খোলাবার্তা২৪ ডেস্ক : নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচরে পুরুষ কৃষকের পাশাপাশি নারী কৃষাণীদের অবদান কোন অংশেই কম না। এই প্রান্তরে এমন অনেকেই রয়েছেন যাদের অবদানে সুবর্ণচর দেশে কৃষি বিপ্লবের একটা কেন্দ্র বিন্দু হতে চলেছে। তেমনি একজন কৃষিতে সাফল্য পাওয়া বিধবা নুর জাহান।
সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় সুবর্ণচরের পুর্ব চরবাটা ইউনিয়নের চর মজিদ গ্রামের নারী উদ্যোক্তা, কৃষাণী নুর জাহানের সাথে। নুর জাহান তার কৃষি বিপ্লবী হয়ে উঠার গল্প তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, গত চার বছর আগে রোগাক্রান্ত হয়ে স্বামী সেলিম উদ্দিনের মৃত্যু হয়। জেলে স্বামীর সংসারে দু’সন্তান রেখে গেলেও চলার মতো কোন সামর্থ রেখে যাননি সেলিম। নানা প্রতিকূলতায় দিনাতিপাত করে নুর জাহান। এ সময় উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ইকবাল হোসেনের সাথে দেখা হয় নুর জাহানের।
সমন্বিত বালাইনাশক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি অনুসরণ করে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে আগাম জাতের শাক সবজি আবাদ শুরু করেন। বড় ছেলে নুর ইসলাম ও ছোট ছেলে সাইফুল ইসলাম এর সহযোগিতায় রাত দিন পরিশ্রম করে এখন স্বাবলম্বী হয়েছেন নুর জাহান।
আগাম জাতের শিম, বরবটি, লাউ, কুমড়া, পেঁপে, ঢেড়শ, বেগুন, করলা, চিচিঙ্গা, কচু, মুলা, লালশাক, পুইশাক, টমেটো, গাজরসহ প্রায় সব প্রকার আগাম শাক সবজির চাষ করেন নুর জাহান। আগাম জাতের শাক সবজির ব্যাপক চাহিদা আর ভালো দাম পাওয়ায় এমন উদ্যোগ তার। প্রতিটি ফসলে দিগুন থেকে পাঁচ গুণ পর্যন্ত লাভ গুণছেন নুর জাহান। নুর জাহানকে অনুসরণ করে আগামীতে এই ধরনের কৃষি কাজের স্বপ্ন দেখছেন অনেকে।
তিনি বলেন, প্রথমে ১ একর জমিতে চাষাবাদ করলেও এখন ৫ একর জমিতে চাষাবাদ তার। একসময়ের কুঁড়ে ঘর থেকে আজ নিজের কঠোর পরিশ্রমে ১৫ লক্ষাধিক টাকায় করেছেন পাকা বাড়ি, কিনেছেন ৫০ শতক জমি আর দু’ছেলেকে ধুম-ধামে বিয়ে দিয়েছেন নিজের উপার্জিত অর্থ থেকে।
চার বছরের ব্যবধানে এমন সাফল্যের কারণ সম্পর্কে বলেন, পরিকল্পিত চাষাবাদ আর কঠোর পরিশ্রমই তাকে সফল হতে সাহায্য করেছে। নুর জাহানের পরামর্শ নিতে এখন আশপাশ ছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই আসেন।
নুর জাহানের বড় ছেলে নুর ইসলাম জানান, বাবার মৃত্যুর পর মা তাদের বাবার ভূমিকায় ছিলেন, মায়ের পরামর্শে কৃষির প্রতি আকর্ষণ। প্রথমে সফলতা না পেলেও পরে কঠোর পরিশ্রমে সাফল্য ধরা দেয়। পাকা বাড়ি, জমি ক্রয়, বিয়ে সাদী ছাড়াও তাদের উপর্জিত অর্থে কিনেছেন ডজন খানেক গরু আর মাছের পুকুর রয়েছে ৩টি।
এ বিষয়ে সুবর্ণচর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশীদ জানান, নুর জাহান নিরক্ষর হলেও কৃষি বিপ্লবে অসামান্য অবদান রেখেছেন। নুর জাহানের দেখাদেখি এখন অনেক নারী কৃষিতে অবদান রাখছেন। নুর জাহানকে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে বিভিন্ন সময় বিনামূল্যে বীজ, সার ও কিটনাশক প্রদান করা হয়। এক সময়ের দিশেহারা নুর জাহান আমাদের পরামর্শে এখন স্বাবলম্বী।