ছবি: ইন্টারনেট
খোলাবার্তা২৪ ডেস্ক : জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে এক রুগীর মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎকের অবহেলার অভিযোগ এনে রুগীর স্বজনেরা ডাক্তারের ওপর হামলা ও হাসপাতালে ভাংচুর করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এ সময় রুগীর স্বজনদের সাথে ডাক্তার এবং ইন্টার্নি ডাক্তারদের হাতাহাতি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় বিক্ষুব্ধ লোকজন হাসপাতাল ভাংচুর করে।
শুক্রবার জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল ক্যাম্পাসে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে হাসপাতাল ক্যাম্পাস রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
সংর্ঘষে ডা. চিরঞ্জিৎ, ডা. হাবিবুল্লাহ, কর্মচারী কিরন, রুগীর স্বজন শহিদুল্লাহ (৪০), জিহাদ (২০) ও সাইদুরসহ ১০ জন আহত হয়েছেন।
এদিকে চিকিৎসক আহতের খবরে ইন্টার্নি ডাক্তারদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ইন্টার্নি ডাক্তাররা রুগীর স্বজনদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। দু’পক্ষের দফায় দফায় সংঘর্ষে হাসপাতাল ক্যাম্পাস রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশ লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
নিহত রুগীর ভাতিজা সাইদুর জানান, শহরের ইকবালপুর জামে মসজিদে আমার চাচি করিমন নেছা (৫৫) জুম্মা’র নামাজ পড়তে যান। মসজিদের নির্মাণাধীন দ্বিতীয় তলায় দেয়াল ভেবে কাপড়ের পর্দায় হেলান দিতে গিয়ে নিচে পড়ে গুরুতর আহত হন। তখন তার স্বজন ও স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক রুগীর চিকিৎসা না দিয়ে রুগীকে জরুরি বিভাগে ফেলে রাখে। সময় ক্ষেপণ করে কর্তব্যরত চিকিৎসক চিরঞ্জিত ডক্টরস রুম থেকে বেড়িয়ে এসে রুগী দেখে মৃত ঘোষণা করেন।
রুগীর স্বজনদের অভিযোগ, সময় মতো রুগী দেখা হলে এবং অক্সিজেন দিলে রুগী হয়তো মারা যেত না।
রুগীর ভাতিজা সাইদুর বলেন, আমি হাসপাতাল থেকে ফেরার পথে ইন্টার্নি ডাক্তাররা আমার ওপর হামলা করে আমাকে মারধর ও আমার মোটরসাইকেল ভাংচুর করেছে।
হাসপাতালের প্রত্যক্ষদর্শিরা জানায়, রুগীর মৃত্যুতে ডাক্তারের অবহেলাকে অভিযোগ করে জরুরি বিভাগে রুগীর স্বজন ও ডাক্তার কর্মচারীদের মধ্যে তর্কের এক পর্যায়ে হাসপাতাল ভাংচুর হাতাহাতি মারপিটের ঘটনা ঘটে।
এ সময় ডা. চিরঞ্জিত, ইন্টার্নি ডাক্তার হাবিবুল্লাহ, কর্মচারী কিরন, রুগীর স্বজন শহিদুল্লাহ ও জিহাদ আহত হন। এ ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে রুগীর স্বজন ও ইন্টার্নি ডাক্তাররা মুখোমুখি অবস্থান নেন। দুইপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
লাশের পেছনে যাওয়া রুগীর স্বজন সাইদুরের ওপর উত্তেজিত ইন্টার্নি ডাক্তাররা হামলা চালায়। তাক বেদড়ক পিটিয়ে তার মোটরসাইকেল ভাংচুর করা হয়। এ সময় পুলিশ লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে এক চিকিৎসকসহ ৭ ইন্টার্নি ডাক্তারকে সদর থানায় নিয়ে যায়। পরে অবশ্য এক ঘণ্টার মধ্যে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে
এ বিষয়ে আহত কর্তব্যরত ডাক্তার চিরঞ্জিত বলেন, রুগীর মৃত্যুতে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ সঠিক নয়। আমি যথা সময়ে রুগীকে পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে মৃত ঘোষণা করি। কিছু বুঝে উঠার আগেই রুগীর স্বজনরা আমার ওপর হামলা চালিয়ে ইমারজেন্সি বিভাগের আসবাবপত্র ভাংচুর করেছে।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ফেরদৌস হাসান বলেন, ডাক্তারের বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলা সঠিক নয়। দু’পক্ষের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝিতে অনাকাংঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে। আমরা সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।
জামালপুর সদর থানার ওসি রেজাউল করিম খান বলেন, জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে একজন রুগীর মৃত্যুর ঘটনায় একটি অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। পরিস্থিতি শান্ত করতে পুলিশ ঘটনাস্থল একজন ডাক্তারসহ ৭ ইন্টার্নি ডাক্তারকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছিল। কিন্তু কারো কোনো অভিযোগ না থাকায় আটককৃতদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এবং বিষয়টি স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে সমঝোতা করা হয়েছে।