কাজী খলিলুর রহমান, ঝালকাঠি প্রতিনিধি : ঝালকাঠির বিভিন্ন জায়গায় নারিকেল গাছে ব্যপক আকারে হোয়াইট ফ্লাই (সাদা মাছি) এর আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এই পোকার আক্রমণে নারিকেল গাছের পাতায় ও ডাবে কালো রঙয়ের ছোপ বিশিষ্ট ছত্রাক বাসা বাধে। যা ডাব ও নারিকেল নষ্ট করে দেয় এবং নারিকেলের আকারও ছোট হয়। সম্পূর্ণ নতুন ধরনের এই পোকার আক্রমণ কিভাবে মোকাবেলা করা হবে, তা বুঝে উঠতে পারছেন না চাষিরা। তবে কৃষি বিভাগ বলছে নিয়ম মেনে পরিচর্যা করলে এই পোকার আক্রমনের পরেও উৎপাদন ঠিক রাখা যাবে।

ঝালকাঠির জেলার বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে সদর উপজেলার অধিকাংশ নারিকেল গাছেই হোয়াইট ফ্লাই বা সাদা মাছির আক্রমনে নারিকেল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যেসব চাষিরা বাণিজ্যিকভাবে নারিকেল উৎপাদন করছেন, তারা রয়েছেন লোকসানের মুখে। অন্যদিকে উৎপাদন কমে যাওয়ায় খুচরা বাজারে ডাব ও নারিকেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

চাষিরা জানান, পোকার আক্রমনের পরে একটি গাছে এখন ডাব হচ্ছে মাত্র ৪/৫টা করে। সরেজমিন ঝালকাঠির নেহালপুর ও কৃত্তিপাশা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, এখানে রাস্তার দু ধারে লাগানো সারি সারি নারিকেল গাছগুলোর পাতায় কালো আবরন পরেছে। গাছে ঝুলে থাকা ডাবগুলোতে পরেছে কালো ছোপ ছোপ দাগ। ডাবের আকারও হচ্ছে ছোট। এসব এলাকার চাষিরা বুঝে উঠতে পারছেননা কি করবেন।

এদিকে মাঠ পর্যায় কৃসি বিভাগেরও কোন পরামর্শ বা সহযোহিতা পাচ্ছেননা তারা। বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইণ্টিটিউটের বরাতে ঝালকাঠি কৃষি বিভাগ জানায়, ইকোলজিক্যাল ভারসাম্য ভেঙে যাওয়ায় পোকা মাকড় আবাসস্থল হারাচ্ছে। এ কারনে নারিকেল গাছে এ ধরনের নতুন পোকার আক্রমন হয়েছে।

কৃষি বিভাগ আরো জানায়, এই হোয়াইট প্লাই বা সাদা মাছি নারিকেল গাছের পাতা ও কচি ডাবের নরম অংশ ক্ষত করে চুষে চুষে খায়। এবং নিজেদের রক্ষায় পাতায় ও ডাবে তুলার মত আবারন তৈরি করে। হোয়াইট প্লাই এর আক্রমনের পরেই নারিকেল গাছে ছত্রাক বাসা বাধে। বর্তমানে হোয়াইট ফ্লাই ছাড়াও ছোট মাকড়ের আক্রমনেও নারিকেল গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মাকড় অত্যন্ত ক্ষুদ্রাকৃতির হওয়ায় এটি দেখা যায়না।

হোয়াইট ফ্লাই সম্পর্কে জানা যায়, হোয়াইট ফ্লাই বা সাদা মাছির আদি নিবাস মধ্য আমেরিকা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে এটি আমাদের দেশে বিস্তার লাভ করেছে। তবে ঝালকাঠির নারিকেল চাষিদের কাছে এ বিষয়গুলো দূবোর্ধ্য। তারা দেখতে পাচ্ছে অদৃশ্য কারনে তাদের গাছের ডাব ও নারিকেলগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে তারা অবিলম্বে সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহয়তার দাবি জানান। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে সাদা মাছির আক্রমনে ঝালকাঠির সদর উপজেলার নারিকেল উৎপাদন কম করে হলেও ২৫ পারসেন্ট কমে গিয়েছে।

সদর উপজেলায় ১৬০ হেক্টর জমিতে ১২ লাখ ৮০ হাজারটি নারিকেল উৎপাদনের কথা থাকলেও পোকার আক্রমনে উৎপাদন হয়েছে ৯ লাখ ৬০ হাজার। তবে কৃষকরা বলছেন, উৎপাদন আরো কম হয়েছে।

ঝালকাঠি সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানালেন, সাদা মাছির আক্রমন প্রতিরোধে প্রথমে পাতা ও ডাবের কালো স্তরটি সাবান পানির স্প্রে দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এরপরে ছত্রাকনাশক কিটণাশক স্প্রে করতে হবে। এ ছাড়া মাকড়ের আক্রমণ প্রতিরোধে গাছে মাকড়নাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেন এ কর্মকর্তা।