ডোমার (নীলফামারী) প্রতিনিধি : কিছুদিন আগেও মাঠে গরু ঘাস খেতো। মাঠের এক কোনে বসে কয়েকজন বালক মোবাইল ফোন দেখতো। আবার কয়েকজন মিলে এক যায়গায় বসে চৌপাতি, চকচ্চাল খেলতো। এ চিত্র ডোমার উপজেলা পরিষদের পাশেই শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম এবং ডোমার বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের।

পাশাপাশি দুটি খেলার মাঠ থাকলেও বিকেলে মাঠে কেউ খেলতে আসতো না। মাত্র দু মাসের ব্যবধানে তা আমুল পরিবর্তন হয়েছে। এখন বিকেল হলেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বাই সাইকেল নিয়ে শত শত বালক বালিকা, কিশোর-কিশোরী ফুটবল খেলতে ভীড় জমায় মাঠে। ছোট ছোট কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে অনুশীলন করছে তারা। তাদের জন্য মাঠে ৮টি ফুটবল দেয়া হয়েছে।

অনুশীলন করতে আসা অনেক শিশু, কিশোরীর অভিভাবকরাও এসেছেন। তারাও নিজ নিজ সন্তানদের উৎসাহ দিচ্ছেন। ঝিমিয়ে পড়া ফুটবল খেলা উজ্জীবিত করতে এবং কিশোরদের মাদকমুক্ত রাখতে এরকম নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন নীলফামারীর ডোমার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ।

চেয়ারম্যানের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে ফুটবল খেলায় নতুন করে আশার আলো দেখছেন উপজেলার সাবেক ফুটবলাররা। সেই সাথে প্রশংসায় ভাসছেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ।

শত শত বালক বালিকা, কিশোর-কিশোরী ফুটবল মাঠে খেলতে আসার এই উৎসাহ ও উদ্দীপনা এক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে সাব নারী ফুটবল গেমসে বাংলাদেশের নারী ফুটবল টিমের চ্যাম্পিয়ন হওয়া।

ডোমার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ নিজ উদ্যোগে শহরের কয়েকজন সাবেক ফুটবলার ডোমার মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ শাহিনুল ইসলাম বাবু, উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সফিয়ার রহমান রতন, রেফারি অসিত কুমার সাহা, রেফারি সমিতির সভাপতি মাহিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হুমায়ুন কবির, রেফারি কবির হোসেন ও আবু বক্কর ছিদ্দিককে সাথে নিয়ে গত ১০ আগষ্ট ডোমার বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রতিদিন বিকেলে নাম রেজিষ্ট্রেশনের মাধ্যমে ফুটবল খেলার অনুশীলন চর্চা শুরু করেন। তিনি নিজেও প্রতিদিন বিকেলে মাঠে আসেন এবং তদারকি করেন। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে প্রতিদিনই বাড়তে থাকে ক্ষুদে বালক বালিকা খেলোয়াড়ের সংখ্যা। বর্তমানে এ সংখ্যা ৩শতাধিক। এর মধ্যে গ্রুপ- এ ২১ বছরের উর্ধে ২৫জন, গ্রুপ-বি অনূর্ধ্ব-২১, ২৫জন, গ্রুপ-সি অনূর্ধ্ব – ১৭, ৪০জন এবং গ্রুপ-ডি অনুর্ধ-১৩, ১৪০জন। ভলিবলে ৪০জন।

এদের মধ্যে চেয়ারম্যান তার ব্যক্তিগত অর্থায়নে দেড় শতাধিক কিশোর ও কিশোরী খেলোয়াড়কে প্যান্ট, জার্সি, বুট, হুস এবং খেলার আনুষাঙ্গিক প্রদান করেন।

এ বিষয়ে চেয়ারম্যানকে উৎসাহ দেয়া ডোমার মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ শাহিনুল ইসলাম বাবু জানান, ক্রীড়া এবং সাংস্কৃতিতে ডোমারের অনেক সুনাম রয়েছে। এ যাবত ৩০০জন নারী পুরুষ খেলোয়াড়ের নাম তালিকাভূক্ত হয়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন বালক বালিকা মাঠে এসে নাম রেজিষ্ট্রেশন করছে। এদের মধ্যে ১৫০জনকে ড্রেস দেয়া হয়েছে। বাকিদের পর্যায়ক্রমে দেয়া হবে। তারা সবাই প্রতিদিন মাঠে এসে অনুশীলন করছে। ফুটবলের পাশাপাশি তৈরী করা হয়েছে একটি ভলিবল মাঠ। সেখানেও অনুশীলন চলছে।

ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সফিয়ার রহমান রতন জানান, এখন মাঠে আসলে মনটা ভরে যায়। আশা করছি এর মাধ্যমে ফুটবলে ডোমারের হারানো অতিত গৌরব ফিরে আসবে। আমরা সাবেক খেলোয়াড়রা বর্তমানে বাচ্ছাদের ট্রেইনার হিসেবে কাজ করছি।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ জানান, শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য খেলাধুলার কোন বিকল্প নাই। খেলাধুলায় বিশেষ করে ফুটবলে এক সময় ডোমারের বেশ সুনাম ছিল। পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে মাঝখানে গত প্রায় দেড় যুগ ধরে মাঠে খেলাধুলার চর্চা হয় না। পরবর্তী প্রজন্মকে যেকোনো বদনেশা থেকে দূরে রাখতে এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে আমি আমার দায়বদ্ধতা থেকে এই উদ্যোগ নেই। এখন মাঠে জায়গা দিতে পারি না। অল্পদিনের মধ্যে গোটা জেলাকে নিয়ে একটি প্রীতি ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হবে। আগামীতে ক্রিকেট, ব্যাটমিন্টন, হাডুডুসহ বিভিন্ন খেলাধুলার অনুশীলন শুরু করা হবে। ভবিষ্যত প্রজন্মের স্বার্থে এ ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে। এজন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।