু খেকোরা। তারা জেলার কালুখালী উপজেলার শাওরাইল ইউনিয়নের জামালপুরের গড়াই নদী থেকে অবৈধ ও অপরিকল্পিত ভাবে বালু উত্তোলন করছে। আর এ কারণে বেড়েছে গড়াই নদীর ভাঙ্গন।

সেই সাথে বালু বাহি ট্রাক চলাচল করায় যাতায়াতের রাস্তা ভেঙ্গে বড় বড় গর্ত সৃষ্টির পাশাপাশি হচ্ছে তা চলাচলের অনুপোযোগি। স্থানীয়রা এবং পাশ্ববর্তী পাতুরিয়ার বৈধ বালু মহল ইজারা গ্রহণকারীরা জেলা প্রশাসনের কাছে এর প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেও পাচ্ছেন না কোন সুফল, থামছে না অবৈধ বালু উত্তোলন।

সরজমিনে দেখাযায়, রাজবাড়ী ও মাগুরার কতিপয় বালু খেকোরা শাওরাইল ইউনিয়নের জামালপুরের গড়াই নদী থেকে ড্রেজার ও বেকু দিয়ে বালু উত্তোলন করছে। তারা উত্তোলনকৃত বালু ট্রাক যোগে বিক্রিও করছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন, সাইদুর রহমানসহ অন্যান্যরা জানিয়েছেন, অবৈধ ও অপরিকল্পিত ভাবে এখান থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বালু উত্তোলনের ফলে বিগত বছরও এখনে নদী ভাঙ্গন ছিলো তীব্র। এবারও বালু উত্তোলন করায় ভাঙ্গণের মাত্রা বৃদ্ধি পাবার শঙ্কা রয়েছে।

বালু উত্তোলন বন্ধ করা না হলে এলাকার রাস্তা ঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়ী বিলিন হয়ে যাবে। জরুরী ভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হবে।

পাশ্ববর্তী পাতুরিয়া বালু মহলের ইজারাদার মেসার্স আহাদ ট্রেডার্সের মালিক রাকিবুল ইসলাম জানিয়েছেন, তাদের বালু মহল থেকে শাওরাইল ইউনিয়নের জামালপুরের দুরত্ব ৫ কিলো মিটার। সরকারী ভাবে রাজবাড়ী ও মাগুরার কোন বালুমহল নেই সেখানে।

অথচ দিনের পর দিন সেখান থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে নদী ভাঙ্গণে ক্ষতিগ্রস্থ হবে স্থানীয়রা। যে কারণে তিনি গত ২৫ মে প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছেন। তবে এখনো কোন প্রতিকার তারা পাননি।

শাওরাইল ইউনিয়নের ভুমি সহকারী কর্মকর্তা ইউনুস মুন্সি জানিয়েছেন, মাগুরার সাথে সীমানা বিরোধ রয়েছে। তারপরও গড়াই নদীর রাজবাড়ীর অংশে থাকা মাগুরার বদনপুর মৌজার এক লাখ ঘন ফুট বালু নিলামে বিক্রি করেছে মাগুরা জেলা প্রশাসন।

গত ৯ মে মাগুরার মোল্লাপাড়ার মেসার্স হৃদিতা কনষ্ট্রাকশনকে বালু উত্তোলনের কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। তবে মেসার্স হৃদিতা কনষ্ট্রাকশন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে তাদের ইচ্ছেমত রাজবাড়ীর সীমানা থেকে বালু উত্তোলন করছে। তিনি একাধিকবার সেখানে গিয়ে তাদের নিষেধও করেছেন। যদিও রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তারা মঙ্গলবার দুপুর থেকে সীমানা নির্ধারণ প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।