# ২শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে এই স্থলবন্দর নির্মাণের অনুমোদন দেয় সরকার
# বন্দর চালু হলে বাংলাদেশের সাথে ত্রিপুরাসহ সাত রাজ্যের সঙ্গে সম্প্রসাতির হবে বাণিজ্য

এম মাঈন উদ্দিন, রামগড় থেকে ফিরে : সীমান্তে ভ‚মি জটিলতা ও নকশার অনুমোদন না মেলায় রামগড়ে থেমে আছে স্থল বন্দরের অবকাঠামোগত নির্মাণ কাজ। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এখনও পুরোদমে বন্দরের অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারেনি বন্দর কর্তৃপক্ষ ।

জানা গেছে, ২০১৭ সালে প্রায় ২শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে এই স্থলবন্দর নির্মাণের অনুমোদন দেয় সরকার। ৫বছর পর গত বছরের নভেম্বরে এসে ডিসেম্বর থেকে স্থলবন্দরের অবকাঠামোগত কাজ পুরোদমে নির্মাণের ঘোষনা দিয়েছিলেন বাংলাদেশ স্থল বন্দর কতৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলমগীর।

আর্ন্তজাতিক মানের একটি পেসেঞ্জার টার্মিনল ভবন নির্মাণ করা হবে। এ টার্মিনাল ভবনের ভিতরেই বিজিবি চেক পোষ্ট, কাস্টমস, ইমিগ্রেশন ইত্যাদি অফিস থাকবে। ওয়ান স্টপ সার্ভিস সিষ্টেমে একই ভবনে সব ধরণের চেকিং সম্পন্ন করে বহি:গমন এবং প্রবেশ করবেন পেসেঞ্জার।

এ ছাড়া মালামাল সংরক্ষণের জন্য আধুনিক ওয়ার হাউজ, ক্লোড স্টোরেজ, লোড-আন লোডের ইয়ার্ড, ট্রান্সশিপমেন্ট শেড, স্কেনিং ও প্যাকেজিংয়ের ব্যবস্থা ও সিসিটিভি থাকবে।পরবর্তীতে ভারতের ২০০টি এবং বাংলাদেশি ১০০টি ট্রাকের পার্কিং ইয়ার্ড নির্মাণ করা হবে।

রামগড় ৪৩ বিজিবির জোন কমান্ডার (সিও) ল্যাফট্যানেন্ট কর্নেল মো. আনোয়ারুল মাজহার বলেন, ‘ম‚লত সীমান্ত জটিলতায় বন্দরের অবকাঠামোগত নির্মাণ কাজ কিছুটা থমকে আছে।আন্তর্জাতিক নিয়মানুযায়ী দেড়শ গজের মাঝে স্থাপনা তৈরী করতে হলে দুইদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অনুমোদনের প্রয়োজন হয়।

তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) দিয়ে ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) কাছ থেকে নকশার অনুমোদন নেয়নি। ফলে স্থলবন্দর ঘোষণার পাঁচ বছর পরেও শুরু হয়নি এর নির্মাণকাজ।তবে তিনি জানিয়েছেন নকশা অনুমোদন হলে কাজ শুরু হতে দেরি হবে না।’

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, খাগড়াছড়ির রামগড় ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাব্রুম সীমান্তের ফেনী নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু। ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণসহ নানা লক্ষ্যকে সামনে রেখে মৈত্রী সেতুর বাংলাদেশ অংশে প্রায় ২শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করার কথা রামগড় স্থলবন্দর। সরকার এর অনুমোদন দিয়েছে ২০১৭ সালে। এরপর স্থলবন্দরের জন্য প্রায় ৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৬ একর জায়গা অধিগ্রহণ করেছে। কিন্তুু এখনও কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ বন্দর নির্মাণের কাজ।

রামগড় পৌরসভার মেয়র রফিকুল আলম কামাল বলেন, নির্ধারিত সময়ের পরেও বন্দরের অবকাঠামোগত নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি। ২০২৪ সালের জুন মাসের মধ্যে এই বন্দরের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

করোনা মহামারি, ভূমি জটিলতা ও দুই দেশের সীমান্তবর্তী জায়গায় স্থলবন্দরের নির্মাণকাজ হওয়াতে বন্দরের নকশা অনুমোদনের জন্য দুই দেশের মধ্যে দফায় দফায় বিজিবি, বিএসএফ পর্যায়ের পতাকা বৈঠক করতে হচ্ছে। ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এখনও পর্যন্ত বন্দরের অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারেনি বন্দর কর্তৃপক্ষ ।

রামগড় উপজেলা চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কুমার কার্বারী বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিপুরা রাজ্যসহ মেঘালয়, আসাম, মণিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং অরুণাচলের সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণ হবে। পরিবর্তন হতে পারে আর্থ-সামাজিক অবস্থার।’

তিনি আশাবাদ প্রকাশ করে বলেন, ভূমি জটিলতা মিটলে খুব দ্রুত বন্দরের অবকাঠামোগত নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

বাংলাদেশ রিজিওনাল কানেক্টিভিটি প্রকল্প-১ এর প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম সচিব) সারোয়ার আলম জানিয়েছেন, প্রায় ২শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে রামগড় স্থলবন্দর নির্মাণ করা হবে। ইতোমধ্যে মনিকো লিমিটেড নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রাথমিক ভাবে কাজ শুরু করলেও কিছু জটিলতার কারণে পুরোদমে কাজ শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না।

বন্দরটিতে চার তলা টার্মিনাল ও পোর্ট ভবন নিমার্ণসহ নানা অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে অবকাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। মোট দুই পর্যায়ে শেষ হবে বন্দরের কাজ। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে ১০ একর ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৬ একর ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ করেছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের ভ‚মি উন্নয়নসহ সব অবকাঠামো নির্মাণের কাজ করা হবে।

নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী গত ১৪ ফেব্রুয়ারি রামগড় স্থলবন্দরের জন্য অধিগ্রহণকৃত এলাকা, বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু পরিদর্শন করেন।

এ সময় তিনি জানান, রামগড় স্থলবন্দর নির্মাণের লক্ষ্যে অবকাঠমো নির্মাণের জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হয়েছে। শিগগিরই এর অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

তিনি বলেন, রামগড় স্থলবন্দরের নিকট বাংলাদেশ-ভারতের মানুষের স্বপ্ন ‘মৈত্রী সেতু’ দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেছেন। রামগড় স্থলবন্দর শুধু ব্যবসা-বাণিজ্য নয়, দু’দেশের সাংস্কৃতিক বন্ধনকে দৃঢ় করবে।