সাইফুল ইসলাম, শেরপুর সীমান্ত অঞ্চল প্রতিনিধি : মাত্র চার কাঠা জমির উপর শিম চাষ করে ভাগ্য বদলে গেল এক কৃষকের। বলছি ঝিনাইগাতী উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়ন সন্ধাকুড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদিরের কথা। এক সময় ছিলেন একজন গার্মেন্টস কর্মী। প্রায় ১৪ বছর ওই চাকুরী করেও বেশী একটা উন্নতি হয়নি তার।

এদিকে পরিবারের ভবিষ্যত চিন্তাভাবনা যেন পিছু ছাড়েনি তার। এরই মধ্য বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পরে করোনা ভাইরাস। বন্ধ হয়ে যায় গার্মেন্টস। একমাত্র আয়ের উৎস বন্ধ হওয়ায় সংসারের খরচ যোগানে অনেক হিমসিম খেতে হয় তাকে। এরপর তিনি স্ব-পরিবার নিয়ে চলে আসেন সন্ধ্যাকুড়া নিজ এলাকায় তার পৈতৃক ভিটায়। নেই নিজস্ব কৃষি আবাদের জমি। তবুও ভাবতে থাকেন নতুন কর্মের মাধ্যমে আয় রোজগারের। তার পিতার সাথে আলোচনা করে কৃষি ফসল আবাদের জন্য অল্পকিছু জমি নিয়ে বেগুনসহ বিভিন্ন সবজির চাষ করেছিলেন পাশাপাশি একটা ব্যবসাও গড়ে তোলেন তিনি। হটাৎ দ্বিতীয় ধাপের পাহাড়ি ঢলে সবজি চাষে ব্যাপকভাবে ক্ষয়ক্ষতি হয়। বার বার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েও কৃষি ফসল উৎপাদনে হাল ছাড়েননি তিনি।

একদিন ফেসবুকে কেরালা জাতের শিম চাষের পদ্ধতি ও বীজ বিক্রির বিজ্ঞাপন দেখতে পান তিনি এতেই যেন বদলে গেল তার ভাগ্য। আগাম কেরালা জাতের শিম বীজ রোপনের বিজ্ঞাপন দেখে শিম আবাদের দিকে ইচ্ছে জাগে তার। নতুন কর্মসংস্থান ও সন্তানদের ভবিষ্যত উন্নতির চিন্তা করে নিয়ে ১ কেজি পরিমাণ বীজ ক্রয় করেন ৪ হাজার টাকায়। তার পৈতৃক আবাদি জমিতে আধা কেজী পরিমাণ শিমের বীজ রোপন করেন। বাকি শিম বীজ দেন একি এলাকার আরেক কৃষককে।

কৃষক আব্দুল কাদির জমিতে বীজ রোপনের পর থেকে তার বাগানের নিয়মিত পরিচর্যা, কীটনাশক ও সারসহ অন্যান্য সকল খরচা মিলিয়ে প্রায় ১৫-১৬ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছিল তার। নতুন এই শিম বীজ এলাকায় প্রথম বারের মতো রোপন করায় কেউ উৎসাহ দেয়নি তাকে। বরং সবগুলি গাছ কর্তনের পরামর্শ দেন অনেকে।

কারও কথায় খেয়াল না রেখে তার শিম বাগান পরিচর্যার পাশাপাশি ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে থাকেন কৃষক আব্দুল কাদির।

তিনি আরও জানান, বীজ রোপনের ৪৫ দিন পর প্রতিটি গাছে ফুল ফুটে। সবাইকে তাক লাগিয়ে বীজ রোপনের আড়াই মাস পর থেকে শুরু হয় বিপুল পরিমাণ শিম বিক্রি। বর্তমানে সপ্তাহে দুই দিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারদের কাছে বাজারের ন্যায্য মূল্য শিম বিক্রি করে যাচ্ছেন কৃষক আব্দুল কাদির। এ যাবৎ প্রায় দুই লাখ টাকার শিম বিক্রি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী দুই মাসের মধ্য আরও দেড় থেকে দুই লাখ টাকার শিম বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে নিজের পাশাপাশি তৈরি হয়েছে আরও বেশ কিছু পরিবারের কর্মসংস্থান। আগামী বছর আরও বড় পরিসরে শিম চাষ করা হবে বলেও জানান তিনি।

কৃষক আব্দুল কাদির বলেন, কোন কর্মকে ছোট করে ভাবা ঠিক নয়। বিভিন্ন চাকুরীর পেছনে অথবা বেকার না ঘুরে অনাবাদি জমিতে কৃষি শাক সবজি উৎপাদন করেও লাভবান হওয়ার সম্ভব।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ গোলাম কিবরিয়াসহ কৃষক ও কৃষাণীরা বলেন, এখন তার সবজি বাগান এক নজর দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসছেন অনেকেই। ফলন ভাল হওয়ায় আগামীতে এ জাতের শিম তারাও চাষ করবেন এ আশা ব্যক্ত করেন তারা।

উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ হুমায়ুন দিলদার এ প্রতিনিধিকে বলেন, কৃষক আব্দুল কাদির একজন কৃষি উদ্যোক্তা। কৃষিতে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে আসতে হয়েছে তার। শিম লাভজনক ফসল। চার কাঠা জমিতে আগাম শিম চাষ করে তিনি এখন স্বাবলম্বী। ইন্ডিয়ার কেরালা জাতের শিম চাষ করে ইতিমধ্যে প্রায় দেড় লাখ টাকার শিম বিক্রি করেছেন তিনি। উচ্চ মূল্যের ফসল চাষ করলে কৃষক লাভবানের পাশাপাশি নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরী হবে বলেও জানান তিনি।